প্রফেসর রাজেস গোপালান একজন ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল এনালিস্ট, জেএনইউ দিল্লীতে ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স এর প্রফেসর। সম্প্রতি ইরানের নিউক্লিয়ার ডিল এগ্রিম্যান্ট নিয়ে তার বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া সহ বিশ্বের নামী দামী জার্নালে।সেখানে তিনি লিখেছেন,ইরানের নিউক্লিয়ার ডিল এগ্রিম্যান্টে আপাত: দৃষ্টিতে বারাক ওবামা তার আন্তর্জাতিক ফরেন পলিসিতে জয়কারী হলেও, তিনি বলছেন, মূলত: এই এগ্রিম্যান্টে শর্ট টার্ম ডিলে ইরান বেনিফিট হলেও এর দীর্ঘ মেয়াদীকালে এই এগ্রিম্যান্ট ইরানের জন্য ভয়ানক পরিণতি, এমনকি আমেরিকার সাথে ছোট ছোট রাষ্ট্র সহ মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া মহাদেশ যারা সহযোগিতা নিয়ে আছে, দীর্ঘ মেয়াদী এই ডিলের প্রেক্ষিতে সেই সব দেশের জন্য ভয়াবহ এক অবস্থা নিয়ে আসতে পারে।এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদী কালে এশিয়া অঞ্চলে পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যেও ছড়িয়ে পড়বে বলে তার আশংকা।
তিনি লিখেছেন, ইরান অবশ্যই এই টেম্পোরারি ডিলে বিজয় অর্জন করেছে সন্দেহ নেই। কারণ ইরান দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছে, তারা শান্তির জন্য, তাদের এনার্জি উৎপাদনের জন্য ইউরেনিয়াম উৎপাদনের নীতিগত ও আইনগত অধিকার রাখে এবং তারা তা করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ইউরেনিয়াম উৎপাদন তথা নিউক্লিয়ার নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি(এনপিটি)কোনভাবেই লঙ্ঘন করছেনা। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের ২০০২ সালে ইরানের নাজাতে অত্যন্ত কড়া গোপনীয়তায় ইউরেনিয়াম উৎপাদনের সত্যতা আবিষ্কার করেছে।এনটিপিতে ইরান একজন স্বাক্ষরকারী দেশ।সুতরাং সেই ট্রিটি মানতে বাধ্য।
ইতিমধ্যে ইউএন সিকিউরিটি কাউন্সিল ইরানের বিরুদ্ধে বহু রেজুলেশন পাশ করেছিলো, যার কোন রেজুলেশন ইরান মেনে চলেনি। বরাবরের মতোই বিরোধিতা করে আসছিলো।
ইরান এই নিউক্লিয়ার ডিলে সাইন করার পরে ইউএস সেক্রেটারি জন কেরি বলে আসছেন, এই শর্ট টার্ম এগ্রিম্যান্ট কোনভাবেই ইরানকে ইউরেনিয়াম উৎপাদনের কোন গ্যারান্টি দেয়নি, বরং এটা সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক ছয় মাসব্যাপী এক এগ্রিম্যান্ট। পক্ষান্তরে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভেদ বলছেন, ইরান বরং ইউরেনিয়াম উৎপাদনের অধিকার এই এগ্রিম্যান্টে মিউচিয়ালি ডিফাইন্ড টু এনরিচম্যান্ট প্রোগ্রাম বলে ক্লিয়ার মন্তব্য করেছেন, যা তাদের ইউরেনিয়াম চর্চা শান্তির জন্য অধিকার খর্ব করেনি বলে জানিয়েছেন। আসলেই এই ডিলে ইরানের ইউরেনিয়াম এনরিচম্যান্ট প্রোগ্রাম এখন অফিসিয়াল স্বীকৃতি দেয়া হলো। পক্ষান্তরে জাতি সংঘের সকল রেজুলেশন পেপারগুলো ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু সবচাইতে বড় সন্দেহ ও মোটা দাগের প্রশ্ন এখানে দেখা দিয়েছে, যা উহ্য রয়ে গেছে, ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে এই ডিলের কি হবে বা কিভাবে এই এগ্রিম্যান্টকে দেখা হবে? তার কোন কিছুই এখানে পরিষ্কার করা হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, এই ছয়মাস সময়ের ভিতরে অন্যান্য সকল আউটস্ট্যান্ডিং সমস্যা সমূহ আইডেন্টিফাইং করে ইরানের নিউক্লিয়ার কর্মসূচীর ব্যাপারে সকল ব্যবস্থা নেয়ার পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে বা মূল্যায়ন করা হবে, কিন্তু এই ছয়মাস সময়কালীন পরে কি ভাবে এই মূল্যায়নকে কার্যকারিতা করা হবে বা একে অন্যকে সহযোগিতা করা হবে এনপিটি ট্রিটি কার্যকর করতে, সেটাই রয়ে গেছে এই এগ্রিম্যান্টে একেবারে অসম্পূর্ণ।
গালফভূক্ত দেশ সমূহ শিয়া অধ্যুষিত ইরানের ইউরেনিয়াম এনরিচম্যান্ট প্রোগ্রাম নিয়ে বলা যায় এক ডেডলি ষ্ট্রাগল এর মধ্যে দিয়ে আসছিলো, যা এই স্বল্প সময়কালীন এগ্রিম্যান্টকে তারা সমস্যা সমাধান হিসেবে শুরু করতে যাচ্ছে।যদিও সৌদি আরব এর আগে ইরানের এই প্রোগ্রামে বিকল্প হিসেবে নিজেরাও ইউরেনিয়াম উৎপাদনের হুমকি দিয়ে বসেছিলো, যুক্তি হিসেবে সৌদিরা পাকিস্তানের ইউরেনিয়াম শক্তি লাভের ও গুড রোল হিসেবে উপস্থাপন করেছিলো। অথচ এই ডিল এর দীর্ঘ মেয়াদী টেনশন গালফভূক্ত দেশ সমূহ এবং ইসরাইলের মধ্যেকার টেন্স আরো বাড়িয়ে দিবে, যা ইসরাইল অনেক আগে থেকেই তাদের সিকিউরিটি সমস্যায় ইরানকে চিহ্নিত করে ইরানের এই ইউরেনিয়াম প্রকল্প বাতিলের ব্যাপারে সামরিক হস্তক্ষেপে দাবী জানিয়ে আসছিলো। এই ডিল হওয়ার পরেও ইসরাইল এখন ওবামা প্রশাসনের উপর সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আমেরিকান ইসরাইল লবি ( ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয়) কংগ্রেসে এখন ওবামার বিরুদ্ধে এই ডিল বাতিলের জন্য বিল আনার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে।কারণ ইসরাইল এখন আর ওবামাকে ট্রাস্ট করতে পারছেনা, ইরানের ইউরেনিয়াম প্রকল্প ধ্বংসে ইসরাইল ওবামার উপর নাখোশ হয়ে বরং এই মেডিটারিয়ান-প্যাসিফিক অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার বন্যা বইয়ে দিবে, ছয়মাস পর যখন এগ্রিম্যান্ট কি হবে বলা হয়নি। এতে আমেরিকান অন্যান্য এলাইন্স সহ এশিয়া অঞ্চলও এফেক্টেড হয়ে যাবে, যা শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
প্রফেসর রাজগোপালান তার নিবন্ধের শেষে এসে মন্তব্য করেছেন এই ভাবে, এই আগামীর টেন্স ও বড় ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দিল্লীকে তার আমেরিকান এলায়েন্সের সাথে এক হয়ে কাজ করতে হবে, যাতে দীর্ঘ মেয়াদী এগ্রিম্যান্ট নিয়ে কাজ করা যায়, যাতে প্রকৃত পক্ষেই দেখতে হবে তেহরান সত্যি সত্যি শান্তির জন্য ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে, নিজের ইউরেনিয়াম ক্যাপাবিলিটি অর্জন করছে কিনা, আর তা দেখেই স্বল্প সময়ের চাইতে দীর্ঘমেয়াদী এগ্রিম্যান্ট সম্পন্নের জন্য কাজ করা এবং সেটাই হবে আমেরিকা, তার সহযোগী, সৌদি আরব সহ এশিয়া অঞ্চলের জন্য কম ঝুঁকি পূর্ণ এবং শান্তি পূর্ণ।
Salim932@googlemail.com
30th November 2013.London.