যে কারণে তারেক রহমান খালাস এবং গ্রেনেড মামলা থেকেও রেহাই পাবেন যেভাবে

যে কারণে তারেক রহমান খালাস এবং গ্রেনেড মামলা থেকেও রেহাই পাবেন যেভাবে

আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জয়ের মধ্যে গত ১৬ নভেম্বর লন্ডনের হিলটন লেন পার্ক ইন হোটেলে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।এ সংবাদ প্রকাশের পর সারা বিশ্বের অগণিত বাঙালি পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত টেলিফোন, ইমেইল, ম্যাসেজ আসতে থাকে।

শতকরা ৯৫% পাঠক, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তারেক রহমানের মধ্যেকার বৈঠকটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্ঠিকোন থেকে দেখেছেন। তাদের কেউ কেউ আবার আমাকে জানিয়েছেন, যদি বৈঠকটি পুরোপুরি নাও হয়ে থাকে, তথাপি বাংলাদেশের জনগণ ও আগামীর সুন্দর স্বপ্নের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্যে এই দুই তরুণের মধ্যেকার বৈঠক একান্তই জরুরী। যুগের পর যুগ চলে আসা নেগেটিভ ও ঘুণে ধরা পুরনো রাজনীতির বিপরীতে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক এবং গুণগত ধারার রাজনীতির প্রবর্তন একান্ত জরুরী। তবে দু একজন বৈঠকটি নিয়ে গথ বাঁধা সন্দেহ এবং বিচারক, আসামী, কিউসি ব্যারিস্টারের মতো নানান প্রশ্নের অবতারণা করে সন্দেহ করে বসে আছেন। এরকম সন্দেহ প্রবণ লোক প্রত্যেক সমাজে সকল সময়ই আছে। এটা খারাপ কিছু না। পৃথিবী ওলোট পালট হয়ে গেলেও সন্দেহ রোগীদের আদি ও অকৃত্রিম এই রোগ কখনো দূর হয়না।যাই হউক, আমার বক্তব্য সেইসব প্রশ্নের জবাবের অবতারণা নয়।

 

সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমান জানেন বাংলাদেশের রাজনীতির নাড়ি-ভুরি ও আমাদের তাবৎ জনগণের হাল হকিকত।আর সেই জানা থেকেই কাউকে না জানিয়েই সুযোগের মোক্ষম সময়ে দুজনের একান্তে সাক্ষাত- যে বৈঠকের হোম ওয়ার্ক প্রায় তিন মাস আগে থেকেই চলে আসছিলো। দুজনের বৈঠকের পরের দিনই ছিলো আদালতে তারেক রহমান ও মামুনের মানি লন্ডারিং মামলার নির্ধারিত রায়ের দিন। সঙ্গত কারণেই দুজনের মধ্যেকার বৈঠকের গুরুত্ব যেমন ছিলো দুজনের কাছে অনেক বড়, সেই সাথে তারেক রহমানের জন্য ছিলো আরো অধিক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ।

তারেক জানেন, বিএনপির রাজনীতির কোরামিন ইনজেকশন হলেন তিনি। তৃণমূলের নেতারাও তারেক রহমানের জন্য জীবন বাজী রাখতে প্রস্তুত। সমগ্র বাংলাদেশের আনাচে কানাচে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে ক্ষমতাসীনদের জন্য ঈর্ষনীয় কারণ হয়ে আছে।বিএনপির নেতারা এবং তৃণমূলের তারেক অনুরাগীরা কেবল আবেগ আর উচ্ছ্বাস দিয়ে তারেকময় ও তারেকানুরাগী হয়ে আছেন। তারেক রহমান আগামীর বাস্তব অবস্থার পুরো চিত্র যখন মিলিয়ে দেখেন, তখন বর্তমান নেতৃত্বের এই দূরদর্শিতার অভাবের চিত্র চোখের সামনে দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। অথচ ভেতরের প্রকৃত চিত্র না পারছেন বলতে, না পারছেন হাই কমান্ডের কাছে তুলে ধরতে।

পক্ষান্তরে সজীব ওয়াজেদ জয় তারেক রহমান এবং বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের অদূর দর্শিতার চিত্র নিজ চোখে অবলোকন করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইলেন। সজীব চান নিজের ক্যারিশম্যাটিক লিডারশীপ ও অর্গেনাইজিং স্কীলে নির্বাচনে বিএনপিকে এনে বাজীমাত করে দিতে। তারেক রহমান চান নিজের মামলা একের পর এক বেকসুর খালাসের মাধ্যমে নিজের ক্লিন ইমেজ ফিরিয়ে নিয়ে আসা, যাতে আগামী নির্বাচনে কিংবা পরবর্তী নির্বাচনে ( ১০ বছর সময়ের মধ্যে)নিজের প্রার্থিতায় কোন ধরনের আইনি বাঁধা যাতে না আসে।

