প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতি চর্চাঃপ্রেক্ষিত নর্থ-ইষ্ট অব ইংল্যান্ড-

প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতি চর্চাঃপ্রেক্ষিত নর্থ-ইষ্ট অব ইংল্যান্ড-

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

Salim932@googlemail.com.

 

বাংলা,বাঙ্গালী,বাংলাদেশ-একসূত্রে গাথা হাজার বৎসরের পুরনো বাংলার এই সংস্কৃতি নৃতাত্বিকদিক থেকে অনেক গবেষণার দাবি রাখে।বাংলার কৃষি,বাংলার বকুল ফুল,বৈশাখী মেলা,পৌষ,মাঘ,ফাগুনের বিচিত্র খেলা প্রকৃতির নানা রূপ,মাধুরী,রং,কালবৈশাখী,আম-কাঠাল-ঝামের উৎসব,চিতল পিঠা,বাপা পিঠা,নকুল পিঠা,খুলসী পিঠা,কতোনা বাহারি মনের বাহারি পিঠা, ভাটিয়ালী, জারি, আধ্যাতিক,সারি গাণ,গ্রাম্য মেলা,যাত্রা,নাটক,মঞ্চ নাটক-এই সব মিলিয়েইতো বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব,আর এইসব উৎসব ঘিরে নানা রূপের নানা সংস্কৃতি মিলে মিশে একাকার হয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে করেছে আরো বিশাল,মুখরিত।বৈশাখে নবান্নের উৎসব, লাঠি খেলা,ময়ূর খেলা,ষাড়ের লড়াই,গীতি নাট্য,ঘুরি উৎসব,নৌকা বাইচ,কতোনা শ্রুতি মধুর এই রকম অসংখ্য স্মৃতির বিশাল ভান্ডার নিয়েইতো আমাদের প্রতিটি বাঙ্গালীর হ্রদয়,মন,মনন পরিশীলিত ও লালিত হয়ে আছে।

১)বাংলাদেশের বিচিত্র সুন্দরময় গৌরবোজ্জবল এই সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বয়ে চলেছেন শ্বাসত বাঙ্গালীর চিরন্তন এক একজন এম্বাসাডারবৃন্দ-তথা আমার এই বাংলা ভাষা-বাসি জনগণ।বাঙ্গালী যেখানে যে অবস্থানেই আছেন,সেখান থেকেই নিজস্ব উদ্দ্যোগে,সম্পূর্ণ নিজ প্রচেষ্টা এবং অনেক সাধনার বিনিময়ে নিজস্ব এই উজ্জল সংস্কৃতিকে বাচিয়ে রেখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার নিরন্তর প্রয়াস করে যাচ্ছেন।

সেই বৃটিশ-পাকিস্তানী উপনিবেশ সময়কালিন সময় থেকে,কিংবাতো তারও অনেক আগে থেকে কলম্বাসের আমেরিকা ডিস্কোভারির মতোই অনেক ত্যাগ,তিতিক্ষা আর ঝক্কি-ঝামেলা পোহিয়ে এক বিশাল স্বপ্ন-সাধনা চোখে,বুকে,মুখে নিয়ে ব্রিটিশ সেই সব লর্ড আর ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীওয়ালাদের বদান্যতায় বাঙ্গালী প্রথম কবে কখন ইংল্যান্ডে আসে গোড়া-পত্তন শুরু করেছিলেন,তা নিয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস প্রণেতাদের নানা মত।তবে সকলেই একমত যে অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে বাঙ্গালী ইংল্যান্ডের মাটিতে আজকের এই অবস্থানে এসে পৌছেছেন,যেখানে রয়েছে আমাদের অনেক প্রবীন কমিউনিটি ব্যাক্তিত্তদের সীমাহীন অবদান।জানা-অজানা সেই সব বীর বাঙ্গালী কমিউনিটি ব্যক্তিত্তদের এই সুবাদে হ্রদয়ের সবটুকু অঘ্র-শ্রদ্দ্বাঞ্জলী নিবেদন করে কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি।

প্রখ্যাত কবি,সাংবাদিক,প্রাবন্ধিক,সোস্যাল ব্যাক্তিত্ত্ব শামীম আজাদ সান্ডারল্যান্ড সিটি লাইব্রেরী ও আর্টস সেন্টার এর যৌথ সহযোগীতায় তার ভয়েজ প্রকল্পে সান্ডারল্যান্ড সহ নর্থইষ্টে বাঙ্গালীদের গোড়াপত্তনের সাথে প্রবাসের কর্মময় জীবনের নানা সুখ-দুঃখময় স্মৃতির সাথে নিজস্ব সংস্কৃতি ও নাড়ির টান- এই দুই এর সমন্বয় ও সাযুজ্য খোজার ঐকান্তিক ও প্রানান্তকর চেষ্টা করেছেন,যা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে করেছে আরো বেগময় ও গতিশীল।

আমাদের কবিগাণ,জারিগাণ,ভাটিয়ালী,করিম শাহ,দূরবীন শাহ,শাহ আব্দুল করিম,মরমী কবি আসহর আলী চৌধুরীর আধ্যাত্নিক গাণ আমাদের বাংলা সংস্কৃতির ভান্ডার করেছে আরো সমৃদ্দ্ব।আমাদের এই সব লোকজ সংস্কৃতি বঙ্গ ভান্ডার ছাড়িয়ে আজ বিশ্ব সভায় সমাদৃত।

জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত,জীবন-জীবিকার টানা-পোড়নে এই সব অনাবাসী বাংলাদেশীরা যখন প্রবাসের নানান দেশ ও নানান প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন,তখন সঙ্গে করে যত্ন ও পরম মমতায়, কখনো নিজের অজান্তে নিজের এই সব সংস্কৃতিকে সাথে নিয়ে ছড়িয়ে পড়েন,সময়,সুযোগ,কিংবা কোন উৎসব,পার্বনে নিজের এই সংস্কৃতিকে লালন ও পালনের অক্লান্ত চেষ্টা করে চলেছেন।বাঙ্গালীর এই চেষ্টা,এই সাধনা সেই আদি কাল থেকে প্রবাসে চলে আসছে,কখনো ঘরোয়া ভাবে,কখনো আনুষ্টানিক ভাবে,আর আজকে তা অনেকটা প্রাতিষ্টানিকভাবে চর্চা ও পালনের নিয়ত এক চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।এখনকার ইংল্যান্ডে বাংলা মিডিয়া-প্রিন্টিং এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বেশ শক্তিশালী একটা অবস্থানে চলে এসেছে,যারা আমাদের এই বাঙ্গালী সংস্কৃতি চর্চা ও লালন-পালনে এক বিরাট ভূমিকা পালন করে চলেছে।

এপার কিংবা ওপার বাংলার প্রাণ যদি বলা হয়ে থাকে ঢাকা কিংবা সিলেট কে, তবে তৃতীয় বাংলা হিসেবে লন্ডনের ব্রিকলেন যেমন এক বিশেষ মর্যাদার দাবি রাখে,তেমনি তৃতীয় বাংলার আধার হিসেবে বাংলা সংস্কৃতিকে প্রাচ্য ও প্রতীচ্য এবং পাশাত্য সংস্কৃতির সাথে সাযুজ্য রেখে নতুন প্রজন্মের কাছে সমাদৃত এবং উপস্থাপিত করার ক্ষেত্রে নর্থইষ্ট অব ইংল্যান্ড এক বিশেষ ভূমিকার দাবি রাখে।গোটা নর্থইষ্টের কেন্দ্রে হিসেবে যেমন রয়েছে নিউক্যাসল সিটি,তেমনি রয়েছে তাকে কেন্দ্র করে সান্ডারল্যান্ড সিটি,সাউথশীল্ডস,গেইটস হেড,ওয়ালসেন্ড, হার্টলিপুল,ডার্লিংটন,ডারহাম প্রভৃতি নানান সৌন্দর্যের লীলাসমৃদ্দ্ব ছোট-বড় অসংখ্য সিটি,শহর ও শহরতলী,যেখানে রয়েছে বাংলাদেশীদের এক বিরাট বাসস্থান ও ব্যাবসাপ্রতিষ্টান,সামাজিক,রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও সংঘসমূহ,যে গুলিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশীদের মাঝে গড়ে উঠেছে নানা বৈচিত্র্যময় এক সেতু বন্ধন,যা তাদেরকে যেমন করেছে অনেক পরিশীলিত,তেমনি বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে করেছে আরো গতিময়।বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব এখানে অত্যন্ত জাক-ঝমক পূর্ণভাবে পালিত হয়ে থাকে,দেশের নানা ঘটনাবলী এখানকার বাংলাদেশীদের মধ্যে আলোড়ন তুলে থাকে।ইংল্যান্ড এর মূলধারার সংস্কৃতির সাথে পরিচিতি হওয়ার পরেও এবং মূলধারার রাজনীতি ও সমাজব্যাবস্থার মিশে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্তেও এখানকার বাংলাদেশী পরিবার এবং সমাজ নিজেদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অতি যত্ন এবং আদরের সাথে লালন করে চলেছেন।এই যে নাড়ির টান,এই যে নিজস্ব স্বকীয়তার প্রতি মমত্ব সেটা কেবল যে এই অমিয় সূধা পান করেছে, সেই কেবল অনুধাবন করতে পারবে।ব্যাতিক্রম যে নেই, তা বলবোনা,তবে তা কেবল হাতে গোনা মাত্র।

পরিবার এবং সমাজব্যাবস্থায় বাংলা ভাষা চালু এবং নিজ সন্তান-সন্তুতিদেরকে বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া,পাশা-পাশি ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ চালু রাখা,বাংলা পালা গাণ,ভাটিয়ালী গাণের চর্চা,পত্রিকা প্রকাশনীর মাধ্যমে লেখক-পাঠক তৈরী এবং সচেতনতা সৃষ্টি,সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড একইসাথে পরিচালনা করা,দেশের গরীব-অসহায়,দরিদ্র জনগোষ্টী এবং শিক্ষা প্রতিষ্টান কে সহায়তা প্রদান এবং সেই লক্ষ্যে চ্যারিটেবল কার্যক্রম পরিচালনা করা – সব ক্ষেত্রেই এই নর্থ করে চলেছে এক ব্যাতিক্রম ধর্মী কার্যক্রম,পাশাপাশি মেইন ষ্ট্রিম সমাজ ব্যাবস্থা ও এর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শরিক ও সেই সাথে তৃতীয় বাংলার সাথে সেতু বন্ধন রেখে সেই সব কেন্দ্র ভিত্তিক সকল সামাজিক,রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নর্থইষ্ট এর বাংলাদেশীরা রেখে চলেছেন এক বিশাল ভূমিকা।

০২) বাংলা সংস্কৃতিকে সকল প্রবাসী বাংলাদেশী তথা নর্থইষ্টের প্রতিটি ঘরে-ঘরে প্রতি মাসের তর-তাজা খবরা-খবর সহ নর্থইষ্টের বাংলাদেশীকমিউনিটির ভিতর ও বাইরের সংবাদ সম্পূর্ণ ফ্রি ভাবে পৌছে দেওয়ার মহতি উদ্দেশ্যে নদীর ঐ পারের ছোট্র শহর ওয়ালসেন্ড এর বাসিন্দা ও কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ব এন,এম,ঈসার তত্বাবধানে ও সম্পাদনায় অধুনা প্রবাস নামে নিয়মিত সংবাদ পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে এক নবদিগন্তের সূচনা করেছে।আশা করা যায় সকলে মিলে এই সুন্দর প্রকাশনাটিকে আরো প্রাণবন্ত ও বেগবান করে তুলবেন।

 

 ক) বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন সিটি এবং শহরে অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টার গুলো মুখ্যত বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে।এক্ষেত্রে গেইটস হেড মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সেন্টার সবিশেষ ভূমিকা নিজ কমিউনিটির মধ্যে রেখে চলেছে।বিগত একুশে ফেব্রুয়ারী এবং বিজয় দিবসে তাদের কর্মসূচীগুলো বিশেষ উদ্দীপনা মূলক ছিলো,তাদের ছেলে-মেয়েদের নাটক,কবিতা,গাণ,কৌতুক এর কথা উল্লেখ না করলেই নয়।বর্তমানে গেইটসহেড কমিউনিটিতে এই চর্চা অনেকটা স্তিমিত হতে চলেছে,যা বেশ ভাবনার বিষয়।এব্যাপারে স্থানীয় কমিউনিটি নের্তৃবৃন্দ সবিশেষ কার্যপন্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।

খ)সান্ডারল্যান্ড বাংলাদেশী কমিউনিটি সেন্টার অল্প বিস্তর বাংলা সংস্কৃতি চর্চার কাজ করে চলেছে,যা নিতান্তই স্বল্প পরিসরে।বহু আগে থেকে চালু করা বাংলা স্কুলটি দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিকল্পণার অভাবে পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।কেননা,শুরুতে যখন বাংলা স্কুল কতিপয় তরুণ এবং কমিউনিটির বিশেষ কতিপয় শিক্ষানুরাগী দ্বারা চালু হয় তখন আমাদের কমিউনিটি এবং ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এক দারুণ সাড়া ও উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়েছিলো।কিন্তু কালক্রমে কায়েমী স্বার্থবাদীদের কোপানলে পড়ে স্কুলটি তার গতি হারাতে বসে।আমার বিশ্বাস,কমিউনিটির শিক্ষানুরাগী এবং দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ দ্বারা সুষ্টু কর্মপরিকল্পণার দ্বারা যদি স্কুলটিকে পরিচালিত করা যায় তবে আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদেরকে মেইনষ্ট্রিম শিক্ষার সাথে বাংলাদেশের সমাজব্যাবস্থা বিশেষকরে বাংলা ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে অত্র এলাকায় এক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে,পাশা-পাশি আমাদের সংস্কৃতির উজ্জলতাও ব্রিটিশ সমাজে তুলে ধরার পাশাপাশি নতুনদের জন্য কর্মসংস্থানের ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করা যাবে।সেন্টার পরিচালনা ম্যানেজম্যান্ট কমিটি সকল দ্বিধা-দ্দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে এই বিষয়টি কি ভেবে দেখবেন?

এক সময় সান্ডারল্যান্ড ইয়থ অর্গেনাইজেশন নতুন প্রজন্মের সাথে অগ্রজদের মেলবন্ধনে রীতিমতো আলোড়ন তুলে চলেছিলো,নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে এই সংঘটনটি সর্বত্র ঝড় তুলে চলেছিলো,কতিপয় উচ্ছল তরুণের অদম্য প্রাণের উচ্ছাসের ঐ সংঘটনটিকে নিয়ে তখনকার চ্যারিটি কমিশন,সিটি কাউন্সিল এবং সূদূঢ় টাওয়ার হ্যামলেটস এর শিক্ষাবিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।কিন্তু কালক্রমে সেই সংঘটনটি অন্ধকারের চোরা গলিতে হারিয়ে যায়।এক সময় সান্ডারল্যান্ড ইয়থ ভয়েস ও বেশ জোরালো কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলো।

গ)অযুত অমিয় ক্ষেত্র এবং বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নিউক্যাসল কিমিউনিটি সেন্টারটি তার কাংক্ষিত ভূমিকা পালন করতে কেন যে বারে বার ব্যার্থতার পরিচয় দিচ্ছে,আশা করি কমিউনিটির নানা পেশার দক্ষতায় সমৃদ্ধ্ব নতুন নির্বাচিত নের্তৃবৃন্দ এই বিষয়টি ভেবে দেখে বাংলা সংস্কৃতি কমিউনিটির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে চালু করে যুগান্তকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

ব্যাতিক্রম ইইউ অর্গেনাইজেশন,নানা প্রতিকূলতা স্বত্তেও তারা বেশ কয়েকটি নাটক উপস্থাপণা করে ব্রিটেন এবং বাংলাদেশে বেশ আলোড়ন তুলেছে।তাদের বেশ কিছু নাটক চ্যানেল আই সহ নানা চ্যানেল এ প্রদর্শিত হয়েছে।এ ক্ষেত্রে ইইউ এর সকল কর্মকর্তাবৃন্দ বেশ ধন্যবাদের দাবিদার।

ঘ)ছোট করে হলেও হার্টলিপুল কমিউনিটি এবং ডার্লিংটন কমিউনিটি এ ক্ষেত্রে নানান সভা,সমিতি,অনুষ্টানে শরিক এবং সহযোগীতা করে বিশেষ এক ভুমিকা রেখে চলেছেন।কিন্ত ছোট কমিউনিটি হলেও তারা যেখানে থাক,তা বিকশিত যে হবেই,তার সুন্দর উদাহরণ আমাদের হার্টলিপুলের তরুণ গীতিকার সৈয়দ দুলাল আহমদ এবং সান্ডারল্যান্ডে অনুষ্টিত চ্যানেল এস এর তারকা মাহফুজ আহমদ,এখন কেবল দরকার একটা সুন্দর প্ল্যাটফর্ম বা ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া।

ঙ)নর্থইষ্টের কারি সাম্রাজ্য বলে খ্যাত সাউথশীল্ডস এর ওসেনরোড– এ যেন আমাদের অপরাজেয় বাংলার এক নতুন দোয়ার,যেখান থেকে কারি ইন্ডাষ্ট্রিকে সাফল্যমন্ডিত করে আমাদের লোকজ বাংলার সংস্কৃতি লালন ও পালনে এবং বাংলাদেশের চলমান সকল ঘটনাবলীর সাথে ওতপ্রোত যুগসূত্র স্থাপণ করে সকল রাজনৈতিক,সামাজিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থলে পর্যবসিত হতে চলেছে।সাউথশীল্ডস এর বাংলাদেশী কমিউনিটিও তাদের সকল উদার মন-প্রাণ ঢেলে বাংলাদেশের সকল প্রোগ্রামের সাথে একাত্নতা পোষণ এবং সকলের জন্য আতিথেয়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ সুনামের অগ্রভাগে অবস্থান করে চলেছেন।আপনাঘরের মতো সোস্যালধর্মী প্রোগ্রামমূলক সংঘঠন এই সাউথশীল্ডস থেকেই জন্ম নিয়েছে।এই রকম সেবামূলক সংঘটন আরো যত গড়ে উঠবে,কমিউনিটির জন্য আরো বেশী সেবা ও সুযোগ-সুবিধার নানা ক্ষেত্রও তৈরি হবে।

প্রবাসের জীবন ব্যাবস্থা বড় কর্মচঞ্চল এবং সকলেই নানা দায়-দায়িত্তে সারাক্ষণ ব্যাতিব্যাস্ত থাকতে হয়।এমতাবস্থা বিরাজমান সমস্যাসংকুল জীবন প্রবাহের সাথে পরিবার, কাজ,ও অন্যান্য অনেক দায়িত্ব পালন করে সারারাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরে রাতের বেলা,তাও মধ্যরাতের পর বিশেষ ব্যাবস্থাধীনে নানা সভা-সমাবেশ,গাণ,ও উৎসব-পার্বন উদযাপনে এখানকার তথা নর্থইষ্টের বাংলাদেশী জনগণ যে বিরল এক দৃষ্টান্ত সকলের কাছে স্থাপণ করে চলেছেন,তা আমাদের প্রবাসী ছাড়াও দেশ থেকে আগত জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষানুরাগী সূধীসমাজ উচ্ছসিত প্রশংসা করে থাকেন,সন্দেহ নেই।এক্ষেত্রে সবচাইতে সুন্দর এবং যুৎসই প্রশংসা করছেন,আমাদের আজকের অর্থমন্ত্রী,পাশ্চাত্য অর্থনীতির স্যমূয়্যেল এ,এম,এ,মুহিত,সাউথশীল্ডস থেকে সংবর্ধিত হয়ে নিউইয়র্কে ফিরে সেখানকার এক জনসভায় আমাদের বিরল এই দৃষ্টান্তের ভূয়সী প্রশংসা করে একে প্রবাসে বাংলার নয়া রেনেসা হিসেবে উল্লেখ করে যথার্থই গৌরবান্বিত করেছেন।

প্রস্তাবনাঃ-

নতুনের সাথে পুরনোদের সুন্দর সমন্বয়,বাস্তবতার সাথে চিরন্তনের সহাবস্তান হেতু এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নর্থইষ্টের প্রবাসী বাংলাদেশীবৃন্দ উপযুক্ত বিজনেস প্ল্যান করে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা ভাষা চর্চা একাডেমী প্রতিষ্টা করতে পারেন।যেখান থেকে শুধুমাত্র বাংলা ভাষা চর্চা ও শেখানো হবেনা, বরং আমাদের নানান সংস্কৃতির পূর্ণাঙ্গ লালন,পালন,পরিশীলিন করা হবে,ফলশ্রুতিতে আমাদের আগামী প্রজন্ম ও তরুণদের মাঝে বাংলা ভাষার সুন্দর চর্চা,বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রতি মমত্ত্ব ও ভালোবাসা যেমন গড়ে উঠবে,একই সাথে পরিবার, পরিজন এবং সমাজের মধ্যে বিরাজমান আশান্তি,উচ্ছৃংখলা,ড্রাগস এর মরণ ছোবল থেকে রক্ষা,একই সাথে নতুন নতুন কাজের নানা ক্ষেত্রও আবিস্কৃত হবে,তাতে সকলই উপকৃত হবেন।কেননা স্থান,কাল,পাত্র ভেদে যদিও সংস্কৃতির সঠিকতার অবয়ব হের-ফের হয়ে নতুন রূপ পরিগ্রহ লাভ করে থাকে তথাপি কেবলমাত্র নিজস্ব সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য চর্চাই পারে তরুণ ও যুব সমাজকে ভয়াবহ মরণ ছোবল ও অসামাজিক কাজ থেকে বিরত রেখে ক্রিয়েটিভ সৃজনশীল কর্মে উজ্জীবিত করে রাখতে।

মনে রাখা দরকার,হাজার বৎসরের পুরনো আমাদের এই বাংলা ভাষা, বিশ্বের যে কোন ভাষার চাইতে রয়েছে এক সমৃদ্দ্ব ইতিহাস,যা সারা বিশ্বে খুবই বিরল।অতি সম্প্রতি জাতি সংঘ তাদের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাকেও দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।বর্তমানে ব্রিটেনে বিভিন্ন স্কুলে জিসিএসই লেভেলে বাংলাকে মেইনষ্ট্রিম শিক্ষার সাথে শেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

শুধুমাত্র ইংরেজী শিখে কোনভাবেই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করা যায়না,আর যদিও যায়, তা কখনোই স্থায়ীত্ত্ব লাভ করেনা।তার অর্থ ইংরেজী শেখার বিরুধী নই।ইংরেজী শেখার সাথে সাথে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চার ও শেখার ব্যাবস্থা থাকা দরকার।নতুবা তা হবে কেবল মাত্র ঐ তলাবিহিন ঝুড়ির মতো,শেকড়বিহিন গাছের মতো,যা অল্প বাতাসে ন্যূয়ে পড়বে।কারণ নিজস্ব শেকড় বা রুটস যদি না থেকে তবে সেই বিকাশ বিকশিত হলেও স্থায়ীত্ব লাভ করবেনা,যার অজশ্র প্রমাণ চোখের সামনেই দৃশ্যমান।নিজস্ব রোটস ছাড়া সাময়িকভাবে লাভবান হওয়া যায়,কিন্তু ওটা কেবল ঐ পানিতে ভাসমান জারমুনির ফেনার মতো বুদ-বুদ হয়েই পরক্ষণে আবার পানিতে মিশে যাওয়ার মতোই।নিজ সংস্কৃতি,নিজ ভাষাকে ভুলে গিয়ে পৃথিবীতে কোন কালে কোন জাতিই উন্নতি ও স্থায়ীত্ত্ব লাভ করতে পারেনাই।অথচ নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক ধ্যান-ধারণায় যে বা যারা এগিয়ে গেছেন,তারা যেমন সমাজ,পরিবার ও রাষ্ট্রকে করেছেন উপকৃত,একইভাবে হাজার বৎসর পরেও মানুষ তাদেরকে শ্রদ্দ্বার সাথে স্মরণ করে চলেছে।কারণ যে বা যারা তার প্রকৃত রোটসকে ভুলে যায়,ইতিহাসে মুছে যায় তাদের নাম।রোটসকে ভুলে যাওয়াতো একধরনের পিতৃপরিচয়হীন অবস্থা।আমরা কখনো এই অবস্থা চাইনা।

বিকল্প ভাবনাঃ-

ইইউ অর্গেনাইজেশন নাটক,কবিতা, গাণ,ভাষা চর্চার পাশাপাশি নর্থইষ্ট থেকে নিয়মিত সুস্থ্যধারার বাংলা ম্যাগাজিন প্রকাশের যে মহতি উদ্দ্যোগ নিয়েছে,আশা করি সকলের সম্মিলিত সহযোগীতা পেয়ে তা আরো উত্তরোত্তর সমৃদ্দ্বি লাভ করবে।আমি বিশ্বাস করি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নর্থইষ্টের সকল প্রবাসী বাংলাদেশী পরিবার এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এই সুন্দর উদ্দ্যোগটিকে তাদের সকলধরনের সহযোগীতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।একটি মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হিসেবে সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে এখানে একটি মাতৃভাষা একাডেমি প্রতিষ্টাকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নিয়ে এগিয়ে যাবে,যাতে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার সাথে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক সামাজিক ও চ্যারিটেবল কার্যক্রম পরিচালিত হবে,ফলশ্রুতিতে তরুণ ও আগামী প্রজন্মের মাধ্যে বাংলা ও বাংলাভাষার প্রতি দরদ ও মমত্ব তৈরি হবে,নতুন জব মার্কেট প্রতিষ্টিত হবে,সুস্থ্য বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে এবং সেই সাথে আমাদের সংস্কৃতির বিশালতা ও সৌন্দর্যতাকে ব্রিটিশ মূলধারার সাথে সাযুজ্য রেখে নয়া এক মৈত্রীর ক্ষেত্র আবিস্কৃত হবে,যার প্রভাব সুদূঢ়প্রসারী অবধারিত।

জয় হউক চিরন্তন বাঙ্গালীর,জয় হউক বিশ্ব মানবতার,জয় হউক ইইউ আর্গেনাইজেশনের।

Salim932@googlemail.com

01st May 2012,Sunderland.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *