বাংলাদেশী মহিলা, লন্ডনের পপলারে থাকেন, অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবন যাপনে করেন, ডিজাইনার ক্লথ, ডিজাইনার বেনিটি ব্যাগ সহ যিনি তার হেয়ার ড্রেসিং এ ১৩০ পাউন্ড খরচ করে থাকেন, অত্যন্ত বিলাসবহুল শপ হোয়াইট রোজে তার গ্রোসারী শপিং করেন, যার স্বামী বছরে ৪০০ হাজার পাউন্ড রেস্টুরেন্ট ব্যবসা টার্ন ওভার করে থাকেন, দুই সন্তানের মা বাংলাদেশী জোহরা বেগম ব্রিটেনে বেনিফিট জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের ৮২ হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নেয়ার দায়ে ওল্ড বেইলী জাজ গত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ আট মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।
প্রিজন অফিসার কোর্ট থেকে জোহরা বেগমকে সরাসরি প্রিজন সেলে নিয়ে যাওয়ার সময় জোহরা বেগম বিস্মিত হয়ে তার দুই সন্তানের কথা বলে তার আইনজীবির সাথে কথা বলতে চাইলে প্রিজন অফিসার বলেন, প্রিজন সেল থেকেই তিনি তার আইনজীবির সাথে কথা বলতে পারবেন।মেইল প্রশ্ন রেখেছে, তিনি বোরখা পরিহিতা থাকেন, অথচ বেনিফিটে থেকেও হেয়ার ড্রেসারের কাছে গিয়ে ১৩০ পাউন্ড সপ্তাহে খরচ করেন কেমন করে ?
৩২ বছর বয়স্কা জোহরা বেগম কোর্টকে জানান, তার স্বামী মোহাম্মদ চৌধুরী একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করেন, যার সাপ্তাহিক আয় মাত্র ত্রিশ পাউন্ড। অথচ পুলিশী ইনভেস্টিগেশনে কোর্ট অবহিত হন কোলচেস্টারের স্পাইস তান্দুরী রেস্টুরেন্টের মালিক তারই স্বামী যার বছরে টার্ণওভার চারশত হাজার পাউন্ড। জোহরা ও তার স্বামী হাউজিং ও কাউন্সিল ট্যাক্স বেনিফিট এবং লেবার(ডোল-যার কোন কাজ নেই তাকে জীবন ধারনের জন্য সরকার বেনিফিট দেয়, যার নাম জব সিকার্স এলাউন্স/এমপ্লয়ম্যান্ট সাপোর্ট এলাউন্স / লেবার বেনিফিট)বেনিফিট নেন। তাদের বাড়ী ভাড়া ১,১৫০ পাউন্ড সপ্তাহে হাউজিং বেনিফিটের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়-যা জোহরা বেগম এবং তার স্বামী নিজেদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা ও ইনকাম গোপন করে এই সব বেনিফিট ক্লেইম করে সর্বমোট ৮২ হাজার পাউন্ড জালিয়াতি করে নিজের উচ্চাভিলাসি জীবন যাপন করে চলতে থাকেন। দীর্ঘ হিয়ারিং ও অনুসন্ধানের পর আদালত অবহিত হন জোহরা ও তার স্বামী দুজনেই জালিয়াতির সাথে জড়িত।
এমনকি, আদালতে প্রমাণিত হয়, জোহরা ও তার স্বামী যে বাড়িতে বসবাস করে হাউজিং ও কাউন্সিল ট্যাক্স দাবী করে জালিয়াতি করেন, সে বাড়ী মূলত তার মায়ের। তার বাবা আব্দুল মান্নানও তাদের এই জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকায় কোর্ট এই জালিয়াতির সাথে জড়িত সকল পক্ষকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আদালতে জোহরার আইনজীবি ব্যারিস্টার গিরিশ তানকী জোহরা বেগমের জালিয়াতির কথা স্বীকার করে বলেন, জোহরা জানেননা তার স্বামী মূলত এই রেস্টুরেন্টের মালিক। জোহরার আইনিজীবি আদালতকে আরো জানান, জোহরার স্বামী একজন ড্রাগ এডিক্টেড এবং জুয়াড়ি। এমনকি তার স্বামী মোহাম্মদ চৌধুরী জোহরাকে জোর করে এভরশন করান, কারন সে আর কোন সন্তান চায়নি। তার আইনজীবি আদালতকে আরো অবহিত করেন, মিঃ চৌধুরী কিছুতেই চাননা তার স্ত্রী বাইরে কাজ করুক, তাই বাধ্য হয়েই তিনি জীবন ধারনের জন্য এই ফ্রড করেছেন, যেহেতু তার আর কোন উপায় ছিলোনা। সেজন্য আদালতকে তার এই সেন্টেন্স মওকুফের আবেদন জানালে জাজ তার বিরোধিতা করে বলেন, এই ফ্রড একটি বড় ধরনের এবং সেটা ৮২ হাজার পাউন্ডের সুনির্দিষ্ট ফ্রড।
জাজ বলেন, জোহরা বেগম জেনে শুনে উচ্চাভিলাসি জীবন যাপনের জন্য এই ফ্রড করেছেন। যিনি ৪০০ পাউন্ডের ডিজাইনার ক্লথ ছাড়াও হেয়ার স্টাইলের জন্য হেয়ার ড্রেসারে ১৩০ পাউন্ড খরচ করেন, তার ব্যাংক একাউন্টের লেন-দেনেই প্রমাণিত। এর আগে তিনি দাবি করেছেন তার ব্যাংক একাউন্টে কোন পয়সা নেই। অথচ প্রতিদিন ৮০০ পাউন্ড করে তিনি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছেন বা সাথে করে নিয়েছেন-কোর্ট জানতে পেরেছে।
জোহরা বেগম এর আগে দুবার মোটর এক্সিডেন্টের ক্লেইম করে সাকসেসফুল হয়েছেন, যার ফলে তিনি কাজ করতে অপারগ এমন ভুয়া দাবি করে বেনিফিট ফ্রড করেছেন।
জোহরা বেগমের এই ফ্রডের সাথে তার স্বামী মোহাম্মদ চৌধুরীও জড়িত। অরিজিন্যালি একটি চার্জ সহ আরো পাঁচটি ফলস রি-প্রেজেন্টেশনের চার্জ কোর্ট তার বিরুদ্ধে এনেছেন। জোহরা বেগমের সাথে তারও সাজা হওয়ার কথা থাকলে সে কোর্টে উপস্থিত না হওয়াতে জাজ তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যূ করেছেন। তার স্বামীকে যেকোন মুহূর্তে এরেস্ট করা হবে।
জোহরা বেগমের বাবা আব্দুল মান্নান ৪০ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন। তার মেয়ের বেনিফিট জালিয়াতির সাথে তিনিও জড়িত থাকার প্রমাণ সত্যেও প্রসিকিউশন শেষ পর্যন্ত তার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়।
কোর্ট আরো অবহিত হন, জোহরা বেগম এর আগে শপলিফটিং এ ধরা পড়েছিলেন। তিনি খুব ছোট বেলাতেই তার বাবা মায়ের সাথে ব্রিটেনে আসেন। মোটর দুর্ঘটনার ক্লেইম তখন তার স্বামী ড্রাইভ করছিলেন, তিনি নন।বেনিফিট ফ্রডের টাকা দিয়ে জোহরা বেগম অত্যন্ত বিলাস বহুল দামী গাড়ীতে চলাফেরা করেছেন, ঐ দামী গাড়ী করে তিনি শপিং সহ নিত্যদিনের কাজ করেছেন-কোর্ট অবহিত হন। জোহরা বেগমের বিরুদ্ধে আনিত সাতটি চার্জ (ফ্রড এন্ড ফ্রড বাই ফলস রিপ্রেজেন্টেশন)প্রমাণিত হওয়ায় কোর্ট তাকে আট মাসের সেন্টেন্স দিয়ে জেলে প্রেরণ করেন।
(সূত্র: ডেইলি মেইল ইউকে, ছবি ডেইলি মেইল, জোহরা বেগমের ছবি-প্রিজন অফিসার )