যোজন যোজন দূরত্বে দুজনের টেলিফোন সংলাপে মানি লন্ডারিং মামলায় খালাস হলেও প্রধান বাধা হয়ে আছে গ্রেনেড হত্যা মামলা, যার উপর তারেক রহমানের আগামীর রাজনীতির ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে। সেজন্যেই দরকার পড়ে সাক্ষাতের, যা তাদের দুজনের কাছেই কাঙ্ক্ষিত। কোন ভাবে রায় হয়ে গেলে কিংবা দীর্ঘ সাজায় বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসা না আসায় তারেক রহমানের দীর্ঘ সাজা মওকুফ প্রসেসিং করতে করতেই বিএনপির সময় চলে গেলে তারেক রহমান নির্বাচনের ক্ষেত্রে অযোগ্যতায় আরো পিছিয়ে পড়বেন আরো পাঁচ বছর, তখন হয়ে যাবে সাকুল্যে ১৫ বছর। আর বাংলাদেশের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখন কোথায় যে কার সাথে ঐক্য গড়ে কার বারোটা বাজিয়ে দেয়, তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেনা।সুতরাং তারেক লন্ডনে অসুস্থ হলেও রাজনীতির এই জটিল হিসেব-নিকেশে বিব্রত ও হতাশা বোধ করেন, বিশেষতঃ যখন গ্রেনেড হত্যা মামলার কার্য এগিয়ে নিয়ে আসা হয়।

রাজনীতির জটিল এই দুই হিসেবের বাইরে মার্কিন এবং ভারতীয় দূতদের ম্যাসেজ দুই তরুণের কাছে যথা সময়ে পৌঁছে যায়, আগামীর রাজনীতি সংলাপ এবং সমঝোতার মাধ্যমে সম্পন্ন করার।

এদিকে সজীব ওয়াজেদ জয় জানেন তার মা শেখ হাসিনা যেকোনভাবেই হউক সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা কল্পে নির্বাচন করতে চান। তত্বাবধায়ক নামক বিএনপির দাবীর মৃত হস্তী কিছুতেই বাংলাদেশে হাসিনা আর ফিরিয়ে নিয়ে আসবেননা। বিদেশীরাও যখন পুরোপুরি বুঝে যায়, হাসিনা ডু অর ডাই গেইম খেলবেন, তবুও তত্বাবধায়ক মানবেননা। সেনাবাহিনীর সাথে আন্তঃ-বাহিনীর বৈঠক এবং আন্তঃ-বাহিনীর ব্রিফিং এ মার্কিন দূত ম্যাসেজ দিয়ে দেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক উথাল হাওয়ায় সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ ও নিরাপদ অবস্থানে থাকতে হবে। জাতি সংঘ অফিস থেকে সেনাবাহিনীর কাছে এই ক্লিয়ার ম্যাসেজ চলে আসে।হাসিনার আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায় এসে পড়ে সজীবের ঘাড়ে-যে করেই হউক বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার।

রাজনীতির চালচিত্রের এই খেলা থেকেই দুই তরুণের বৈঠক আর সে বৈঠকের প্রাথমিক ফলের ভোগকারী হলেন তারেক রহমান। মানি লন্ডারিং মামলা থেকে বেকসুর খালাস। আর এই খালাসে হত-বিহ্বল আওয়ামীলীগ, বিএনপি, আমজনতা আর খোদ আনিসুল হকও। কারণ উপরের ও বাইরের ঐ উল্কার বেগে দ্রুতগামী ট্রেনের যাত্রী এবং ড্রাইভার কেবল সজীব ও তারেক।একমাত্র সাক্ষী আর আদেশ তামিলকারী জজ সাহেব। তৃতীয় আর কেউ নন। সেজন্যেই নানা মুনির নানা মত। দুজনের মধ্যকার বৈঠকের দীর্ঘমেয়াদী ফল এখন ভোগের অপেক্ষায় আছেন আওয়ামীলীগ এবং তারেক রহমান নিজেও। যদি বিএনপি নির্বাচনে চলে আসে, তবে গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমান হয়ে যাবেন খালাস। আওয়ামীলীগ তাদের সাজানো বাগানে নির্দ্বিধায় ফিরে আসবে আবার। দেশ বিদেশে এই নির্বাচন নিয়ে কোন প্রশ্ন আসবেনা। দুজনের বৈঠকে গোপন যে ফ্রুট নোট এসেছে, সেখানে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অত্যন্ত সুবিধা জনক অবস্থানে থাকবে, সন্দেহ নেই। নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও আচরণের উপর।তার আগাম পজিটিভ বার্তা ছিলো এর ফলে দুই মহাসচিবের বৈঠক-কিন্তু সেখানেও এই দুই মহাসচিব কিংবা তাদের অনুসারীরা ব্যর্থ হলেন দুই তরুণের পজিটিভ রাজনীতিকে ধারণ করতে।

দুই দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী- যারা এই দুই তরুণের পজিটিভ ইমেজ ও রাজনীতির কায়েমি বিরোধী, তারা নতুন নতুন চাল চেলে দুই নেত্রীকে করে তুলেছে আরো অসহিঞ্চু, যাতে দুই তরুণের পজিটিভ ঐক্যের রাজনীতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।তারা জানে বিএনপির নির্বাচন বর্জনে তারেক রহমানের গ্রেনেদ হত্যা মামলা নির্বাচনের পর পরই দ্রুততার সাথে নাড়া চাড়া হবে।আর তারা তাই চায়।

রাজনীতির গুটির চালে দুই তরুণ অনেক পোক্ত খেলোয়াড় হলেও কায়েমি রাজনীতিবিদদের কাছে এখনো এই দুই তরুণ অনেক পেছনে, একথা মানতেই হবে। বিশেষত তারেক রহমানের তুলনায় বিদেশ ফেরত সজীব অনেকটাই ঐ গিরিঘিটি চাল বুঝতে সময় লাগবে। তার উপর তারেক রহমান বিদেশে- কুশীলবরা এই দুই মোক্ষম সময় ও অবস্থা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে করে তুলতে চায় উত্থাল ও অস্থিতিশীল। এতে সজীবের ঐক্যের কিংবা তারেকের তৃণমূলের রাজনীতি মাঠে মারা যাক, তাতে তদের কিছুই আসে যায়না। কারণ এই সম্প্রদায় চায় তাদের স্বার্থ হাসিল, দুই নেত্রীর ঘাড়ে সওয়ার হয়ে এই সব শ্বেত হস্তী বাংলাদেশের পীঠ করে তুলছে রক্তাক্ত ও উন্মাতাল।

বিএনপিকে এখন গভীরভাবে ভাবতে হবে, তাদের আগামী দিনের তরুণ জাতীয়তাবাদীর প্রাণ, সঞ্জীবনী শক্তি তারেক রহমানকে নিরাপদ ও মামলা হামলা ও অপবাদের সাজা থেকে মুক্ত রেখে তারেকের জন্য আগামীর রাজনীতির বন্ধ দরজার সকল পথ-ঘাট খোলা ও অবারিত করে রাখবেন, নাকি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এই সরাবান তহুরার সঞ্জীবনী শক্তির রাজনীতির পথ কণ্টকাকীর্ণ ও পংক্ষিল করে তুলবেন- বিএনপিকে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। কেননা বিএনপির সামান্য ভুল আর আবেগের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশ হারাবে এক অসম সাহসী, জাতীয়তাবাদের অদম্য এক শক্তি, তারুণ্যের প্রতীক তারেক রহমানের তৃনমূলের রাজনীতি, যা এদেশের জন্য সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিবে। কেননা তারেক রহমানের অনুপস্থিতে একতরফা গেইম খেলার সুযোগে প্রতিপক্ষ ভালমতোই গোলপোস্টে বল নিক্ষেপ করবে, তাতে কোন সন্দেহ নাই।

আমাদের আগামী দিনের সুন্দর রাজনীতির জন্য এই দুই তরুণের সপ্রতিভ উপস্থিতি ও সমানভাবে অংশগ্রহণ একান্তই জরুরী।

পাদটিকাঃ-গত বৈঠকের লেখায় ভুলবশত: পার্ক ইন এর জায়গায় হয়ে গেছে পার্ক লেন, আসলে হিলটন লেন পার্ক ইন হবে। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য দুঃখিত ।

দুই তরুণের বৈঠকের খবরের লিঙ্ক ঃ http://www.priyo.com/blog/2013/11/23/41935.html

(কাল থাকছে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তারেক রহমানের কাছে খোলা চিঠি -)

Salim932@googlemail.com
29th November 2013, London.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *