সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-
সৃস্টির আদি কাল থেকেই নারী পুরুষের এক ধরনের বৈষম্য চলে আসছে, যদিও আধুনিক সভ্যতায় নারী- পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হয়, অধিকারের, আইনের কথা বলা হয়। বিশ্বের নানা দেশে দেশে এখনো নারীদের সমানাধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়। উন্নত বিশ্বের বহু ক্ষেত্রে নারী- পুরুষের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা সত্যেও এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সেই বৈষম্য বড় বেশী করে দৃশ্যমান হয়। তখন রিপোর্ট, আলোচনা সামনে চলে আসে।
ব্রিটেনের সর্বশেষ রিপোর্টে দেখা যায়, যে সব নারীরা পরিবার ও সন্তান নিয়ে বসবাস করেন, তারা তুলনামূলকভাবে কম আয় ও কম বেতনের চাকরী করে থাকেন।সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব ফিসক্যাল স্ট্যাডি(আইএফএস) তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা বলছে, এখনো ব্রিটেনে “জেনডার ওয়েজ গ্যাপ” রয়ে গেছে এবং সেটা দু`দশক ধরে চলে আসছে। বিশেষ করে যে সব নারী বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আছেন, তারা এখনো পেছনে পড়ে আছেন, সন্তানবিহীনদের থেকে।
জোসেফ রাওয়ান্ট্রি ফাউন্ডেশন এই গবেষণা পরিচালনা করে এবং তারা দেখতে পায়, পুরুষদের তুলনায় নারীরা ঘন্টায় রেট হিসেবে ১৮% কম বেতন পেয়ে থাকেন। ২০০৩ এবং ১৯৯৩ সালের সাথে এর তুলনা করে বলা হয়েছে, যথাক্রমে এর শতাংশ ২৮% ।
এই তুলনা চিত্রে দেখানো হয়েছে, যখন একজন মহিলা সন্তান নেন, তখন ধীরে ধীরে অর্থাৎ বছরের পর বছর যেতে যেতে প্রথম সন্তানটির বয়স যখন ১২ হয়, তখন তার বেতন বা আয় ঘন্টায় ৩২% নীচে নামতে থাকে।
ঘন্টায় মেয়েদের বেতন পুরুষদের তুলনায় ১৮% এর নীচে- রিপোর্টে নির্দেশ করা হয়েছে।
নারীদের কেন এই গ্যাপ-
রিপোর্টে সাজেস্ট করা হয়েছে, মহিলারা যখন সন্তান নেন, তখন হয়তো কম ঘন্টার কাজ করেন, অথবা এর ফলে প্রমোশন থেকে বঞ্চিত কিংবা বাদ পড়ে যান, কিংবা কেবলমাত্র নারী হিসেবে শ্রম মার্কেটের সাথে তাল মেলাতে না পারা- কারণ হিসেবেই তুলে আনা হয়েছে, তাদের কম আয় বা কম বেতন এর কারণ হিসেবে।
বেশী প্রভাবিত করে-
বিগত ২০ বছর ধরে এই ওয়েজ ব্যবধান অপরিবর্তনীয় অবস্থায় আছে, যদিও অনেক মহিলা ভালো শিক্ষা- দীক্ষা ও উন্নত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। তবে যে সব মহিলা কম শিক্ষা অর্থাৎ এ লেভেল বা আরো কিছু উচ্চ শিক্ষা রয়েছে কিন্তু বেটার কোয়ালিফাইড নন, তাদের ক্ষেত্রে এই বেতনের বা আয়ের ব্যবধান তীব্র ভাবে হয়ে থাকে, যার ফলে তাদের উন্নতিতেও বাধার সৃস্টি করে।
রবার্ট জয়েসঃ কো-অথর-
আইএসএস এর ডিরেক্টর রবার্ট জয়েস এ রিপোর্ট সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, মহিলারা কম ঘন্টার জবে যখন কাজ করেন, তার মানে তারা কম ঘন্টার বেতন পেয়ে থাকেন, কারণ তাতে তাদের প্রোগ্রেশনও কম হয়ে থাকে। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের ক্ষেত্রে তাদের ইমিডিয়েট পে কাট বা তাদের পার্ট টাইম থেকে ফুল টাইম জব সুইচিং এর জন্যে নয়।
18%
hourly pay rates for women are around 18% lower than for men
23%
There was a pay gap of 23% in 2003
প্রতিক্রিয়া-
টিইউসি- টিউসির জেনারেল সেক্রেটারি বলেন, এটা খুবই এক বেদনাদায়ক যে, এখনো নারীরা মাদারহুড পে প্যানাল্টিতে সাফার করছেন। তাদের অধিকাংশই পরিবার ও সন্তান দেখা শুনার জন্য ভালো পেইড জব ছাড়তে বাধ্য হন, এমনকি কাজের ফ্লেক্সিবিলিটি অভাব হেতু।
লেবার শ্যাডো উইমেন এন্ড ইক্যুয়ালিটি মিনিস্টার– অ্যাঞ্জেলা রাইনার বলেন, নারী পুরুষের এই বেতন বৈষম্য কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
ইক্যুয়ালিটি এন্ড হিউম্যান রাইটস কমিশন– এর মুখপাত্র বলেন, আমরা কোনভাবেই এই ডিসক্রিমিনেশনকে ইগনোর করতে পারিনা। ব্রিটেনে এখনো বেতন বৈষম্য, প্র্যাগন্যান্সি ও ম্যাটারনিটি ডিসক্রিমিনেশন- অব্যাহত থাকা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
গভর্ণম্যান্টের বক্তব্য– সরকারের একজন মুখপাত্রের মতে, জেন্ডার ওয়েজ গ্যাপ রেকর্ড ব্রেক করেছে এবং আমরা চাই এর আরো ফাস্টার উন্নতি করতে। সেজন্যে আমরা জেন্ডার ওয়েজ পে গ্যাপ রিপোর্ট এবং বিজনেস প্ল্যান পাবলিশ করার জন্য তাগিদ দিয়েছি, এবং এর উন্নতি বিধানে দ্রুত কাজ করছি।
২৫শে আগস্ট ২০১৬, লন্ডন
Pingback: Begum24.com | `ব্রিটেনে নারী-পুরুষে বেতন বৈষম্য`