Home » কলাম » ইকোনোমিক টাইমস অব ইন্ডিয়াঃ চায়নার টার্গেট ওয়েল মার্কেট আফ্রিকা টু অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের নির্বাচন

ইকোনোমিক টাইমস অব ইন্ডিয়াঃ চায়নার টার্গেট ওয়েল মার্কেট আফ্রিকা টু অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের নির্বাচন

দক্ষিণ এশিয়ার এমার্জিং টাইগার চায়না চাচ্ছে ওয়েল রিফাইনার এক্সপ্লোরিং এক নয়া মার্কেট, শিপিং সারপ্লাস ওয়েল প্রোডাক্ট, জেট ওয়েল সহ রিফাইনারী বিজনেস রুট বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল রুট হয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা হয়ে একেবারে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এক গ্লোবাল ট্রেডিং হাউস, যার রিফাইনারী স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর।

 

চায়না বর্তমানে বিশ্বের লার্জেস্ট ওয়েল ইমপোর্ট-এর দেশে পরিণত হতে চলেছে। চীনের নেতৃত্বে বা চীনের এই এম্বিশিয়াস প্রকল্পে তেল সম্পদের অধিক রুট খোলা মানেই হলো চায়না বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শিফট এর গিয়ারে পা রাখা, যার মানে হলো প্রয়োজনের সময় বার্গেনিং পয়েন্টে কতিপয় ট্রান্সপোর্ট আর জেট ফুয়েলের কম যোগানের , যা অধিকতর সেনসিটিভ এক ওয়েল মার্কেটের উর্ধ্বগতির চাহিদার যোগান চায়না সরবরাহ করে তার অর্থনীতির একচ্ছত্র এক ইমার্জিং টাইগারের স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে চায়নার ওয়েল রিফাইনারি ষ্টেশন খোলা মানেই হলো চায়নার বিগেস্ট রিফাইনারি সিনেকপ কর্পোরেশন এর সাথে প্রতিবেশী ট্র্যাডিশনাল মার্কেট সহ ভিয়েতনাম ও হংকং এর কার্গোসেল এর সাথে প্রতিযোগিতাই শুধু নয়, এই সারপ্লাস কার্গোসেলের ট্রেডিংও চীনের দখলে চলে যাওয়া।

পরিসংখ্যান বলছে, চায়নিজ ডিজেল এক্সপোর্ট ৩.৭ মিলিয়ন ব্যারেলস এ উন্নীত হবে আগামী বছরের মধ্যে, যা এ বছর ২০১৩ সালের প্রায় দ্বিগুণের সমান।

বিশ্ব বাণিজ্যের কর্ণধার ও এক্সপার্টদের মতে, চায়নিজ রিফাইনারি ষ্টেশন ও নয়া বাণিজ্য, শিপম্যান্ট, কার্গো প্রভৃতির আগমনে মূল্য যেমন আরো কম হয়ে যাবে, যা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউএসের অধিক মূল্যের বিপরীতে চাইনিজ রিফাইনারি, শিপম্যান্ট, কার্গো প্রভৃতি তুলনামূলকভাবে সস্তা হতে বাধ্য যা বিশ্ব বাজারে নয়া এক ব্যবসায়ের ধরন ও নীতি নিয়ে আসবে।

সূত্র আরো বলছে, বিগত ২০১২ সালে চায়নার রিফাইনারি ক্যাপাসিটির প্রতিদিন ১২ মিলিয়ন ব্যারেলসের কাছাকাছি, যা ২০১৩ ও ২০১৫ সালের মধ্যে ৩ মিলিয়ন বিপিডিতে উন্নীত হবে। চায়নার অত্যন্ত ক্লোজড ডোর অফিসিয়াল সূত্রে এ তথ্য অবগত হওয়া গেছে।

এদিকে রয়টার জানিয়েছে, সরকারী সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হিসেব মিলিয়ে তারা দেখছে, ওভারওল চায়নার ফুয়েল ডিমান্ড গত মাস পর্যন্ত ছিলো ৯.৭৯ মিলিয়ন বিপিডি।

এদিকে জেবিসি এনার্জি ইন্ডিয়া ইকোনোমিক টাইমসকে কনফার্ম করেছে, চায়নার গ্যাসোলিন ও ডিজেলের ডিমান্ড নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১৭,০০০ বিপিডি থেকে বাড়িয়ে ৭১৮,০০০ বিপিডি তে উন্নীত করার পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চায়না কাজ শুরু করেছে।

চায়নার এতো বৃহৎ এম্বিসিয়াস ওয়েল বাণিজ্য, ফুয়েল রিফাইনারি ষ্টেশন তখনি বিশ্ববাণিজ্যে ওলট পালট করে দিবে, যদি চায়না বাংলাদেশের সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন ও কন্টেইনার রিফাইনারি সাব-ষ্টেশন স্থাপন করতে সক্ষম হয়।তার আগ পর্যন্ত চায়না চায় ইন্ডিয়ার সহযোগিতায়, ক্ষেত্র বিশেষে যৌথ ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক তার তেল ও ফুয়েল বাণিজ্যের গতি অব্যাহত ও নিরাপদ রেখে, সুদূর আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত সেই বাণিজ্যের দরজা অবারিত রাখতে। আর চায়নার সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন তখনি হবে, যদি বাংলাদেশের গদিতে চায়নার নির্ভরযোগ্য সরকার আসীন হয়। আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি যেই ক্ষমতায় আসুক, বার্গেনিং পয়েন্টে চায়নার ব্যবসায়িক স্বার্থের অনুকূলে অবস্থান নিয়ে যে আসতে হতে পারে, সেটাই এখন আর বলাই বাহুল্য। কেননা চায়না ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ার সাথে ব্যবসায়িক, বাণিজ্যের এই নয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে নিয়েছে। সম্প্রতি মনমোহন সিং চায়না সফর করে দুই দেশের বাণিজ্যের প্রশ্নে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। চায়নার এই অয়েল সাম্রাজ্যের এম্বিসিয়াস প্রকল্পের পথে প্রধান কাটা মার্কিনীরা, যে কারণে চায়না ও ভারত নিজেদের স্বার্থের প্রশ্নে এক ও অভিন্ন অবস্থানে এসেছে। মার্কিনীদের কাছে এমন তথ্য আছে বলেই বাংলাদেশ প্রশ্নে শেষ মুহূর্তে এসে আমেরিকার উপমহাদেশের ক্যাপ্টেন ভারতকে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সাথে সমানভাবে নেগোসিয়েশনের টেবিলে নিয়ে আসে। ভারতের স্বার্থের প্রশ্নে মার্কিনীরা শেষ মুহূর্তে অবশ্যই আবার সেই আগের এক অবস্থানে চলে আসবে, সন্দেহ নেই। ভারত তা জানে বলেই চীনকে পাশে পেতে চায়।

 

২০১৩ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক স্ট্যাটিস্টিক মতে দেখা যায়, চায়নার অর্থনৈতিক অগ্রগতি টার্গেট ৭.৫ পার্সেন্ট থেকে কমে এসেছে, যা তাদের বিগত ২০ বছরের মধ্যে দুর্বল এক অগ্রগতির স্বাক্ষর বহন করে। তার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান ডিজেলের চাহিদা বৃদ্ধি, হেভি ভ্যাহিকলস ও ফ্যাক্টরির ফুয়েল চাহিদা বৃদ্ধি, তবে ভালো যে খবর তাদের জন্য গ্যাসোলিনের ব্যবহারের স্থিতি। চায়না চাচ্ছে আগামী দশ বছরের মধ্যে ডিজেলের নেট এক্সপোর্টার হিসেবে আবির্ভূত হতে।চায়না তাদের রিফাইনারি টিপিক্যালী ৩০ থেকে ৫০ পার্সেন্ট উৎপাদনের টার্গেট এর ফলে ডিজেলের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি প্রয়োজন পড়েছে বলেই চায়নার ঐ সূত্র উল্লেখ করেছেন।

মন্তব্য: ওয়েল এক্সপোর্ট বাণিজ্যের কনসালট্যান্সীর সাথে জড়িত একজন এক্সপার্ট বলেছেন, আজকের ফুয়েল ও রিফাইনারি ও অয়েল বাণিজ্যে চায়নাকে মেজর এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টার হিসেবে দেখা না হলেও বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র উপকূল কেন্দ্রিক ইন্ডিয়ার সাথে মিলে আগামী দশকে বিশ্বের বৃহত্তম এক অয়েল বাণিজ্যের অংশীদার, ফুয়েল রিফাইনারির বিশ্বের বৃহৎ স্টেশন সহ কার্গোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও শিপম্যান্টের কনসেশন, হান্ডলিং, শিফট সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, যা মার্কিনীদের আজই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংঘাত ও সংকট নিয়ে চীন, ভারত, আমেরিকার কূটনীতিক সফট ওয়ার। যদি কোনভাবে এখানে দুর্বল কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত করা যায় বা পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে চীন, ভারত, মার্কিনীদের সেই কূটনীতির সফট ওয়ার অনায়াসেই বাস্তবায়ন করা যায়। প্রয়োজনে বাংলাদেশকে বলির পাঠা বানাতে তাই কূটনীতির সফট টাচে তাই যেকোন গেইম এখন জায়েজ হয়ে আছে মুরুব্বী আর মোড়লদের কাছে।

বাংলাদেশকে এখন ঠিক করতে হবে, কতো কম রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের হিস্যা নিয়ে বিশ্ব কূটনীতির সফট ওয়ারের সঙ্গী হওয়া যায়। নতুবা বাংলাদেশের জন্য কি কনসিকোয়েন্স ? ভবিষ্যৎ ই বলে দিতে পারবে।

salim932@googlemail.com
14th November 2013, london

Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!