হাসিনা এক্সপ্রেস, তারেক রহমান এবং ঠক ঝাল মিষ্টি
SAMSUNG CSC

হাসিনা এক্সপ্রেস, তারেক রহমান এবং ঠক ঝাল মিষ্টি

রাজনীতি হলো চলমান প্রক্রিয়া। জীবনের চলার গতির ন্যায় এ এক চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় যাত্রা পথে থেমে গেলে বা পেছনে পড়ে গেলে দেশ, দল, জাতিকে অনেক খেসারত দিতে হয়। জীবনের ধর্মই হলো চলতে থাকা। যখনি থেমে যায়, তখন আর জীবন প্রদীপ থাকেনা। রাজনীতিটাই হলো জীবন চলার ঐ গতির মতোই।

রাজনীতির এই চলন্ত ট্রেনের যাত্রী যেমন আওয়ামীলীগ, তেমনি বিএনপি ও অন্যরা। আর এই চলন্ত ট্রেনের পুরোভাগে আছেন একদিকে শেখ হাসিনা, অন্যদিকে খালেদা জিয়া। বলা হয়ে থাকে, বিশেষ করে সরকারি দলের মন্ত্রী ও নেতা-নেত্রীরা বলে থাকেন, নির্বাচনী ট্রেনের এই যাত্রা পথে বেগম খালেদা জিয়া ট্রেন মিস করেছেন। সরকারী এই প্রচারণার চুল চেড়া বিশ্লেষণে যাবোনা। এখানে যাওয়ার সে সুযোগও নেই। সেটা অন্যখানে, অন্য কোন এক সময়। সেজন্য আরো সময়ের প্রয়োজন।

তবে রাজনীতির এই রঙ্গমঞ্চে এখন হাসিনা এক্সপ্রেস অত্যন্ত দ্রুতগামী এবং কুশলী-সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিগত দুই বছর ধরে বিএনপি এবং বিএনপি ঘরানার কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবী, আর রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যে আশঙ্কা এবং বিচার বিশ্লেষণ করে আসছিলেন, হাসিনা এক্সপ্রেস মূলত সেই আশঙ্কাকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে হাজারো শত বাধা বিপত্তি এবং জামায়াত শিবিরের জ্বালাও পোড়াও আর ধ্বংসের বিপরীতে নাটকীয় অবস্থায় বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে দশম সংসদ নির্বাচনের আঞ্জাম সম্পন্ন করে ফেলেছেন। খালেদা জিয়া হাসিনা এক্সপ্রেস ধরতে বা রুখে দিতে কার্যত ব্যর্থই শুধু হননি, দল হিসেবে বিএনপিকে বিশাল এক কঠিন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে এনে দাড় করিয়েছেন। রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে আবেগ উচ্ছ্বাস এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও পছন্দ মাফিক নীতি কৌশল যে মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য, খালেদা এক্সপ্রেস তার জ্বলন্ত এক প্রমাণ। অথচ খালেদা এক্সপ্রেসের যাত্রী বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগণ। তবে পার্থক্য, সেই যাত্রীদের বৃহৎ অংশই নেতৃত্বহীন এবং জামায়াত শিবিরের তাণ্ডবের কাছে নিভু নিভু প্রদীপের মতো জ্বলে উঠা মাত্র।

আমি আগেই বলেছি হাসিনা এক্সপ্রেস অনেক পরিপক্ব এবং কুশলী, যা দ্রুতগামী এবং রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে অনেক বিকল্প হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে মোক্ষম সময়ে হাসিনা এক্সপ্রেস তীর ছুড়ে মেরে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। খালেদা এক্সপ্রেস তখনো সময়ের অনেক পেছনে পড়ে ট্রেনের কাণ্ডারির ভূমিকায় আভির্ভূত হতে চেয়েছিলেন, যেমন করে হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ এবং হাওলাদার-জি এম কাদের শাটল ট্রেনের গতি থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, অথচ সাঁটল ট্রেন থেকে নামতেও চাননি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। একঢিলে বহু পাখি মারার ন্যায় কুপোকাত হতে হয়েছে।

প্রিয় তারেক রহমান, আজ থেকে ছয়-সাত মাস আগে আপনি যখন লন্ডনের মিডিয়ায় আগামীর বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে স্থির, দ্রুতগামী ট্রেনের ন্যায়- তখন অনেকেই আপনার নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনায় অভিভূত হয়েছিলেন। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ইউরোপীয় কুশীলবেরা একজন ব্যক্তি তারেক রহমানের প্রশ্নবিদ্ধ ইমেজকে রাজনীতিক তারেককে রূপান্তরিত করে জনতার তারেক রহমানের ইমেজে যে বাধার প্রাচীরের ন্যায় ব্রিক স্টোন তৈরির কাঠামো বৃদ্ধির প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে আপনার আশে পাশে অতি আবেগী, অতি সেকেলে, সময়ের স্রোতের পেছনের অরাজনৈতিক অংশের এবং একই সাথে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এই নয়া বরপুত্রের পীঠে সওয়ার হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী লবিষ্ট ও জামায়াত শিবিরের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়াশীল অংশের খপ্পরে আপনাকে ফেলে দিয়ে এবং সেই সাথে চলমান রাজনীতির হাসিনা এক্সপ্রেসের যোজন যোজন দূরত্বের সীমারেখার মধ্যে আটকে রেখে রাজনীতির ময়দানে বিএনপির এই এসেটকে কি করে আরো অধিক মাত্রায় বিতর্কিত করে তুলে ফায়দা লুটা যায়- একজন তারেক রহমান যখন এমন হীন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পড়েন বা রাজনীতির গড্ডালিকা প্রবাহের স্রোতে নিজেকে জ্ঞাতে অজ্ঞাতে শরিক করে ফেলেন তখন বড় ভয় আর শঙ্কা হয় বন্ধু। যে নতুন রাজনীতি ও নতুন স্বপ্নের বাংলাদেশের কথা বলছেন, তার সাথে আজকের এই হঠাত করে দশম নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে একেবারে জিরো আওয়ারে সালাউদ্দিন, ফখরুল আর আলকায়েদা স্টাইলে একজন তারেক রহমানের ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নির্বাচন বর্জনের আহবান- স্বাভাবিক ও আগামীর নয়া রাজনীতির তারেক রহমানের সাথে সম্পূর্ণ বেমানান। যারা এ কাজটি আপনাকে দিয়ে করিয়েছে কিংবা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, নিতান্ত রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে এরা সকলেই হাসিনা এক্সপ্রেসের এই বর্তমানের বিপরীতে খুবই নিচু মানের খেলোয়াড়। কতোটুকু রাজনৈতিক অপরিপক্বতা আর দেউলিয়াপনা হলে একজন তরুণ সম্ভাবনাময় ভিশনারি রাজনৈতিক স্বপ্নদ্রষ্টাকে দিয়ে এমন কাজ করাতে পারে- সহজেই সেটা বোধগম্য।

প্রিয় তারেক রহমান, এমন না যে। নির্বাচনের মাস খানেক বা পনেরো দিন আগে হলেও যে বার্তা জনগণের কাছে প্রশ্নের উদ্রেক করতোনা। ভিডিও বার্তার আশ্রয় নিবেন যখন-তাহলে আরেকটু আগে সময় নিয়ে প্রচার করলেন না কেন? তাহলেতো নেতিবাচক সিগন্যাল কখনো উপস্থাপিত হতোনা, যা এখন হচ্ছে। অথচ সেটা নিতান্তই একেবারে নির্বাচনের ঠিক ৬ কি ৭ ঘণ্টা আগে আফগানিস্তান আর ঐ পাকিস্তানের তালেবান নেতাদের মতো একেবারে অন্তিম মুহূর্তে ভিডিও ম্যাসেজ দিয়ে কঠোর রাজনৈতিক বার্তা- কতোটুকু রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও সুন্দরের বহিঃপ্রকাশ সে বিচারের মূল্যায়নের ভার আজ আপনার নিজস্ব। কেননা, যে ক্ষতি আপনার হয়ে গেছে, আপনার ঐ কার্যের সাথে যে টিম জড়িত, তারা কেউ এর দায় দায়িত্ব নিবেনা। আপনাকে ও বিএনপিকে সে দায় নিতে হবে।

রাজনৈতিক নেতা হবে স্বচ্ছ এবং সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্র ও অটল। রাজনৈতিক নেতার এখানে লুকোচুরি কিংবা এরকম তাক লাগানো ভিডিও বার্তার প্রয়োজন নেই। আর আজকের যুগে যেখানে নেতা কর্মীদের ডেকে ভিডিও কনফারেন্স করে স্বচ্ছ দিক নির্দেশনা অনেক আগেই আপনি দিতে পারতেন, সে পথে না গিয়ে এমন করে ভিডিও বার্তা আপনার আগামীর নেতৃত্ব যে অনেক প্রশ্নবিদ্ধ হবে- সেটা কি জানতেননা।

মাত্র তিন মাস আগে, লন্ডনের এক অভিজাত ক্যাফেতে গার্ডিয়ানের বারীদের সাথে আলাপের সুযোগ হয়েছিলো। তারা আশঙ্কা করেছিলেন, তারেক রহমান হয়তো সরকারি দলের ট্র্যাপে পড়তে যাচ্ছেন। বিশ্বাস হয়নি। তবে তারা বলেছিলো, তাদের কাছে মনে হচ্ছে এমন হতে যাচ্ছে, তারেকের টিমে ও আশেপাশে এখন দলীয় ও জামায়াতের ছদ্মবেশে হাসিনা এক্সপ্রেসের অনেক কুশীলব সক্রিয়, যা তাকে যেকোন মুহূর্তে ট্র্যাপে ফেলে দিতে পারে। তারেক রহমানের হঠাৎ করে ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর থেকে কেন জানি বারে বার তাদের ঐ আশঙ্কার কথাই মনে হচ্ছিলো। তবে কি তারেক সাবোট্যাজের শিকার? আমি জানিনা, কিন্তু যেভাবেই হউক তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে মস্ত বড় এক ভুল সিদ্ধান্ত হঠাত করে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান । প্রিয় তারেক রহমান, আমি বর্জনের আহবানের বিরোধিতা বা সমালোচনা করছিনা, বরং আপনি যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন, তা সঠিক হয়নি। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে আপনার এই ভিডিও বার্তা মারাত্মক নেগেটিভ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে-আপনি কি সেটা অবগত।

মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টম্যান্ট, নয়াদিল্লী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটিশ ফিরেন পলিসি মেকার, জার্মানি, মধ্যপ্রাচ্য কোথাও আপনার ভিডিও বার্তার স্বপক্ষে কোন লজিক দাড় করানো যাচ্ছেনা, এমন সত্য ও সঠিক খবর কি আপনি জানেন।

বিএনপির রাজনীতির সব চাইতে বড় ব্যর্থতা, দেশীয় রাজনীতির বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বর্তমান রাজনৈতিক পোলারাইজেশন সম্পর্কে অজ্ঞতা।

আবার একটি নেগেটিভ সিগন্যালকে ডাকতে গিয়ে রাজনীতিতে আরেকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিতে গিয়ে সামান্য উদ্যোগ আর কুশলী রাজনৈতিক টিমের অভাবে আমি বলবো, সংবাদ সম্মেলনে প্রাপ্ত তথ্য আপ টু ডেট ছিলোনা।অথচ একজন তারেক রহমানের সংবাদ সম্মেলনের তথ্য ও উপস্থাপনা হবে অনেক উঁচু ও আপ টু দ্য ডেটেড- এটা বলার আর অপেক্ষা রাখেনা। না হলে হাসিনা এক্সপ্রেস এর পেছনে বার বার হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে হবে। ৫ তারিখ সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমান বললেন, অবৈধ আওয়ামীলীগের সরকারের সাথে কোন সংলাপ নয়। ৬ তারিখ খালেদা জিয়া জাতির উদ্দেশ্যে বিবৃতি দিয়ে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আন্দোলন ও সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের পরিবেশের কথা। ১৮ দলের পক্ষে আলি আহমদও একি দাবীতে নতুন নির্বাচন এবং সকলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে অবাধ নির্বাচনের দাবী করেছেন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষণের কাজে দেশীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ যেখানে শফিক রেহমানের স্ত্রী মিসেস রেহমান, ডঃ বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ভাগিনা ডঃ নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ সহ সকলে একসাথে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন, গড় পড়তা ৩০% ভোট পড়েছে, সেখানে তারেক রহমান বলছেন ৫% ভোট- কোথায় যেন বিস্তর ফারাক। একজন জনপ্রিয় জাতীয় নেতার সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য যারা তাকে সরবরাহ করেছে, তারা হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছে, নয়তো তথ্যের অভাবহেতু এমন সারণী নেতাকে দিয়ে উপস্থাপন করিয়েছে। যেভাবেই হউক সেটা গলদ, আর তারেক রহমানের মতো নেতার প্রেস কনফারেন্সে এমন গলদ রাজনীতির জন্য যেমন অশনি সংকেত, একইভাবে তারেকের ইমেজ সংকটের প্রশ্নেও সেটা বড় প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দিবে। যারা এই টিমের সাথে থেকে এমন তথ্য উপস্থাপিত করিয়েছেন, তাদের সকল সম্পর্কেই তারেক রহমানকে সজাগ থাকা জরুরী। নতুবা এরা আরো বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিবে। দলীয় হাই কমান্ড আর নীতি নির্ধারনী ফোরামের সাথে তারেক রহমান এবং টিমের বিস্তর ব্যবধান বা গ্যাপ এখনি জরুরী ভিত্তিতে সমন্বয় সাধন করে ঐক্যবদ্ধ একই স্টেটম্যান্ট হওয়া প্রয়োজন। নাহলে কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ছড়াবে আর যে বিভ্রান্তি ও গ্যাপের সুযোগে গত পাঁচটি বছর বিএনপি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে বিচ্ছিন্নতার সুযোগে সরকার পুরো ফায়দা নিজেদের ঘরে তুলে নিয়েছে, সীমাহীন ব্যর্থতা ও দুর্নীতির পরেও। অথচ বিএনপির প্রতি জনতার সমর্থন প্রশ্নাতীত । খালেদা জিয়া ও ১৮ দল তত্বাবধায়কের আন্দোলন থেকে সরে এসে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবীতে হাসিনার পদত্যাগের ইস্যু নিয়ে নির্বাচন প্রতিরোধের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন, সেখানে লন্ডনে তারেক জিয়া এসে ভিডিও বার্তায় নির্বাচন বর্জনের আহবান একই সাথে ১৮ দল ও তারেক জিয়া এবং তার টিমের মধ্যে বিস্তর ব্যবধানের কথাই জনমতে মারাত্মকভাবে হোঁচট খেয়েছে। আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে এরকম গ্যাপের সুযোগ অবারিত করে দেয়া হয়, তাহলে সরকার সেখানে সুযোগ পেয়ে যায়।

প্রিয় তারেক রহমান, আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, আপনার আশে পাশে এবং আপনাকে ঘিরে যে ভিতর ও বাইরের দুটো টিম সক্রিয় রয়েছে এবং ব্যক্তিগত স্টাফদের মধ্যে সরকারের ভিতরকার এজেন্ট হয়ে কারা কারা কাজ করছে বা কাদের সাথে রয়েছে সরকারের যোগাযোগ। একই সাথে আপনাকে অতি সন্তর্পণে ব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি ও নানান রটনা কমিউনিটি ও দেশী বিদেশী মাধ্যমে কেমন করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বা মুখে মধু অন্তরে বিষ এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আপনাকে সজাগ থাকতে হবে।

প্রিয় তারেক রহমান, জোটের রাজনীতি করতে গিয়ে, জামায়াত ও তারেক রহমান জামায়াত-বিএনপির ন্যায় একাকার হয়ে গেলে আগামীর বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি ও বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেবে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। বিশ্ব রাজনীতির এবং উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণে এমন ধারনা বার বার প্রমাণিত। অতি কট্টর এবং জঙ্গি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক নির্ভর রাজনীতির সংস্পর্শে বিশ্বের বড় বড় নামকরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও স্রোতের বিপরীতে অবস্থান করে হারিয়ে গেছেন। আগামীর নেতৃত্বের নিরাপদ ও অবারিত রাখার জন্য তারেক রহমানকে অবশ্যই এই দুয়ের মধ্যে বিভাজন রেখা সুস্পষ্ট করতে হবে তার নিজের কাজ, কর্ম ও রাজনৈতিক পরিপক্বতা নিয়ে। নতুবা মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি অসংখ্য সমর্থন থাকা স্বত্বেও জামায়াত শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য ও তাণ্ডবের বিপরীতে জাতীয়তাবাদী শক্তির সীমাহীন ও লজ্জাজনক পরাজয় ও নতজানু নীরবতা বিএনপি বিগত পাঁচ বছরে যেমন অক্ষরে অক্ষরে টের পেয়েছে, একইভাবে ৯০ এর রাজপথ ও রাজনীতির মাঠের নিয়ামক শক্তি ও বিএনপির প্রধান শক্তি ছাত্রদলের মতো বিশাল সংগঠন অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে বিগত আন্দোলন সংগ্রামের সময় পুলিশী তাড়াখেয়ে মাছের চোখের ন্যায় মিন মিন করে তাকিয়ে থেকে মাঝে মধ্যে সংবাদ পত্রে বিবৃতি দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা। তারেক রহমানকে সেই সব উপলব্ধি যেমন করতে হবে, এর গভীরে গিয়ে ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিকারের সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন আর জাসদের বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ন্যায় ছাত্রদলও একসময় ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে।

প্রিয় তারেক, বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আজ এই ভূরাজনীতির একেবারে সেন্টারে অবস্থিত। সেজন্যে এখন বাংলাদেশকে ঘিরে যেমন ভারত ভাবে, সমান তালে আমেরিকাও ভাবে। ঠিক তেমনি করে ভাবে ব্রিটেন, ইউরোপ এবং চীন। এই সব ষ্টেকহোল্ডারদের নীতি ও পলিসি, ব্যবসা ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ সকল কিছুই কোনভাবেই একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা করে দেখার আর সুযোগ নেই। শুধু আমেরিকা, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক নীতি ও পলিসি হোল্ডারদের মন যুগিয়ে বা ফেভারে নিয়ে রাজনৈতিক গেইম খেললে হবেনা, পাশের দেশ ভারত এবং চীনকে সমানভাবে রাজনৈতিক কৌশলের অংশীদার করে নিতে হবে। আজকের যুগে কেবলমাত্র ভারত বিরোধী জিগির তুলে রাজনৈতিক পুরনো কৌশলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ একেবারেই সীমিত আবার শুধুমাত্র ইসলামিকীকরণ কিংবা ইসলামিক কান্ট্রিদের সাথে কৌশল ঠিক করে সামনে এগিয়ে যাওয়ারও সুযোগ সীমিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের ফরেন পলিসি তথাকথিত প্রবাসী রাজনীতিবিদ আর জামায়াত লবিষ্টদের জোয়ারে সাজালে বা নিরূপণ করলে আপনাকে মারাত্মক ভুল করতে হবে। আজকের যুগে ইউরোপীয় ও ব্রিটিশরা কখনো ইনক্লূসিভ কতোটুকু পর্যায় পর্যন্ত মেনে চলে বা রক্ষা করে সেসব বিনয়ের সাথে বলছি জানতে হবে

আবার হঠাৎ করে ভিডিও বার্তা এমন করে প্রকাশ করে দেশীয় রাজনীতিতে বিএনপির সবচাইতে এডভান্স কূটনীতির অংশ মজীনার জন্যেও স্পেস অনেকটা কমিয়ে নিয়ে এসেছেন, যা মার্কিনীদের জন্য রিজার্ভেশনের মাত্রাকে আবারো সক্রিয় করে তুলেছে- ভিডিও বার্তা এমনকরে দেয়ার আগে ভাল করে ভাবা উচিত ছিলো। তার উপর সংলাপ প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে একেবারে নাকচ করে দেয়া চলমান পশ্চিমা ও ইউরোপীয় কূটনীতিকে একেবারে নেগেটি সিগন্যাল সরাসরি প্রদান করাটাও উচিৎ হয়নি। দার্শনিক থুসিডাইস বলেছিলেন, সংলাপই সভ্যতার ভিত্তি। মজীনা, গিভসন আর বাইরে থেকে মাইলাম সকলেই চাচ্ছেন সংলাপ শুরু করে দিয়ে রোড ম্যাপ ঘোষণা করতে সকলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশনের- বিএনপি ও ১৮ দল সেটা চায়।

বিপ্লব করার জন্য যে সব উপাদান থাকা দরকার, যেমন করে রাজনৈতিক দল এবং তার নেতা কর্মী প্রশিক্ষিত ও উজ্জীবিত হওয়া দরকার, জনগণও যেমন করে প্রস্তুতি দরকার, বাংলাদেশে কি সেরকম পরিস্থিতি আদৌ আছে ? হাসিনার বিরোধিতা কিংবা আওয়ামীলীগকে হটিয়ে বিএনপির ক্ষমতালাভ-সেটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে, কোন ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা কোন দল ও দেশের আপামর জনগণ কেউই চিন্তা করছেনা। আর যদি তাই হয়, সংলাপ ও আলাপ আলোচনা ব্যতিরেকে কোন অবস্থাতেই তা সম্ভব নয়।তারানকো মিশনও সেই সংলাপের উপর তাগিদ দিয়ে গেছেন। আর সংলাপবিহীন রাজনীতি হাসিনার শাসন দীর্ঘায়িত করবে- তাতে কোন সন্দেহ নাই। সেটা যতই ভোটারবিহীন কিংবা অবৈধ শাসনই হউক না কেন।

আরেকটা কথা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মনে করিয়ে দিতে চাই আর তাহলো, বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির দুই বৃহৎ দলের নেতৃত্বে অপরিহার্য দুই তরুণের একজন যেমন তারেক রহমানঅপরজন সজীব ওয়াজেদ জয়। বিরাজমান বাস্তবতা ও বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষিতে পুরনো নেতৃত্ব একসময় চলে যেতেই হবে, যতই আঁকড়িয়ে ধরে থাকুন না কেন। হাসিনা খালেদাকে এক সময় না এক সময় রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নিতেই হবে। দুই দলের সকলেই তারেক এবং সজীবকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছেন এবং তাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে কোন আপত্তিও নেই। দুই দলের ভিতরে থাকা কিছু সুযোগ সন্ধানী আর সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এই দুই তরুণকে নানাভাবে বিতর্কিত ও বিভ্রান্তি ছড়াতে সিদ্ধহস্ত, যেমন করে বাশের কেল্লাওয়ালারা বোধগম্য কারণে সজীবের ব্যাপারে বিভ্রান্তির ডালা পালা ছড়াচ্ছেন, তেমনি করে একই লবির লোকদের ক্রীড়নকে সযত্নে পরিণত হতে চলেছেন তারেক রহমানও-আগামীর রাজনীতির প্রশ্নে ও নতুনের আগমনী বার্তা অবারিত রাখার স্বার্থে তারেক কি আরেকটু সচেতন হবেননা ?

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
৬ জানুয়ারি ২০১৩ ।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *