এ বছর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ইন্ডিয়ান ডিফেন্স স্টাডিজ এন্ড এনালাইসিসের উদ্যোগে কনফারেন্স হলে ইন্ডিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া ও রিজিওনাল শীর্ষক ৭ম সাউথ এশিয়ান কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো, যা গত ১লা নভেম্বর সমাপনী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইন্ডিয়া ছাড়াও পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভুটান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকার ডিফেন্স বিশেষজ্ঞ ও এনালিস্টরা তাদের প্রবন্ধ ও বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ থেকে ডিফেন্স বিষয়ক কোন এক্সপার্ট এই কনফারেন্সে অংশ গ্রহণ করেছিলেন কিনা, ইন্ডিয়ান ডিফেন্স স্টাডিজ এন্ড এনালাইসিসের প্রেস রিলিজে এর কোন উল্লেখ নেই।
প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি প্লেনারি সেশনে এক্সপার্টরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। সব কটা দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক এক্সপার্টরাই উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্ডিয়ার আরো অধিক নেতৃত্ব ও ভূমিকা জোরদার এবং প্রতিবেশীদের জন্য দরজা আরো অধিকতর ভাবে খুলে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে।
৭ম সাক কনফারেন্সে উপস্থিত এক্সপার্টরা সকলেই ইন্ডিয়ার বর্ডার সিকিউরিটির গুরত্বারোপ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা বৃদ্ধির উপর বক্তব্য উপস্থাপন, সুপারিশ করেছেন বলে প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ থাকে যে, ইন্ডিয়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী ও সুসংহত গণতন্ত্রের এক বৃহৎ দেশ। আর চীন হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে এক উদীয়মান ব্যাঘ্র, যে পেট্রলিয়াম, তৈল সাম্রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন এক আধিপত্য বিস্তারে অগ্রগামী দেশের তালিকায় উঠে এসেছে, যেখানে ইন্ডিয়ার সাথে চীন তার এই বাণিজ্যের ষ্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে সক্রিয়। সম্প্রতি উভয় দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে এ বিষয়ে মেমোরেন্ডাম চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।
প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, ৭ম সাক কনফারেন্সের প্রথম দিনের সেশনে কনফারেন্স চেয়ার এম্বাসাডার শিলকাট শর্মা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যোগাযোগের উপর গুরত্বারোপ করেছেন, বিপরীতে প্রফেসর মুন্নী ডিওয়েল্ট চায়নার ভূমিকা ও সার্কে ঢুকে পড়ার বিষয়ে আর্গুমেন্ট করে বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অগ্রগতি ও সদস্য দেশসমূহের মধ্যে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত গতি আনয়ন দূরহ হয়ে আছে। প্রফেসর আই এন মুখার্জী এবং ডঃ নাগেশ কুমার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর অধিক গুরত্বারোপ করে সুপারিশ করেছেন।তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাঁধা ভারতের ভূমিকা এবং নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার। ডঃ কুমার সার্ক দেশ সমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক অধিক জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন।
সবচাইতে মজার ব্যাপার এবং চমৎকার বক্তব্য এসেছে দ্বিতীয় দিনের সেশনে, যা ইন্ডিয়ার চাওয়া আর পাওয়ার সাথে একাকার হয়ে আছে। প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, সম্মেলনে আফগানিস্তানের মিঃ মিয়াখেল আফগানিস্তানের যুদ্ধ উত্তর আফগানিস্তানের উন্নয়নে ইন্ডিয়ার ভুমিকার ও সহায়তার উপর গুরুত্বারোপ করে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০১৪ সালেও যুদ্ধোত্তর সময়ে অত্র অঞ্চলের উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইন্ডিয়ার ভুমিকা অব্যাহত থাকবে, যদিও অনেক নেগেটিভ তথা মিস পারসেপশনের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে এই অঞ্চলে শান্তি, সিকিউরিটি, নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের আরো ব্যাপক ভুমিকা অনস্বীকার্য। সেই সাথেমিয়ানমারের এম্বাসাডার ইউ ডেনজিল অডিয়েন্সকে ইন্ডিয়ার প্রশ্নে মায়ানমারের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন, তিনি আশা করেন, অত্র অঞ্চলের শান্তি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রশ্নে ইন্ডিয়া আরো ব্যাপক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে এসে সার্ক অঞ্চলে জনগনকে উন্নয়নের সূত্রে গাঁথবে।ভূটানের প্রতিনিধি মিঃ প্রেমা থেনজিল যদিও ইন্ডিয়া ও চীনের প্রশ্নে সতর্ক বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তথাপি ভুটানের প্রতিনিধি ক্লিয়ারলী ভুটানের জনগণের জীবন মান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইন্ডিয়ার ভূমিকার প্রতি ভারতীয় জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করেন।
মালদ্বীপের প্রতিনিধি মোহাম্মদ নাহি নাদীম তার দেশের রাজনৈতিক উত্থাল হাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, নিজ দেশের মিডিয়া ইন্ডিয়ান কন্ট্রিবিউশন অত্যন্ত দুর্বলভাবে হাইলাইটেড করছে। তার মতে, রিজিয়নের শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন, নিরাপত্তার প্রশ্নে মিডিয়া এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করতে পারে।
সমাপনী সেশনে সকল এক্সপার্ট ও বক্তারাই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে আরো যোগাযোগ এবং সহযোগিতা অব্যাহত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। নিজেদের জনগণের মধ্যে একে অন্যকে জানার ও উপলব্ধি করার জন্য আরো ব্যাপক প্রচারণা ও কোঅপারেশনের পথে নেগেটিভ অন্তরায় সমূহ দূরীকরণের উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়। সাউথ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে টেক্সট বুক কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রচারণা, একে অন্যের ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক যোগসূত্র ও নেতিবাচক ব্যারিয়ার দূরীকরণে আরো প্রচারণার সুপারিশ করা হয়।
সম্মেলনে সকলেই একবাক্যে ঐক্য পোষণ করেছেন এই বলে যে ইন্ডিয়ার ফরেন পলিসি প্রশ্নে রিজিওনাল দেশ সমূহের সাথে বর্ডার সিকিউরিটি প্রশ্নে ইন্ডিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরত্বের সাথে সকলেই স্বীকার করেছেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ার ভূমিকা ও নেতৃত্বের প্রশ্নে যে অসহিঞ্চুষতা ও ভুল বুঝাবুঝির উপাদান সমূহ রয়েছে, তা দূরীভূত করে ইন্ডিয়াকে অত্র অঞ্চলের লিডারশীপের ভূমিকায় আরো অবতীর্ণ হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, মিডিয়া এক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, নিরাপত্তার প্রশ্নে ইন্ডিয়ার লিডারশীপ অপরিহার্য এবং ইন্ডিয়াকে আরো এগিয়ে আসতে হবে বলে ডিফেন্স স্টাডিজ এনালাইসিসের প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে।
(সূত্র: প্রেস রিলিজঃডিফেন্স স্টাডিজ এন্ড এনালাইসিস, নয়াদিল্লী, ১ নভেম্বর ২০১৩)।
Salim932@googlemail.com
13th November 2013, London.