আসিফ নজরুল: একজন সময়ের সাহসী সৈনিক নাকি সভ্যতার উপরের নষ্ট, ভ্রষ্টের একাংশ

আসিফ নজরুল: একজন সময়ের সাহসী সৈনিক নাকি সভ্যতার উপরের নষ্ট, ভ্রষ্টের একাংশ

আসিফ নজরুল-আজকের সময়ের সবচাইতে জনপ্রিয় একজন টকশোর বক্তা। সন্দেহ নাই, তিনি একজন আইনের শিক্ষক।বাংলাদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সব চাইতে দুর্দান্ত আলোচক, সমালোচক, টেবিল টকের মুকুটহীন নায়ক এই আসিফ নজরুল। সরকারের সবচাইতে কড়া সমালোচক হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । বিএনপি ও ১৮ দলের বাইরের সার্কেলে আসিফ নজরুল একজন সাক্ষাত বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির বক্তা কিংবা অনেকে তাচ্ছিল্য করে বলে চলেন জামায়াতের বর্তমান হুজুর আসিফ নজরুল মাওলানা।

এমন করেই অনলাইন পোর্টালে কোন একজনের লেখা পড়েছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদও করেছিলাম (ফলস্বরূপ সেই পত্রিকা থেকে আউট)। ফেইসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে এই মুহূর্তে রনির পরে তিনিই সবচাইতে আলোচিত সমালোচিত। বলা বাহুল্য ফেইস বুকে এই দুজনকে নিয়ে জামায়াত এবং বাঁশের কেল্লার নামে বেনামে একাউন্ট হোল্ডাররা যতনা সক্রিয়, ততোটুকু নিরুত্তাপ আওয়ামী ঘরানার একাউন্ট হোল্ডারদের কাছে। তবে কি তারা ধরেই নিয়েছেন, রনি এবং আসিফ নজরুল বর্তমানে শুধুই তাদের ম্যাটার বা পার্পাস সার্ভ করছেন। ফেইস বুকে আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ এক কর্মী অত্যন্ত সাহসের সাথেই সুন্দর করে বলেছেন, আসিফ নজরুলও প্রেমিক, আমিও প্রেমিক। দুঃখ শুধু আসিফ নজরুল টকশো মাতিয়ে প্রেমিকাকে খুন করতে পারেন, আমি পারিনা (আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ সৈয়দ হকের স্ট্যাটাস থেকে)। আরো একজন অদ্ভুত সুন্দর করে লিখেছেন, রাতে টক শো, আর দিনে কন্যার বয়সী মেয়ের সাথে প্রেম, নষ্টা-ভ্রষ্টাদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলাদেশ।

১৯৮৭-৮৮-৮৯ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মিলে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যখন গণআদালত করে গোলাম আযম-নিজামীর যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ে ফাঁসির আদেশে সারা জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন, তখন এই আসিফ নজরুল জাহানারা ইমামের সাথে ছিলেন প্রথম কাতারে। তৎকালীন সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষক, ছাত্র সংগ্রাম আর শেখ হাসিনার ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের একেবারে অগ্রভাগে শ্রেণী কক্ষের ক্লাস ফেলে দিয়ে যিনি সব সময় সরব থাকতেন-তার নাম আসিফ নজরুল।

আসিফ নজরুল-কেবল আইনের একজন শিক্ষক নন। আজকের টেলিভিশনের টক শোর সবচাইতে ভালো বক্তা। সন্দেহ নাই। তার নিন্দুকেরাও তা স্বীকার করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকুরী নামক এই মহান পেশা এখনো অনেক সম্মানিত ও লোভনীয়। আমাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে একটা অধঃপতন এবং পচন ধরা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কোন আলাদা দ্বীপ নয়। এটাও আমাদের সমাজের একটা অংশ। সমাজের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত যখন পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, তখন বিশ্ববিদ্যালয় নামক মহান জ্ঞানের স্থানও কলুষিত এবং দুর্গন্ধ ছড়াবে-এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় আর আগের মতো জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিযোগিতা হয়না। এখন হয় কে কতো বেশী দলবাজি, টেন্ডারবাজী, অস্রবাজী, বোমাবাজি, মদ, জুয়া, গাজা, আফিম, চরস, মাদকসেবী ও সাপ্লায়ার ও এর ব্যবসায় পারদর্শী ও তরুণ তরুণীদেরকে নিজেদের ঐ নষ্ট-ভ্রষ্টগামী করতে সক্ষম হয়েছে। সেটা এখন এমন পর্যায়ে যে শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্র ছাত্রী নেতা নেত্রী সকলেই কমবেশি জড়িত।

বিশ্বের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের মতো দলবাজি আর ঐ সব গাঁজাখুরি আকাম কুকাম হয়না। সেটা যেমন শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেলায় সত্য, তেমনি ছাত্র ছাত্রীদের বেলায়ও সত্য। বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনা বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর সব জায়গায়ই সকল সময় রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টাই জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্প কলা চর্চা হয়ে থাকে। ছাত্র শিক্ষক সর্বদা নিবেদিত থাকেন সেই সব ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ কেবল ব্যতিক্রম। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী যেমন তার সারা দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২১ কর্ম ঘন্টাই ব্যয় করেন রাজনীতি, দলবাজি, পেশীবাজীতে, তেমনি শিক্ষকেরাও ছাত্র ছাত্রীদের সাথে পাল্লা দিয়ে দলীয় আনুগত্য, দলবাজি, গলাবাজি ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকেন দিনে রাতের অধিকাংশ কর্ম ঘন্টাতেই। এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী নামধারী ঐ সব দলবাজ নেতা নেত্রীদের মধ্য থেকে আজকের শিক্ষক শিক্ষিকা নামধারী দলবাজ, গলাবাজ শিক্ষকদের আলাদা করাটাই সব চাইতে বড় মুস্কিল এক কাজ।

আসিফের মতো খ্যাতিমান শিক্ষক তার নিজস্ব খ্যাতি, ক্যারিশমা ও সেলেব্রিটির জোয়ারে নিজের ভেতরের শ্রেণী স্বার্থ এবং তৃতীয় বিশ্বের গরীব এক দেশের নাগরিকদের ভেতরকার সুপ্ত অথচ খাটি নিরেট এক লুকায়িত চারিত্রিক গোপন বাসনা কোন না কোন এক বৃত্তাকারে কিংবা সময়ের প্রেক্ষিতে স্রোতের মোহে আবর্তিত হয়ে সমাজের বাইরে এসে প্রকাশিত হবে- এতে অবাক হইনি।অবাক হই এই কারণে, খ্যাতি, ক্যারিশমা, রোল মডেল নামক বিষয় যখন আস্তে ধীরে, অল্প অল্প করে অথচ দৃপ্ত পদে সেলেব্রিটি নামক তকমা গায়ে লেপন করে , সমাজ সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে প্রতিনিয়ত নসিহত এবং সক্রেটিস, ভলতেয়ার, আর্নেষ্ট হোমিংওয়ে, বায়রন, শেলী, ওয়ার্ডসওয়ার্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শহীদ জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বুক চিরে একেবারে নির্ভেজাল খাটি বাঙ্গালিয়ানা ও পুরনো সেকেলের বন্দিত্ব ছিন্ন করে , খান খান করে, নিজস্ব স্বকীয়তা ও বাঙালির শাশ্বত চিরন্তন প্রকৃতির মায়াময় কোমলতা আর বীরত্বের মিশ্রণের সাথে এক মৌলিক কাব্যিক মোহনীয়তায় পেয়ে বসে, ভয় হয় তখনি।

আর ভয় এবং শঙ্কা হয় বলেই বাঙালি তখন খুঁজতে থাকে আসিফ নজরুলদের মধ্য থেকে রোল মডেল। কারণ প্রতিনিয়ত এরা টেলিভিশন টকশো সব বিষয়ে যৌক্তিক অযৌক্তিক কিংবা যুক্তির কষ্টিপাথরে জাগতিক- অজাগতিক সকল বিষয়ের আইনি এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যখন দাঁড় করান, জাতিকে গেলানোর চেষ্টা করেন, তখন অবশ্যই ভাবতে হয়, আম আদমির চেয়ে আসিফদের মতো শিক্ষক কাম রাজনৈতিক পণ্ডিতেরা অবশ্যই ব্যতিক্রম এবং এই ব্যতিক্রম বলেই টেলিভিশনের টক শো কেন্দ্রিক জনপ্রিয় বক্তা সেলেব্রিটির আসন ছাড়িয়ে হয়ে যান জনগণের সম্পদে। এই সম্পদের প্রতিই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। আর জনগণের সম্পদ বলেই একজন আসিফ নজরুলকে নিয়ে তখন জনগণ ভাবে, এই কি আমার রোল মডেল ? চারদিকে অমাবস্যা, অন্ধকার, সর্বত্র শুধু খাই খাই, আসিফদের মতো বক্তারা আঙ্গুল দিয়ে জনগণকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। জ্ঞান দান করে শিক্ষিত করে চলেছেন। অতি উত্তম কাজ। সেজন্যই জনগণ ভাবে, আমার রোল মডেল কি আসিফ নাকি অন্য কেউ? কেননা ঐ চারদিকের অন্ধকার আর পচে গলে দুর্গন্ধ ছাড়ানোতে জনগণ ভীত শ্রদ্ধ।

একদিকে নিজেকে সেলেব্রিটির মাত্রা ছাড়িয়ে জাতির রোল মডেলের আদর্শের তকমা। আর অপরদিকে একের পর বিয়ে। একজন মুসলমান অবশ্যই তিনটি বিয়ে করতেই পারে। কিন্তু তার জন্য রয়েছে কতিপয় আবশ্যিক শর্ত।সে সব আজকের বিষয় নয়। প্রথম বিয়ে টেকেনি। জনগণ মেনে নিলো। আসিফ খুশী নয়। হতেই পারে। স্বাভাবিক। দ্বিতীয় বিয়ে-রোকেয়া প্রাচী। দুজনেই দগ্ধ। অথচ সেখানেও বাঁধ । আবারো অশান্তি। সেলেব্রিটি মাত্রই সংসার ভাঙ্গা গড়া। এটাই স্বাভাবিক। রোকেয়া প্রাচী-আসিফের ডিভোর্সের সংবাদ ফিকে হতে না হতেই তৃতীয় বিয়ে। সারা রাত, সারা দিন জাতিকে নসিহত, আবার নিজের জীবনে এতো উত্থান পতন, নিজের জীবনের ছন্দ হীনতা- কেমন যেন বেমানান। যে তার সংসার জীবনে স্থিতিস্থাপকতা আনতে পারেনা, সে কেমন করে জাতিকে নসিহত করে। অবশ্যই ব্যক্তিজীবন আলাদা।ব্যক্তি তার নিজের জীবনে কি করে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু ব্যক্তি যখন তার নিজস্ব জীবনের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে সামাজিক দায় বদ্ধতার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবনের সোপানে পা দিয়ে, সেলেব্রিটির মাত্রা ছাড়িয়ে নিজের জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে , রোল মডেল হওয়ার উদগ্র বাসনায় জনতার সম্পদের পরিণত হয়ে যায়, তখনি ব্যক্তি তার একান্ত ব্যক্তি স্বত্বার লোপ ঘটিয়ে সামষ্টিক স্বত্বায় পরিগণিত হয়। আর একজন শিক্ষক, একজন আইনের শিক্ষক হয়ে আসিফ সে কথা ভালো করেই জানেন।

জানেন বলেই, ফ্রি মিক্সিং আর অবাধ স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সূতিকাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ সমূহ তাদের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে ক্ষমতার শীর্ষ পদে আরোহণ যারা করবেন বা জাতিকে জ্ঞান দান ও নির্দেশনা প্রদান করবেন, তাদের সকলকে সর্বক্ষেত্রে দেখতে চায় একেবারে নির্মল, পরিচ্ছন্ন জীবনের অধিকারী। সেটা কি তার ব্যক্তি জীবন, কি তার পারিবারিক জীবন, কি তার রাজনৈতিক জীবন, কি তার প্রফেশনাল জীবনে অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রেই। নিকট অতীতে আমেরিকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্যেও মনিকা লিউনিস্কির সাথে প্রেম বা অবৈধ মেলা মেশা মার্কিনীরা যেমন সহজভাবে নেয়নি, ঠিক তেমনি ক্লিনটনকে ও তার খেসারত দিতে হয়েছিলো। একইভাবে আমরা দেখি অবাধ যৌনতার স্বর্গরাজ্য ফ্রান্স, ইটালি হওয়া সত্বেও প্রেসিডেন্ট সার্কোজি এবং ইটালির বারলুসকোনির অবৈধ যৌনতা বা মেলামেশা কোনটাই মেনে নেয়নি জনগণ। একই অবস্থা আমরা দেখি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে মানুষ আরো মহান ও উন্নত আদর্শ হিসেবে এখনো মনে করে। কারণ মানুষ সর্বত্রই এবং সেটা সকল দেশেই একজন স্কুল মাস্টার পান্না কিংবা মার্কিন স্কুল শিক্ষিকার অবাধ যৌনতাকে যেমন ধিক্কার দিয়ে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে, তেমনি বিকৃত রুচির ঐ শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু মানের ঐ আদর্শ শিক্ষকদের কোন কালেই কোন তুলনা না করা সত্যেও তাদের নিজেদের ব্যর্থতা ও আধুনিক সভ্যতার উচ্ছিষ্ট খাবারের নিকৃষ্ট অবশিষ্টাংশের তুলনা করতে ঝুঁকে পড়ছে এই কারণে , প্রত্যেক সভ্যতার অবশিষ্ঠাংসের মধ্যে বা নতুন সভ্যতার উন্মেষে পুরাতন সভ্যতা, পুরাতন সংস্কৃতির যে লেশ বা পচনের অংশ অতি বিনয় ও যত্নের সাথে সমাজের বুকে বিষ বাষ্প হয়ে ছড়িয়ে পড়ে- বস্তুর বা গতির স্বাভাবিক সূত্র হিসেবে, আসিফ নজরুলদের মতো অতি বিয়ে পাগল কিংবা নারী, গাড়ী, টাকা- এ তিন চায়না আজকের সমাজ সভ্যতায় খুব কম লোকই পাওয়া যায়, যে চায়না সে হয় দেবতা, না হয় ভিন গ্রহের প্রাণী- এমন নীতি বাক্যের আদি ও প্রকৃত রূপ কিনা সেটা হয়তো বলার এখনো সময় না এলেও এতোটুকু বলা যায়, আধুনিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি এর খারাপ দিকও রয়েছে। সভ্যতা যেমন জনপদকে আলোকিত করে, তেমনি এর ভিতরের কুপমুন্ডুকতা একে অন্ধকারে সরীসৃপ প্রাণীর অস্তিত্বের কথাও জানিয়ে দেয়।

আবার যুগ যুগ ধরে যে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের উন্নতি ও পুরাতন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে নতুন সভ্যতা, নতুন সমাজের উৎপত্তির বিকাশ সাধিত হয়েছে, তার মূলেও রয়েছে এই পুরুষের সাথে নারীরও সমান অংশগ্রহণ, সমান অবদান। মহেঞ্জোদারো থেকে প্রাচীন ব্যবিলনীয় সভ্যতা আর আজকের ইতিহাস খ্যাত মিস ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে শিল্পী সাহিত্যিক আর চিত্রকরদের সমান তালে উপস্থাপনা- এ যে তারই ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত অতুলনীয়।

