লন্ডনের তিনটি ভিন্ন স্বাদের খবরঃ প্রিয় বাংলাদেশ

লন্ডনের তিনটি ভিন্ন স্বাদের খবরঃ প্রিয় বাংলাদেশ

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়দিবসের অনুষ্ঠানমালার শুরুতে আলতাবআলী পার্কে অবস্থিত শহীদ বেদীতে উঠা ও ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে উপস্থিত সাধারণ জনগণ, শিশু কিশোর, অভিভাবকগণ ১৮ দল ও আওয়ামীলীগের ধাক্কাধাক্কিতে শহীদ বেদীতে পুস্পার্ঘ অর্পণ না করেই দুঃখ, হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যান।

দুপুর বারোটার দিকে ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেক প্রবাসী পরিবার পরিজন নিয়ে আলতাবআলী পার্কে আসতে থাকেন শহীদ বেদীতে পুস্পার্ঘ অর্পণের জন্য। এর কিছু আগে আওয়ামীলীগ ও সমমনাদলগুলো শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে পুস্পার্ঘ অর্পণের জন্য সমবেত হতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রবাসী তরুণ, কিশোর, শিশু, বৃদ্ধ শহীদ মিনারের বেদীর দিকে এগুতে থাকেন। সবার চোখে মুখে বিজয়ের অনাবিল এক আনন্দ ও উচ্ছ্বাস।

 

এর মিনিট কিছু পরেই হঠাৎ করে ১৮ দলের ব্যানারে বড় ধরনের লোকসমাগম আলতাবআলী পার্কের শহীদ মিনারের বেদীর দিকে প্রায় জোর করেই ঢুকে পড়ে। তাদের আগমনে ও অভাবিত এই অবস্থায় তখন শহীদ মিনারের বেদীর কাছাকাছি থাকা জনগণ ও আওয়ামীলীগের সাথে ১৮ দলের প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। এই অবস্থায় ১৮ দল প্রায় জোর করেই শহীদ মিনারের পাদদেশে চলে যায় এবং তাদের অনেকেই জুতা পায়ে শহীদ বেদিতে উঠে পড়েন। সাধারণ জনগণ, মহিলা, শিশু ও নতুন প্রজন্ম কিশোরগণ এই ধাক্কাধাক্কি দেখে ফুল না দিয়েই আলতাবআলী পার্ক ত্যাগ করতে দেখা যায়। তাদের অনেকেই তখন এই রকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এতো ধাক্কাধাক্কি আর জোর জবরদস্তিতে শহীদ মিনারের পুস্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে বিজয়ের আনন্দ তখন মলিন হয়ে যায়। এর মধ্যে বৃষ্টির গতিও বাড়তে থাকে।

উল্লেখ্য প্রতিবছর জাতীয় এই অনুষ্ঠানগুলোতে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও এবার বাংলাদেশের মাননীয় হাই কমিশনারকে ঐ সময় পর্যন্ত আলতাবআলী পার্কে দেখা যায়নি বা ততপরবর্তী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি।
সাধারণ প্রবাসীগণ দেশের রাজনৈতিক হিংসা ও হানাহানির জের লন্ডনের শহীদ মিনারের মতো পবিত্র জায়গায় এসে স্থান করে নেয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে একই দিন সকাল ১০.৩১ মিনিটের সময় লন্ডন গণজাগরণ মঞ্চ শহীদ মিনারের পাদদেশে সমবেত হয়ে বাংলাদেশের জনগণের সাথে মিলে মিশে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন। এসময় লন্ডন উদীচী, বিজয় ফুল উদযাপন কমিটি সহ সাংবাদিক, লেখক,মানবাধিকার কর্মী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন এবং সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

দ্বিতীয় সংবাদঃ ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সী ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা বিনিময় করলেন বাংলা মিডিয়ার সাথেঃ-

ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সী গতকাল লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার সাথে এক প্রেস ব্রিফিং এ তার সদ্য ঢাকা সফর সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, বাংলাদেশে কিভাবে নির্বাচন হবে বা কোন পদ্ধতিতে সরকার গঠিত হবে, এটা বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার।

সাঈদা ওয়ার্সী আরো বলেন, ব্রিটেন সকল সময়ই একটি ফেয়ার, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করে, যেখানে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা থাকবে, জনগণ ভয়মুক্ত ভাবে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

ব্যারোনেস ওয়ার্সী আরো বলেন, রাজনৈতিক হিংসা, সহিংসতা বাংলাদেশে প্রায়ই হয়ে থাকে, যা তারা সংবাদ মাধ্যমে অবহিত হয়ে থাকেন। ভায়োল্যান্স তিনিও ঢাকায় আরো দেখেছেন, কিন্তু এবারকার ভায়োল্যান্স অন্য সকল ভায়োল্যান্সের চাইতে অতিমাত্রায় বেশী বলে তার কাছে মনে হয়েছে।

ঢাকা সফরের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, নির্বাচন কমিশন সহ অন্যান্যদের সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা সাংবাদিকদের সাথে বিনিময় করেন।

তৃতীয় সংবাদঃ প্রবাসী বাঙালিরা লন্ডন পাকিস্তান এম্বাসী ঘেরাও করলেন, স্মারকলিপি প্রদান

আজ ১৯ ডিসেম্বর লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন প্রবাসী বাংলাদেশীরা ঘেরাও করে বিক্ষোভ, প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, আওয়ামীলীগ, ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ, বাসদ সহ প্রবাসী সর্বস্তরের জনগণ এক অনির্ধারিত ঘোষণার মাধ্যমে লন্ডনস্থ পাকিস্তান এম্বাসীর সামনে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

সম্প্রতি কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান পার্লামেন্টে রেজুলোশান পাশ করা হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারই প্রেক্ষিতে আজ প্রবাসী বাংলাদেশী জনগণ একত্রিত হয়ে ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে থাকেন।

এসময় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান হাই কমিশনে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, পাকিস্তান কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্রকে করে জাতীয় পরিষদে শোক প্রস্তাব পাশ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, সমগ্র বাংলাদেশীদের প্রতি অবমাননা করেছে। একই সাথে একজন ঘৃণিত খুনী এবং ১৯৭১ সালের তাদের দোসর সহযোগীদের সাথী কাদের মোল্লার অপরাধ সমর্থন করে মানবতা ও আইসিটির প্রতি অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করেছে। কেননা পাকিস্তান নিজেও জানে ১৯৭১ সালে তাদের সৈন্যদের সাথে মিলে এই জামায়াতে ইসলামী ও কাদের মোল্লারা লাখ-লাখ নারী শিশুদের হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে মেতে উঠেছিলো। আদালতে কাদের মোল্লা দুষী সাব্যস্ত হয়ে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ায় রায় কার্যকর করেছে বাংলাদেশ সরকার। এখানে পাকিস্তান সরকারের ও জাতীয় পরিষদের শোক প্রস্তাবের ঔদ্ধত্য প্রদর্শন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বে নগ্ন হস্তক্ষেপ ও সেই সাথে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের সহযোগী হিসেবে নিজেকে আরেকবার প্রমান করলো।

স্মারকলিপিতে পাকিস্তানের ঐ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়।

Salim932@googlemail.com
19th December 2013,london

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *