এমন কিছু ঘটনা, এমন কিছু স্মৃতি আছে- যা পৃথিবীর সকল দুঃখের সীমাকেও অতিক্রম করে থাকে। যে দুঃখের সাথে কোন কিছুর তুলনাই চলেনা। আবার এমন এক্সিডেন্ট আছে, যে এক্সিডেন্ট এর গল্পও আপনার কল্পনাকেও হার মানায়- এক্সিডেন্ট এক্সিডেন্টই। কিন্তু কিছু এক্সিডেন্ট আছে- যার কোন ব্যাখ্যা নেই। নটিংহাম করোনার কোর্ট এমনি এক এক্সিডেন্টের ইনকুয়েস্ট শুনতে গিয়ে করোনার নিজেও হয়ে পড়েন আবেগে আপ্লুত, ভাষা হারিয়ে ফেলেন, বিচারের নির্দেশনা এক্সিডেন্ট যিনি করেছেন তার প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শিত শুধু নয়, করোনার বলেন, কোনভাবেই আপনাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা এ করোনারের নেই। আসলে তাই-
আপন সন্তান, মাত্র দু বছর বয়সের ফুটফুটে মেয়ে। মা ও অন্যান্য ভাই বোনদের সাথে অপেক্ষমান- বাবা গাড়িতে তাদের পিকআপ করবেন। গাড়ি একেবারে কাছেও। দরকার শুধু সুবিধাজনক অবস্থানে গাড়িকে পার্ক করিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের গাড়িতে উঠাবেন। বাবা তাই গাড়ি সবে মাত্র স্টার্ট দিয়ে ইঞ্চি পরিমাণ নড়িয়েছেন- অথচ গাড়ির সামনেই তার কলিজার টুকরো দুই বছরের মেয়ে দন্ডায়মান- ব্লাইন্ড স্পটে দাড়ানো- স্বাভাবিকভাবে ব্লাইন্ড স্পট থেকে বুঝার সাধ্য ছিলো না দুবছরের মেয়েটি গাড়ির সামনে অথচ ইঞ্চি পরিমাণ গাড়ি মুভ করার কারণে মেয়েটির উপর গাড়ি উঠে যায়- হায় হায়…
নটিংহাম করোনার কোর্টে তখন পিন পতন নীরবতা। হতভাগ্য বাবা সেলগি থমাস তখন অঝোর ধারায় কেধে চলছিলেন। জবানবন্দি দিচ্ছিলেন, বুঝতেই পারেননি নিজে ড্রাইভ করে আপন সন্তানের উপর গাড়ি উঠিয়ে দিবেন।
থমাস বলে চলেন, এভেলিন সেলগি– অত্যন্ত হাসি খুশী উচ্ছ্বল মেয়েটি। পাশে দাঁড়ানো এভিলিনের মায়ের চিৎকারে তিনি হতবিহবল। গাড়িতে থেকে বেরিয়ে দেখেন এভলিন নড়াচড়া করছেন, অচেতন হয়ে ছয় ফিট দূরে পড়ে আছে।
তিনি চিৎকার করে উঠেন- একি করেছেন। আশে পাশের লোকজন তখন ছুটে আসে।তারা সবাই তখন দ্রুত নটিংহাম কুইন্স মেডিক্যাল সেন্টারে এভিলিনকে নিয়ে যান কিন্তু ব্রেন ইঞ্জুরির কারণে এভিলিন হাসপাতালেই মারা যায়।
থমাস করোনারকে বলেন, তার কাশকি নিশান তার মেয়ের উপর তিনি উঠিয়ে দিয়েছেন, বুঝতেই পারেননি গাড়ির সামনে কেউ আছে, দেখার কোন উপায় ছিলোনা। সেদিন ছিলো নটিংহাম ক্যাপিটাল এফএম এরিনাতে বাইবেল কনভেনশন। পুরো পরিবার সেখানে যাচ্ছিলো। কারণ এভিলিনের মা সেই কনভেনশনে বক্তৃতা দেয়ার কথা।
থমাস বলেন, তিনি কেবলমাত্র হাফ এন্ড এ হাফ এমন অবস্থায় গাড়ি মুভ করেছিলেন সেদিন।
করোনারকে ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর পিসি মার্ক গ্যাসকুইন জানান, থমাস সেলগি যে অবস্থানে ড্রাইভ করে গাড়ি মুভ করছিলেন, যেখানে এভিলিন দাঁড়ানো ছিলো- সমস্ত ফুটেজ পরীক্ষা করে তারা পেয়েছেন, এভিলিন ব্লাইন্ড স্পটে ছিলো। এ অবস্থায় সম্ভব ছিলোনা- কি আছে ঐ জায়গায়, যা থমাসকে দোষী সাব্যস্থ করা যায়না।
করোনার ম্যারিয়ান ক্যাসি থমাসের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, এরকম এক্সিডেন্টে থমাসের কোন হাত ছিলোনা, এধরনের এক্সিডেন্ট সম্পর্কে ধারণাই করা অসাধ্য। থমাসের কষ্ট এবং এই এক্সিডেন্টের স্মৃতি অনেক অনেক দিন পর্যন্ত পীড়া দিবে, কষ্ট দিবে- তবে এ ধরনের এক্সিডেন্টে থমাসের কিছুই করার ছিলোনা যাতে এক্সিডেন্ট এভয়েড করা যায়।
(নারী/ফিচার/নিউজ/সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ /অক্টোবর/২০১৫/লন্ডন)