সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় যেকোনভাবেই হউক ফাঁস হয়েছে। একথা যেমন স্বীকার করছেন সালাহউদ্দিন চৌধুরীর পরিবার, তেমনি মাননীয় আদালতও স্বীকার করেছেন। তফাৎ শুধু মাত্রা ও শব্দগত । সালাহউদ্দিনের পরিবার বলছেন, তারা ইন্টারনেটে আগের দিন এই মামলার রায় জেনেছেন, যা হুবহু আদালতের দেয়া রায়ের সাথে মিলে। আর মাননীয় আদালত বলছেন, আংশিক রায় ফাঁস হয়েছে, সেজন্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।তবে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রতিমন্ত্রী কামরুলের বক্তব্য এর যুতসই জবারের পরিবর্তে সরকারের জন্য বরং উল্টো বুমেরাং হয়েছে। এইসব ক্ষেত্রে সরকারের বক্তব্য আরো শাণিত ও যুক্তিনির্ভর এবং তথ্যভিত্তিক হওয়া উচিত ছিলো, যা গুজব ও বিভ্রান্তি রোধে সহায়ক হতো।
মাননীয় আদালতে সৃষ্ট বিষয়ের বক্তব্যে সরকারের বক্তব্যের মধ্যে কোন ধরনের আবেগ, উচ্ছ্বাস এবং অতি রাজনৈতিক হওয়া উচিত নয়। আশার কথা ডিবি পুলিশ অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এর কিছুটা সুরাহা করে সাংসদ সালাহউদ্দিন চৌধুরীর রায় নিয়ে দেশে বিদেশে যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলো, তা অনেকখানিই প্রশমিত হয়েছে।ডিবি পুলিশের তড়িৎ কার্য এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবী রাখে। চূড়ান্ত তদন্ত কার্যক্রম যাতে নিরপেক্ষ এবং সকল প্রকারের পক্ষ-পাতিত্বের উর্ধ্বে উঠে হয়-সেদিকে সকল পক্ষেরই যত্নবান হওয়া উচিৎ । উপরের কথাগুলো ব্রিটেনের আমজনতার বক্তব্য । লন্ডন, বার্মিংহাম , কেমব্রিজ, বৃষ্টল, এভারডিন, সারে, নর্থালার্টন-এর প্রবাসী বাংলাদেশী নারীপুরুষ টেলিফোনে নিজেদের মতামত দিয়েছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হউক-এমন আশা করেন।
০২) সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় কি করে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে অতি চাতুর্যের সাথে কিংবা অতি দক্ষ চুরির সাথে ট্রান্সফার হয়ে গেলো-সে সব খতিয়ে দেখা উচিৎ। অবস্থার সাথে কিংবা ঘটনার সাথে এবং পূর্বেকার নিরাপত্তাজনিত ত্রুটির সাথে যে বা যারা জড়িত, তাদের সকলকেই এক দৃষ্টিতে দেখে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত-স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে-এমন কথা বলেছেন, ব্রিটেনের দুজন পেশাজীবী ডাক্তার, যারা মিডিয়ায় নাম প্রকাশে অপারগ।
আবার পূর্ব লন্ডনের খ্যাতিমান এক সলিসিটর, যিনি একসময় দেশে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, তিনি বলেছেন, সরকারের উচিৎ ছিলো ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে নিরাপত্তার সাথে সাথে কোন বিষয়ে যাতে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, দক্ষতার সাথে সেদিক খেয়াল রাখা। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, কম্পিউটার রুমের সাথের রুমে কি করে ক্লিনারদের থাকার জায়গা হলো- আন্তর্জাতিক একটি আদালতে এমন কর্ম করাটা কতোটুকু যুক্তিসঙ্গত হয়েছে, সে প্রশ্ন আসতেই পারে। এখানেই সরকারের ভূমিকাটাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
০৩) সুইডেনের যে ওয়েবে এই রায়ের কপি উইকিলিকসের আদলে প্রকাশ করা হয়েছে, শুরুতে এবং ঠিক তার কিছু পরে লন্ডনে রেজিস্টার্ড ডোমেইন থেকে একই রায় আপলোড বা প্রকাশ করা হয়েছে-এ নিয়ে বিস্তারিত এক সংবাদ লন্ডনের জনপ্রিয় বাংলা কমিউনিটির চ্যানেল এস এর নিউজ এডিটর তানভীর আহমেদ দুজন প্রফেশনাল ব্যক্তির সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে অনুসন্ধানী এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, যা গতকাল লন্ডনে চ্যানেল এসে প্রকাশিত হয়েছে রাত দশটার মেইন শিরোনামে। তানভীর আহমেদ যে দুজনের সাক্ষাতকার নিয়েছেন, তাদের একজন সলিসিটর ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের লজিস্টিক সাপোর্টের আন্তর্জাতিক ফোরামের এক্টিভিষ্ট, যিনি বলেছেন, তাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য এবং এভিডেন্স এই পর্যন্ত তারা যা সংগ্রহ করেছেন, তাতে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস জামায়াত-শিবির এই রায়ের কপি ইন্টারনেটে ফাঁস করেছে। এই ষ্ট্রাটেজিক গ্রুপের সলিসিটর বলেছেন, সরকার চাইলে ব্রিটিশ সরকারকে রিকুয়েস্ট করতে পারে এব্যাপারে তদন্ত করে দেখতে, যেহেতু ব্রিটেনে এই ডোমেইন রেজিস্ট্রিকৃত। সেজন্য তার বিশ্বাস, এতে ব্রিটেন ভিত্তিক জামায়াত-শিবিরের আইনীগোষ্ঠী জড়িত, যারা এই রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এ কাজ করেছে।
অপরদিকে সাংবাদিক তানভীর আহমেদকে ব্রিটেনের জামায়াত-শিবিরের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত একজন ব্যারিস্টার তিনি বলেছেন, ইতিপূর্বে স্কাইপ ক্যালেংকারির যদি সঠিক বিচার হতো, সরকার যদি ঐ সব কেলেঙ্কারির বিচারের আওতায় নিয়ে আসতো, তাহলে এই সব ঘটনা ঘটতোনা।
চ্যানেল এসকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী বলেছেন, তারা সরকারের নির্দেশনা পেলে ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করবেন এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখার জন্যে।
০৪)লর্ড কার্লাইল এ রায় মিডিয়ায় শুনার পর পরই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। একজন মানবাধিকার কর্মী এবং বিবেকবান ব্যক্তি হিসেবে অবশ্যই করতে পারেন-এটাই স্বাভাবিক। তবে মাননীয় আদালতের রায় গণমাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশের আগেই কেবলমাত্র দুটি অনলাইন লিকস কিংবা ওয়েব সংবাদের উপর ভিত্তি করে তড়িঘড়ি করে সুদূর কানাডায় বাঙালি লেখক, সাংবাদিকের কাছে ইমেইলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখার পর পরই গণমাধ্যমে প্রকাশ অনেকটা জামায়াত-শিবিরের ইউরোপীয় লবির কানেকশনের জোরালো প্রচারের সাথে মিলে যায়- এখানেই ব্রিটেনের যুদ্ধাপরাধী বিচারের পক্ষের লবির লোকদের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।অপরদিকে সালাউদ্দিন কাদেরের রায়ের বিপক্ষে অবস্থানকারীরা একবাক্যে অন্য কিছু বলার আগে-ভাগে, এমনকি মিডিয়ায় তখনো লর্ড কার্লাইলের বক্তব্য প্রকাশিত হয়নাই, এমতাবস্থায় লর্ড কার্লাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে মতামত প্রকাশে বিরুদ্ধ পক্ষের সংশয়ের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
০৫) রায় এবং কথিত রায় ফাঁস কিংবা চুরি- সত্য-মিথ্যা যাই হউক, মাননীয় আদালতের সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকৃত ও উন্নত , গ্রহণযোগ্য তদন্ত সাপেক্ষে মাননীয় আদালত যত দ্রুত সম্ভব নিরসন করবেন, ততোই দেশ ও জাতি অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও বিভ্রান্তির ডালপালা থেকে বিশ্বপরিমন্ডলে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
Salim932@googlemail.com
4th October 2013.UK