সত্তর এর দশক এর শেষ দিকে, আর আশির দশক এর শূ্রুতে সিলেট এবং জাতীয় রাজনীতিতে এক বিশাল আলোকোজ্জল ভাবে সর্ব মহলে যিনি আলোড়ন তুলেছিলেন,তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় সবার প্রিয় জনাব আব্দুন নূর স্যার ।সকলের প্রিয় অতি নির্লোভ,নিরহঙ্কার,প্রচার বিমুখ,সিলেটের এই অতি প্রিয় মানু্ষটি,সকলের অগোচরে নীরবে চলে গেছেন,আমাদের কে ছেড়ে ।দুটি পাতা আর একটি কূড়ি’র এই সিলেট জাতিকে যুগে-যুগে উপহার দিয়েছে অসংখ্য গুনী-জ্ঞ্যানীজন,শ্রী চৈতন্য,দেওয়ান আজরফ,হাসন রাজা,মরমী কবি আশহর আলী চোধুরী,কবি দিল ওয়ার,সহ অসংখ্য গুনীজন,এ রকম এক গুনী ব্যাক্তিত্ত মরহুম আব্দুন নুর,সিলেটের সব ক’টা আন্দোলন আর অধিকার আদায়ে যিনি ছিলেন সরব।
এক সময় সিলেট এইডেড হাই স্কুলের শিক্ষক দেশ-জাতি ও জনগনের দাবি আর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যোগ দিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এ,জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায় আর জনতার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রথম সারির সৈনিক।মেহনতি জনতার অধিকার আন্দোলন,আর সিলেটের ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে তাকে অনেক ত্যাগ আর নীপিড়ন,এমনকি কারাবরন ও করতে হয়েছিল,কিন্ত তিনি কখনো আপোষ করেননি।এ জন্য তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে,চলার পথে যেমন অগনিত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন,তেমনি সত্য ও ন্যায় এবং জনতার অধিকার আদায় করতে গিয়ে অনেক বন্ধুকে হারিয়েছেন,কেউবা তাকে ছেড়ে চলে গেছেন,গালি দিয়েছেন কমরেড এর পাগলামি বলে,কিন্ত আব্দুন নূর আপোষ করেননি।শত লোভ-লালসার কাছে কখনো হার মানেননি সিলেটের এই বিপ্লবী প্রান-পূরুষ।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্দে মরহুম আব্দুন নূর এর রয়েছে গৌরবোজ্জল ভূমিকা,মহান মুক্তিযুদ্দে দেশমার্তৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে আব্দুন নূর ঝাপিয়ে পরেন মুক্তিযুদ্দে,যুদ্ধ পরবর্তিতে দেশ গঠণ আর যুব সমাজ কে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে মুক্তিযুদ্দের আরো এক নায়ক তখনকার ছাত্র-যুব সমাজের অবিসংবাদিত নেতা আ স ম আব্দুর রব আর মেজর আব্দুল জলিলের নেতৃত্তে যোগ দেন জাসদ রাজনীতিতে,আর এ ভাবেই আব্দুন নুর স্যার হয়ে উঠেন জাসদের অন্যতম জাতীয় নেতা।এক সময় তিনি ছিলেন জাসদ জাতীয় কমিটির সহ-সভাপতি,সিলেট জেলা জাসদ এর সভাপতি থাকাকালিন সময় তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদদ্ধিতা করেন দুইবার,টাকা আর পেশি শক্তির জোর না থাকায় দুইবারই তিনি পরাজয় বরন করেন।জাসদের যখন যৌবন কাল,তখনও তিনি এই দলের সাথে,আবার জাসদের যখন চরম ক্রান্তিকাল,তখনও তিনি এই দলের সাথে থেকে শক্ত হাতে দলের হাল ধরে রেখেছিলেন।
সিলেটের শিক্ষা বিস্তার,আইন-শৃংখলার উন্নয়ন,বিদ্যুত,সিলেট ইউনিভার্সিটি আনয়ন,সরকারি হাইস্কুলের জায়গা রক্ষা,মধুবন আন্দোলন,প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষা,এক কথায় সিলেটের সব ক’টা আন্দোলনে দেখেছি তাকে সবার আগে-ভাগে,বয়সের ভারে তাকে কখনো ক্লান্ত মনে হয়নি।সব সময় ভাবতেন কিভাবে গরীব,অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন,মানুষের কল্যাণ- এই ছিলো তার রাজনীতি,নিজের আখের গোছানোর কথা কখনো তিনি চিন্তাও করতে পারেননি, যা আজকের যুগে বড় বিরল এক দৃষ্টান্ত।
আশির দশকে জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে তার সাথে আমার পরিচয়,প্রথম আলাপেই তিনি আমাকে আপন করে নিলেন,আমার বক্তৃতা উনার খুব পছন্দনিয় ছিলো, সেমিনার,জনসভা,সম্মেলন হলে তিনি আমাকে সাথে নিতেন,আমার বক্তৃতা খুব মনযোগ দিয়ে শুনতেন,পরে এই নিয়ে অনেক আলোচনা করতেন,কোথায় ভূল,কোথায় অতি আবেগ,যুক্তি,তিনি দেখিয়ে দিতেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন আমার ডাকসু ইলেকশনে অংশগ্রহনে খুব খুশী হয়েছিলেন,আ স ম আব্দুর রব ভাই, এবং তখনকার ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদককে এজন্য ধন্যবাদ দিয়েছিলেন।
জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে লন্ডন পারি দেওয়ার পর থেকে উনার সাথে যোগাযোগ কমে যায়,আমার বিদেশ পারি দেওয়াতে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন,আমাকে অনেক তিরষ্কারও করেছিলেন,সহকর্মি অনেকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশও করেছিলেন,শুনেছি।
লন্ডনের এক হিম শীতল সকালে ঘুম থেকে উঠি শুনি সিলেটের এই অতি প্রিয় মানুষ,আপাদ-মস্তক রাজনীতিবিদ,সমাজ দরদি এই মানুষটি আর নেই,সকলের অগোচরে নীরবে শেষ নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে গেছেন চির তরে,যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসেনা । আমার খুব কষ্ট হয়,জ়ীবন সায়াহ্নে উনাকে শেষ দেখা টুকূও দেখতে পারিনি,আজীবন তিনি মানুষকে ভালোবেসে গেছেন,মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন,আমার সকল শ্রদ্ধা আর ভালবাসা আজ তাই নিবেদন করছি আব্দুন নূর স্যার এক করকমলে,কমরেড,আপনাকে লাল সালাম,আপনি বেচে থাকবেন এ দেশের অগনিত মেহনতি জনতার মনিকোঠায়,বাংলাদেশের লাল-সবুঝ পতাকায়,পত-পত করে আপনি উড়তে থাকবেন,যতদিন এদেশ রবে,এদেশের মেহনতি-শ্রমিক-পেশাজীবি জনগন রবে,ততোদিন আপনার কির্তি রবে বহমান,আপনার সংগ্রাম দীর্ঘজীবি হোক কমরেড নূর।
Published in Daily Uttorpurbo,Pakkik Alor MichilDhaka.