সেজন্যে বহু বিতর্ক থাকতেও একজন তসলিমা নাসরীন যখন অবাধ যৌন স্বাধীনতার কথা বলেন কিংবা নায়িকা প্রভা খোলামেলা যখন ক্রিয়া বা লেখিকা মিনা ফারাহ যখন খোলামেলা ভাবে নিজের মত তুলে ধরেন, তখন বিশ্ব সভ্যতার প্রতিভূরা ছি ছি রি রি করে আওয়াজ তুলেন। আর যারা একজন তসলিমা নাসরিন, প্রভা কিংবা ফারাহকে নিয়ে প্রতিনিয়ত মানব চরিত্রের দুষ্টু স্বভাবের সুপ্ত অথচ অন্ধকারের দিকটি আড়াল করে নিয়ত গোপনে অভিসার করে সুখের সাগরে ভেসে চলেন, আর প্রকাশ্যে মুক্তির জয়গান করে সমাজ সভ্যতাকে ধন্য করেন, তারাই হয়ে যান সবচাইতে বেশী সোচ্চার একজন তসলিমা কিংবা এই রকম ফারাহদের বিপরীতে মানবতা ও সভ্যতার জয়গানে তথা মানব সভ্যতাকে তাদের ভাষায় অসুন্দরের হাত থেকে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে। শত বিতর্কের পরেও একজন তসলিমা নাসরিন তখনো উতরে যান, কারণ তিনি যা বলেন, যা করেন, তাতে কোন ভণিতা করেননা। তার কাজ ও কর্মে থাকেন সৎ, প্রকাশ্যে খোলামেলা বলে থাকেন। হতে পারে তা নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য-সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত নীতি বাক্য আওড়ান, সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি পাল্টে দেয়ার কথা বলেন, আইনের শাসনের কথা বলেন, মানবাধিকারের কথা বলেন, তারা ভেতরে ভেতরে তসলিমা ফারাহ জেনি গঃ দের চাইতেও আরো ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহভাবে উচ্ছিষ্ট ও দূষিত-আধুনিক সভ্যতার উপরিভাগের সবচাইতে নিকৃষ্ট এক নষ্ট আর ভ্রষ্টাদের মহাগুরু। কেননা এরা মানবাধিকারের সুন্দর গুণাবলীর কথা বলেন, অথচ একটি নারীতে এরা সন্তুষ্ট নয়। প্রতিনিয়ত নারীদেহ নিয়ে খেলা করতে করতে এরা নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করে। তাইতো এদের চাই আজ এই নারী- তো- কাল আরেক নারী। আজ পছন্দ জেনিফারকে তো কাল পছন্দ লোপাজকে। এই হলো এদের চরিত্র। এরা কখনো অল্পে সন্তুষ্ট নয়। ধূর্ত শৃগালের ন্যায় কাঁচা মাংসের লোভে এরা সময়ে সময়ে খোজে নতুন কাচা মাংস। এই ধরনের ভয়ানক চরিত্রের দুষ্টুদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশের সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেনা। বিগত কয় বছরে যে জাতীয় এই সেলেব্রিটি এমন কাজ করে বসলো, সেতো আরো পাঁচ বছর পরে আরো এক সঙ্গী নিয়ে জাতীয় শিরোনাম হবেনা এমন নিশ্চয়তা হলফ করে শিলাও দিতে পারবেনা।

প্রিয় আসিফ নজরুল- সভ্যতার উপর থেকে নীচের অংশের পচনের সাথে আমরা সকলেই গলিত হচ্ছি। পার্থক্য শুধু আপনি সামনে এসেছেন সৎ সাহস নিয়ে, কিন্তু ধূর্ত একজন পান্না মাস্টারকে আমরা ধরতে পেরেছি।

কিন্তু এতো সব কিছুর পরেও সমাজ, সংসার, সভ্যতা, সংস্কৃতি সামনের দিকে এগিয়ে চলে। চলতেই হবে। কেননা জীবনের ধর্মই চলা, কবরের যাওয়ার আগ পর্যন্ত এর গতি চলতেই থাকে। কেউ চলে বেপরোয়া, কেউ রয়ে টয়ে, কেউ মুখ লুকিয়ে কেউ মাথা উঁচু করে।

কিন্তু সবাইকেই সাঙ্গ লীলা করে একদিন চলে যেতে হবে। সবাই যাচ্ছে, যার সিরিয়াল আগে আসছে, সে চলে যাচ্ছে। কারো কারো যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি, যা পৃথিবী তাদের শোকে হয় মুহ্যমান। তারা রেখে যান অনাগত এই নশ্বর পৃথিবীর মানুষ ও তাদের জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ ও স্মৃতি-যে স্মৃতিতে সভ্যতা হয় আরো মোহিত, আরো উজ্জ্বল। তারা চলে যান অথচ তাদের রেখে যাওয়া কর্মের গুনে সভ্যতার চাকা ধীরে বয়ে চলে আগামীর দিকে, অনন্তকালের দিকে।

প্রিয় আসিফ নজরুল, আপনাকে দুঃখ কিংবা কষ্ট দেয়ার সামান্য ইচ্ছে আমার ছিলোনা, চাইনি তা দিতে।অনিচ্ছাকৃত ভাবে দুঃখ দিয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার বিনীত প্রার্থনা রইলো।সত্য চিরদিন সুন্দর-সত্যের হউক চির জয়।জয় হউক আপনার, শতায়ু হউন আপনি এবং আপনার সহধর্মিণী।এবার আপনার বিবাহিত জীবন হউক অনেক সুখ ও শান্তির এবং স্থিতির-এই আমাদের চাওয়া।

প্রিয় পাঠক আপনারাও ক্ষমা সুন্দর দৃষ্ঠিতে নেবেন।কথায় আছে না যে যতো বেশী খ্যাতিমান, সে ততো বেশী বিতর্কিত- এমন সূত্রে ফেলতে চাইনা ।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ ।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *