মাননীয় রাষ্ট্রপতি আ স ম আবদুর রবের প্রস্তাব ভেবে দেখুন, জাতীয় সংলাপ ডাকুন

মাননীয় রাষ্ট্রপতি আ স ম আবদুর রবের প্রস্তাব ভেবে দেখুন, জাতীয় সংলাপ ডাকুন

ক্রমবর্ধমান সহিংস রাজনৈতিক অবস্থা, বোমাবাজি, ককটেল, পেট্রোল বোমা, পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা, রেলওয়ে স্লিপার তুলে নেয়া, স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস পুড়িয়ে দেয়া, এ পর্যন্ত অবরোধে ৪০ জনের মতো নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে। হাসপাতালে শতাধিক নারী-পুরুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

শ্রমজীবী, কর্মজীবী, পেশাজীবী জনগণ ও প্রান্তিক খেটে খাওয়া লোকজন বড় নিদারুন অসহায় ও কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।বাংলাদেশের সব কটা জেলা-উপজেলা বলতে গেলে উত্থাল।সর্বত্র আজ নিরাপত্তার বড় অভাব। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে জনপথ আর জনপদ যেন এক ভয়াল দানব রূপে দেখা দেয়। কখন যে কোথা থেকে কোন বাস, ট্রেনে পেট্রল বোমা মেরে কাদের জীবনের আশার প্রদীপ নিভিয়ে দেয়-এমন এক অজানা আতঙ্কে আজ গোটা বাংলাদেশ।

দুই দল, দুই জোট আর জামায়াত, শিবির, পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ আজ বড় বেপরোয়া ও উদ্যত। একে অন্যের দাবীতে অনড়। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। অথচ এরা সকলেই গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের যে মূল শিক্ষা পরমত সহিঞ্চুতা, তা থেকে এরা সকলেই যোজন যোজন দূরত্বে।

পরিস্থিতি যে আরো খারাপ হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। নাটের গুরু, বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্যাকাশের সার্কাসের জোকার, ভাঁড় এরশাদ আরো এক মহা জঞ্জাল।সারা জীবন জ্বালিয়েছে এ দেশটাকে।এখন শেষ বয়সে এসেও জ্বালানো কিংবা নিজে অঙ্গার হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারছেনা। প্রতিনিয়ত সংবাদ পত্রের জন্য নাটকীয় খোঁড়াক যোগান দিয়ে চলছে।কতিপয় বিপ্লবী আর সুবিধাবাদীরা কখনো তার সাথে, আবার সুযোগ বুঝে কখনো তাকে ছেড়ে হয়ে যায় গণতান্ত্রিক। এই সব সুবিধাবাদী আর দুষ্টুলোকেরা বারে বার রাজনীতিকে করে তুলবে আরো জটিল ও ভয়াবহ-সন্দেহ নাই। যখন মধু যেখানে যেমন, তখন এরা সেখানে তেমন।

নির্বাচন এলেই এই দুই দল আর তাদের নেত্রীদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় উন্মত্ত লড়াই। হায়েনা আর পশুসুলভ সকল কাজ করতেও এরা পিছুপা নেয়না। এদের দোসর তথা এই দুই দলের ব্যর্থতা আর লড়াইয়ের মধ্যে সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়াশীল আর ধর্মান্ধগোষ্ঠী। এরা আরো নিষ্ঠুর এবং এতো উগ্র যে, মানুষ হত্যা থেকে হেন কোন কাজ নেই এরা করতে পারেনা। সারা বিশ্বের আদর্শ পীঠস্থান শান্তির জনপদ বাংলাদেশকে এরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, বৈরুত, সিরিয়ার মতো চরম অস্থিতিশীল, বোমা, সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করতে চায়। তাহলেই এই সুবিধাবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর জন্যে রাজনীতি ও পেট্রো-ডলারের কাড়ি কাড়ি টাকার লোভনীয় সাপ্লাই সহজেই লাভ আরো সুবিধা হয়।

মাননীয় রাষ্ট্রপতি, আপনি গোটা জাতির অভিভাবক। সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আপনার আন্তরিক সদিচ্ছা আর দেশ ও জাতির প্রতি ঐকান্তিক দায়িত্ববোধ- আপনার মাধ্যমেই কেবল জাতির আশা ভরসার একমাত্র স্থল হিসেবে গোটা জাতি এখন আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। বর্তমান সংবিধানে যদিও আপনার খুব একটা ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ যেমন নাই, তারপরেও বয়োবৃদ্ধ এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসীম সাহসী নেতৃত্ব ও দূরদর্শী রাজনীতির সাহচর্য আপনি পেয়েছেন। আপনি দেখেছেন বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিক বিধি বিধানের মধ্যে থেকে কেমন করে সাপও মেরেছিলেন, লাঠিও ভাঙ্গেননি- জাতির ক্রান্তিলগ্নে আপনার কাছ থেকে এমন দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গোটা জাতি আশা করে।

প্রিয় রাষ্ট্রপতি, আওয়ামীলীগের দলীয় লোক এবং জননেত্রীর আস্থাভাজন হয়ে কেবল মাত্র সাক্ষী গোপাল আর নেত্রীর বিশ্বাসভাজনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গিয়ে গোটা জাতিকে ও আপনার জননেত্রীকে একে বারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিবেননা প্লিজ। হাসিনা এখন ক্ষমতা ও জেদের বসে উম্মাত্তাল, সত্য,সুন্দর ও গণতন্ত্রের চর্চা থেকে তিনি এখন অনেক দূরে চলে এসেছেন। যেমন করে এসেছেন বেগম খালেদা জিয়াও। জামাতও এখন সবচাইতেও ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসী দলের গুরু হিসেবে দেখা দিয়েছে।মানুষ যখন জেদ, ক্ষমতা আর কর্তৃত্বের বশে উন্মত্ত হয়ে উঠে তখন সে কি যে করছে, তা বুঝতে পারেনা। যেমন বুঝতে পারেনি গাদ্দাফী, সাদ্দাম,থাকসিন সহ অসংখ্য নেতারা। ফলে ওদের ভয়াবহ পরিণতি আজ ইতিহাসের ট্র্যাজিক অংশ, সাথে সেই সব দেশকেও করে রেখে গিয়েছে নরকের স্বর্গরাজ্য। অ্যাডভোকেট.jpg

প্রিয় রাষ্ট্রপতি, হাসিনা খালেদা দুজনকে কিংবা দুজনের কাউকেই আমরা হারাতে চাইনা। তাদের দুজনেরই রয়েছে বিশাল ম্যান্ডেট। ক্রান্তিকালে প্রয়োজন এই দুই নেত্রীকে গণতান্ত্রিক ফ্রেমের মধ্যে নিয়ে এসে গঠনমূলক, পজিটিভ রাজনীতি চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করা।

দেশের যে অবস্থা, একদিকে আগুন, অপরদিকে গুলি, সন্ত্রাস। গার্মেন্টস কারখানায় একধরনের সুযোগ সন্ধানীরা এই সুযোগে দেশের সবচাইতে খ্যাতিমান এবং সুনামের অধিকারী ষ্ট্যাণ্ডার্ড গার্মেন্টসে আগুন দিয়ে আঠারো হাজার শ্রমিকের জীবন-জীবিকার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।স্ট্যান্ডার্ড এর সৎ ব্যবসায়ীকে অসততার মাধ্যমে রাস্তায় বসানোর সকল পথ সুযোগ সন্ধানীরা করে ফেলেছে। আজকে ষ্ট্যান্ডার্ডে আগুন দিয়েছে, কাল অন্য একটাতে দিবে। কাদের প্ররোচনায় দেয়া হচ্ছে-আপনিও জানেন, আমরাও জানি।কঠোর দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সৎ সরকার ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের বিকল্প কোন পন্থা নেই। বাজারে গুজব রেলের পর এবার লঞ্চ, ট্রলার ডুবানোর প্রক্রিয়া চলছে, দেশের বাইরে থেকে প্রচুর ফান্ড যাচ্ছে, বিমান হাইজ্যাক করে পরিস্থিতি জটিল ও ভয়াবহ করার।ব্যাংক লুটের পায়তারাও করা হচ্ছে।

প্রিয় রাষ্ট্রপতি, টেলিভিশন পত্র-পত্রিকা আর আপনার সাথে বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবীরা সাক্ষাত ও আলোচনা করে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। সবাই আলোচনাই করে যাচ্ছে। দেশের বারোটা বেজে যাচ্ছে। বড় বড় পণ্ডিতেরা টকশো ফাটিয়ে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। কিন্তু কি করা উচিত, কি করলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতে পারে। কেউ তা বলছেনা। যদিও বলে, তবে একদল বলে হাসিনার পক্ষে, অপরদল করে খালেদার পক্ষে ওকালতি। তৃতীয় দল তত্ব আর বড় বড় বুলি আওড়ায়। কি করা উচিত তার কিছুই বলেও না, করেও না। সবাই ফায়দা আর দেশের বারোটা বাজিয়ে কি করে ক্ষমতার সাধ নেয়া যায়-সেই চেষ্টায় ব্যস্ত।

মাননীয় রাষ্ট্রপতি, এক সময়ের বঙ্গবন্ধুর সাথী হিসেবে, সঠিক সময়ে, শেষ পর্যন্ত আ স ম আবদুর রব আপনার সাথে সাক্ষাত করে সঠিক কথাটাই আপনার কাছে তুলে ধরেছেন। হতে পারে সেটা ভুল কিংবা আংশিক প্রস্তাব। কিন্তু তারপরেও বলা যায়, এই প্রথম কেউ একজন দেশের এই অবস্থা থেকে জাতিকে উত্তরণের জন্য কিছু একটা স্পেসিফিক দিক নির্দেশনা দিলেন।আর কারো কাছে আরো উত্তম কার্যকরী কোন বিকল্প প্রস্তাব থাকলে সেটা নিয়েও আলোচনা কিংবা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।rob.jpg

প্রিয় রাষ্ট্রপতি, দেশের এই চরম ক্রান্তিকালে আপনি আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সংলাপের প্রস্তাব ভেবে দেখতে পারেন। পাশাপাশি আ স ম আবদুর রব প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন এই খুনোখুনি, হানাহানি, বোমা, ককটেল, গুলি, ধ্বংসযজ্ঞ থেকে গোটা জনপদকে নিরাপদ রাখার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ গঠন করে সেখান থেকে শ্রেণী, পেশার মানুষের সমন্বয়ে নির্বাচনকালিন সময়ে তত্বাবধায়ক ও দলীয় সরকারের বিকল্প পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের তত্বাবধানে বা এদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালিন সরকার গঠনের বিধানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর এভাবে জান মালের ক্ষতি সাধন না করে আমাদের স্থায়ী বিকল্প কিছু ভাবা দরকার।

প্রিয় রাষ্ট্রপতি, জাতির বিবেক হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে এখনি অনুরোধ করেন নির্বাচনী সকল তফসিল অবিলম্বে স্থগিত ঘোষণা করে জাতিকে এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে। দুই নেত্রীকে আপনি আহ্বান জানান জাতীয় সংলাপের দরজা আপনার উদ্যোগে উন্মোচিত করার সাথে সাথে সকল রাজনৈতিক একশন স্থগিত করে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের জানমালের নিশ্চয়তা বিধান করতে। জাতির অভিভাবক হিসেবে সশস্র বাহিনীকে আপনার জাতীয় সংলাপে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানাতে পারেন। আমার বিশ্বাস যে সশস্র বাহিনী ভোটার আইডি ও তালিকার মতো অসাধারণ এক কাজ করে ধন্য হয়েছে, এই ক্রান্তি কালে জাতীয় বাহিনী হিসেবে তারা আপনার পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীকে আপনি আহ্বান করেন, তার সর্বদলীয় সরকারের কাঠামো জাতীয় সংলাপ চলাকালীন সময়ে স্থগিত রাখতে।সাংবিধানিক সংকট এড়াতে রুটিন মাফিক ওয়ার্কে সীমাবদ্ধ রাখতে। অথবা জাতির বিবেক হিসেবে সমস্ত কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রিক করে দেয়ার জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে আপনি জাতীয়ভাবে আহবান জানাতে পারেন।

প্রিয় রাষ্ট্রপতি, আপনার উদ্যোগে জাতীয় সংলাপ চালু হলে সকল রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক, পলিটিকাল সাইনষ্টিষ্ট, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী আর দাতা দেশ সমূহের সহায়তায় অবশ্যই এই সংকট উত্তরণের সুন্দর একটা পন্থা বেরিয়ে আসবে, যেখানে দুই নেত্রীর ইজ্জতের ও জেদের কোন পরাজয় হবেনা, অথচ জাতি ভয়াবহ এক সংকট থেকে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি, এই জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে বিদ্যমান নির্বাচনকালিন সরকারের এই জঞ্জালের সূত্রপাত থেকে বিকল্প স্থায়ী ব্যবস্থা ও পন্থার সুপারিশও বেরিয়ে আসবে, যাতে আগামীতে যেই ক্ষমতায় আসুক, পাঁচ বছর পর সরকার পরিবর্তনের সময় আর কোন বাসে, ট্রেনে পেট্রোল ছুড়ে মারা হবেনা, বাড়ী,ঘর, বাসা,দোকান, রাস্তা ঘাটে কাউকে জ্বালিয়ে মারা হবেনা।

মাননীয় রাষ্ট্রপতি, আপনি কি সাহসের সাথে একটু ভেবে দেখবেন। প্রকৃত বীর যোদ্ধাতো সেই, যে জাতির ক্রান্তি কালে সাহস ও ধৈর্যের সাথে সকল পক্ষকে এক টেবিলে নিয়ে এসে ধ্বংসের বিপরীতে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়। জয় হউক মাননীয় রাষ্ট্রপতির, আল্লাহ আপনার সহায় হউন।

Salim932@googlemail.com
3rd December 2013, London.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *