সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
প্রাক ভাবনা:
১৮৭৬ সালে (১৮৭৭ নামে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ও আমেরিকার রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটদের রিকনষ্ট্রাকশন খ্যাত)রিপাবলিকান প্রার্থী রোথারফোর্ড হেইস গোপনে দক্ষিণের ডেমোক্রেট সদস্যদের সাথে দেখা করে দরকষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন, যাতে হেইসকে নির্বাচনে আটকানো না হয় অর্থাৎ তার জয়ের ব্যাপারে তাদের সাথে গোপন শলা পরামর্শ করে সমঝোতা করেছিলেন, এমন একসময় যখন দুই দলের বৈরিতা ছিলো চরমে।বিনিময়ে হেইসের সাথে ডেমোক্রেটরা শর্ত দিয়েছিলো দক্ষিণ থেকে ফেডারেল ট্রুপ উইথড্রো করে নিতে হবে, যাতে দক্ষিণে ডেমোক্রেটদের অধীনে থাকে। ফলে ঐ তথাকথিত সমঝোতার ফলে ফ্লোরিডা, লুসিয়ানা, সাউথ ক্যারোলিনা ডেমোক্রেটদের দ্বারা শাসিত হয় আরো একবার এবং বলা যায় এভাবেই সেদিনকার রিকনষ্ট্রাকশন যুগের এন্ড হয়।
০২) সাউথ আমেরিকার রাজ্যগুলোতে একসময় সিভিল ওয়ার, রেসিজম এবং কালো আফ্রিকার ইতিহাসের অনেক সমঝোতার ইতিহাস প্রকাশ্য ও গোপনে যা পরবর্তীতে বাস্তবের আলো দেখে সুন্দরের ও সহাবস্থানের সূচনা করে শান্তি ও সমৃদ্ধির জীবনের পথে এগিয়ে এসেছে, সব কিছুর মূলে কোন না কোন উপায়ে সমঝোতার রাজনীতি ।
বাংলাদেশ প্রেক্ষিত:
১৯৯০ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশবাসী এবং বিশ্ববাসী আশা করেছিলো এবার বুঝি বাংলাদেশের জনগণ সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও জবাবদিহিমূলক সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে। ১৯৯০ সালের পর ২০১৪ সাল—- দীর্ঘ রক্তাক্ত ও ধ্বংসের ইতিহাস বৈ নতুন কিছু নয়। বরং খুন, রাহাজানি, রক্তারক্তি থেকে আজকে এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, বাংলাদেশ যেন কোন এক রক্তাক্ত ও ধ্বংসযজ্ঞের নয়া এক উপাখ্যানের নাম। এখন প্রতিনিয়ত বোমা, পেট্রল বোমা, একে অন্যকে ঘায়েল, প্রতি-ঘায়েল করার এক হিংস্র নেশায় যেন পেয়ে বসেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্য একেবারে ধ্বংসের কিনারে এসে পৌছবে।
সমঝোতা ও সংলাপ:
সারা বিশ্বের সকল দাতা, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী আর দেশের আপামর জনগণ প্রতিনিয়ত বলে আসছেন, দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও এবং তাদের দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে বিরাজমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করার জন্যে। কিন্তু জাতিসংঘ, আমেরিকা, ভারত, ইউকে, ইইউ, চীন, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী সকলেই আপ্রাণ চেষ্টা করেও দুই নেত্রী ও দুই দলের মধ্যে সমঝোতার লেশ মাত্র করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে অবস্থায় এসেছে, যে একে অন্যকে কি করে ন্যক্কার জনকভাবে ঘায়েল করে ক্ষমতায় টিকে থাকা ও আবার ফিরে আসা যায় সে চেষ্টাই অব্যাহত আছে।
এই দুই নেত্রীর সাথে যারা আছেন, তারাও আরো ভয়াবহ।
সমঝোতা নামক সোনার হরিণ সকলের নাগালের বাইরে এবং আদৌ সমঝোতা হওয়ার মতো কোন পরিবেশও এখন আর অবশিষ্ট নেই।সমঝোতা হয়ও যদি, কিছু দিন পরেই আবার শুরু হয়ে যাবে সেই পুরনো ঝগড়া, মারামারি, কাটাকাটি।
দূত, এম্বাসাডার, আর ষ্টেকহোল্ডারদের কাছে আবেদন:
সংলাপ এবং সমঝোতা সফল হবে, দুই নেত্রী ও দলের সাথে সমঝোতা ও সংলাপের জন্য যারা দৌড় ঝাপ এবং রাত দিন কষ্ট করছেন, তারা ভেবে দেখতে পারেন। প্রাথমিক গ্রাউন্ড ওয়ার্ক দুই নেত্রী ও দলের সাথে গোপনে করে দেখতে পারেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সমূহের ঐ গোপন ফর্মুলার আদলে। একসময় তারাও এরকম হানাহানি করে নিজেরা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো, আমাদের মতো। দেশ সমূহেরও বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলো। যেমন ভাবে আমরা পাঁচ বছর করে যা গড়ি, পাঁচ বছরান্তে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলের প্রশ্নে মারামারি করে সেই অর্জন আবার ধ্বংস করে ফেলি। আর এবারতো দেশ ব্যাংক্রাপ্সি করার মতলব নিয়ে মাঠে সবাই তৎপর ।
যারা সংলাপ ও সমঝোতায় বিশ্বাসী এবং সংলাপের মধ্যে আশার আলো দেখতেছেন, তারা দুই নেত্রীর সাথে শলা পরামর্শ করতে পারেন ( সংক্ষেপিত চুক্তির রূপ, বিস্তারিত আলোচনা সাপেক্ষে খসড়া প্রেজেন্টেশন )
০১) আগামী ১৫ বছরের জন্য দুই নেত্রী ও দুই দল ও তাদের জোটের জন্য ক্ষমতায় থাকার ভারসাম্যপূর্ণ এগ্রিম্যান্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করে দেয়া
০২) গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে যিনি বা যে দল জয়ী হবে, ক্ষমতায় আসবে, তারা যেমন সরকার গঠন করবে, একই সাথে পরাজিত দলের নেতা ও তাদের দল সরকারে সমান সুযোগ পাবে। যেমন বিজয়ী দল প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ যেমন গঠন করবে, ঠিক তেমনি পরাজিত দলের নেতা একইভাবে রাষ্ট্রপতি/ উপরাষ্ট্রপতি, ডেপুটি স্পীকার, উপ-মন্ত্রী, প্রতি-মন্ত্রী সমানভাবে পাবেন ঐ পাঁচ বছর। তৃতীয় পরাজিত দলের নেতা ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও আনুপাতিক হারে প্রতিমন্ত্রী পাবেন।অথবা জয়ী দল প্রধানমন্ত্রী পরাজিত দল ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হবেন।বিরোধী দল তখন হবে ছোট কোন দলের জয়ী দল, যারা ৪ টা বা ৭/৮ আসনে জয়ী হয়ে আসবে। একেবারে ঝামেলামুক্ত ।
০৩) বিজয়ী দল যেমন চীফ ইলেকশন কমিশনার নিয়োগ দিবে, পরাজিত দলের মনোনীত একজন তেমনি ইলেকশন কমিশনার পাবে, তৃতীয় দল তেমনি একজন মনোনয়নের ক্ষমতা পাবে। একইভাবে অন্যান্য সংস্থা ও বিভাগে জয়ী ও পরাজিতরা ঠিক করবে।
০৪) এই ১৫ বছরের মধ্যে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর এভাবেই নির্বাচন হবে এবং জয়ী ও পরাজিত দল আবার ক্ষমতায় থাকবে।এখানে এগ্রিম্যান্ট থাকবে, দুই দলের কেউই এই ১৫ বছরের মধ্যে নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতা ও দলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ব্যতীত আর কোন মামলা ও শাস্তি দিতে পারবেনা। পাঁচ বছর অন্তর অন্তর দেশ শাসন করে এরা যে অন্যায় অবিচার করে ফলশ্রুতিতে তাদের ভিতরে এক ধরনের ফিয়ারনেস কাজ করে, ইনডেমনিটির ফলে এই ভয় আর থাকবেনা। প্রতিপক্ষের পরাজয় মেনে নিয়ে আবার সরকারে শরিক হয়ে কাজ করবে। শর্ত থকবে- ক) আর নির্বাচনের জন্য কোন দল রেডিও, টেলিভিশন, মিডিয়া, স্যাটেলাইট, ক্যাবলস, সংবাদ পত্র, আর বিভাগীয় শহরে জমায়েত, কেন্দ্রীয় জমায়েত ( নির্ধারিত সভাস্থল যেমন সোহরাওয়ার্দী )ছাড়া আর কোন সভা সমাবেশ, মিছিল, মাইকিং দরকার পড়বেনা, না করবেনা- যেহেতু তাদেরই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ উম্মুক্ত এবং নিশ্চিত গ্যারান্টি। জয় হউক আর পরাজয় হউক। খ) দুই নেত্রী এবং দল নিজ নিজ ছাত্র সংগঠণ বিলুপ্তি ঘোষণা করবেন এবং কার্যকর করবেন।
০৫) এই সুযোগ ও ইনডেমনিটির ফলে দুই নেত্রী ও দলকে এগ্রিমেন্টে সাইন করে গ্যারান্টি দিতে হবে, কোন অবস্থাতেই আর নাশকতা এবং হরতাল, অবরোধ আর সহিংস রাজনীতির দিকে যাবেনা এই ১৫ বছরের মধ্যে। যা কিছু বিরোধ-সমাধান সবই ঐ পার্লামেন্টে এবং নিজেদের মধ্যে করতে হবে।
০৬) দুই দলের নেতা নেত্রী প্রতি বছর এবং ১৫ বছরের মধ্যে হরহামেশা যখন ক্ষমতায় থাকবে, মন্ত্রী পরিষদে থাকবে, তখন তাদের মধ্যে এগ্রিম্যান্টে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে, এই ১৫ বছর সময়ের মধ্যে তারা ধীরে ধীরে জবাবদিহি মূলক প্রশাসন, স্বশাসিত স্থানীয় সরকার, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, স্বাধীন পুলিশ কমিশন, ১৫ বছর পরে ক্ষমতার পালা বদলের সময় স্থায়ী এক ব্যবস্থা তাদের দুইয়ের সমন্বয়ে করার গ্যারান্টি, একই সাথে চুক্তির ঐ মেয়াদকাল শেষের পর পরই নিজেদের দলীয় প্রধান এবং সরকার প্রধানের কেউ ই আর একসাথে দুই টার্মের বেশী থাকতে পারবেননা ( যেহেতু তারা ১৫ বছর সময়কাল দেশ শাসনের সুযোগ পাবেন, তাদের ঐ ১৫ বছরের শাসনের সময়কালীন কেউই আর দলের দায়িত্বে এবং সরকার প্রধান ও মন্ত্রীপরিষদে ও নির্বাচনের কোন জায়গাতেই আসা থেকে আপনা থেকেই বঞ্চিত হবেন)।
সাংবিধানিক গ্যারান্টি:
সমঝোতার এই চুক্তির গ্যারান্টি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা দ্বারা নিশ্চিত করা হবে।
জাতি সংঘ, দাতা, ভারত, মার্কিন, ইউকে ইইউ মধ্যপ্রাচ্য দূত আর দেশী বিদেশী নির্বাচনী ষ্টেক হোল্ডারদের তত্বাবধানে দুই নেত্রী ও দল চুক্তির গ্যারান্টি ও সম্মতি ও স্বাক্ষরিত হবে।
ফলাফল:
০১) এই ১৫ বছর যখন তারা নিজেরাই ক্ষমতায় থাকবে, পার্থক্য শুধু যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতবে তিনি প্রধানমন্ত্রী, আর পরাজিত দল সহকারী( বিরোধী দল বা ক্ষমতার বাইরে নয়)। এরফলে তাদের মধ্যে একে অন্যের প্রতি হিংসা, মারামারি, শায়েস্তা আর শিক্ষা দেয়ার মানসিকতা থাকবেনা। পুলিশ দিয়ে একে অন্যের বাড়ী ঘর ব্যবসা পেটানো, ভাঙ্গানো, হত্যা, গুম হবেনা। এসব নাহলে হরতালেরও দরকার পড়বেনা। এর ফলে দুই নেত্রী ও দল যেমন সংলাপে বসবে, রেজাল্টও আসবে, জনগণও জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। লং টার্মে নতুন এক সুস্থ্য সামাজিক রাজনৈতিক শক্তির সূচনা হবে ।
০২) এরফলে আমরা এই পনেরো বছরের মধ্যে দুই দলের মাধ্যমে আর যাই হউক এক সহাবস্থান যেমন পাবো, তেমনি ক্ষমতার পালা বদলের সময় একটা স্থায়ী ব্যবস্থা পেয়ে যাবো- এগ্রিম্যান্টের আন্তর্জাতিক শর্ত অনুযায়ী দুই দল স্থায়ী ট্রানজিশনাল ব্যবস্থা দিতে বাধ্য।
কেননা, এই দুই দলের নেতা নেত্রী কে স্থায়ী এক ব্যবস্থা বা দীর্ঘকালীন ক্ষমতার মধ্যে রাখার গ্যারান্টি ক্লজের নিশ্চয়তা ব্যতীত এরা আমাদের জন্য যেমন গণতান্ত্রিক কোন ব্যবস্থা করবেনা, সমঝোতায়ও আসবেনা। বার বার এরা তাই করবে। আমরাও এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবো, এভাবেই আমাদের জেনারেশনের পর জেনারেশন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু এদের হাত থেকে নিস্তার পাবোনা। তাই উত্তম হলো বৃহত্তর শান্তি ও মঙ্গলের জন্যে এই দুই নেত্রী ও দলকে কিছুদিনের জন্যে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি দিয়ে আগামীর সুন্দরের পথ উন্মুক্ত করে দেয়ার স্বার্থে এরকম কোন এক ব্যবস্থা করা উচিৎ।
আমাদের সুশীল সমাজ, নাগরিক, দাতা আর দূতেরা কি একটু চিন্তা
করে দেখবেন ?
প্রিয় পাঠক পছন্দ হলে আপনার মতামত সহ বিভিন্ন সংস্থা ও এই দূতিয়ালিদের কাছে অর্গেনাইজড ওয়েতে রিকমেন্ড করুন।
আমরা এই সুন্দর দেশটিতে আর অশান্তির আগুনে জ্বলতে দিতে চাইনা ।
8th January 2014.
লিঙ্ক
তত্বাবধায়কের স্থায়ী বিকল্পঃ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বা পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ গঠণ এবং সেখান থেকে নির্বাচনকালিন সরকার গঠণের মাধ্যমে নিরপেক্ষ, অবাধ, ফ্রি, ফেয়ার ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা- http://blog.priyo.com/syed-shah-salim-ahmed/39157.html