মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের সর্দার জিব্রাইল(আঃ) নূর দিয়ে তৈরি করেছেন, কেবলমাত্র তার ঠোট ছাড়া, জিব্রাইল (আঃ) তৈরি করার পরে নিজের এতো সুন্দর অবয়ব, গঠন, কাঠামো দেখে জিব্রাইল বিস্ময়ে হতবাক এবং এতো খুশী হলেন যে, আল্লাহর দরবারে শোকরানা আদায়ের জন্য দু`রাকায়াত নামায আদায় করলেন। হযরত জিব্রাইলের এই দু`রাকায়াত নামাযের পর যখন সালাম ফিরালেন, আল্লাহ পাক খুব খুশী হলেন এবং বললেন, হে জিব্রাইল তুমি কি জানো এই দু`রাকায়াত নামায পড়তে কতো সময় তোমার লেগেছে?
জিব্রাইল তখন বললেন আমার মালিক, আমার রব সব জানেন। আল্লাহ পাক তখন জানালেন বিশ বছর সময় লেগেছে তোমার এই দু`রাকায়াত নামাযে। আল্লাহ পাক তখন জিব্রাইলকে বললেন, হে জিব্রাইল তোমার এই দু`রাকায়াত শোকর গোজারের নামাযে আমি খুশী হয়েছি, তবে তুমি জেনে রাখো আখেরী জামানায় মোহাম্মদ (সা:) উম্মত এর চাইতে অতি অল্প, অতি নগণ্য সময়ে এই রকম নামায পড়ে এর চাইতে দ্বিগুণ, তিনগুণ, বহুগুণ সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে, আমাকে খুশী করবে, যা তোমার ঐ বিশ বছর কালীন সময়ের নামাযের কেয়াম, রুকু, সেজদার চাইতেও আরো অধিক উত্তম হবে। আর আমি আল্লাহ পাক তাদের সেই নামাযে খুশী হয়ে জান্নাতের মধ্যে সব চাইতে উত্তম জান্নাতুল মাও-ওয়া নামক অতি উন্নত মানের বিশেষ জান্নাত দান করবো।হযরত জিব্রাইল (আঃ) তখন জান্নাতুল মাও-ওয়া নামক এই বেহেশত দেখার খুব সাধ হলো। তিনি অনেক সফর করার পরে আল্লাহ পাকের দরবারে আরজ করলেন, ইয়া আল্লাহ আমি কি জান্নাতুল মাও-ওয়া নামক স্থানে কিংবা এর কাছা-কাছি অথবা এর মধ্যে এসেছি কিনা? আল্লাহ পাক তখন এরশাদ করলেন, হে জিব্রাইল তুমি তিন হাজার বছরের রাস্তা সফর করেও জান্নাতুল মাও-ওয়া নামক জান্নাতের দেখা পাবেনা। কারণ এটা স্বয়ং আমি মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(সা:) এর উম্মতদের জন্য নামাযের পুরস্কার হিসেবে রেখে দিয়েছি।
নামায আল্লাহর কাছে এতো প্রিয় আর এতো গুরুত্বপূর্ণ। স্বয়ং ফেরেশতাদের সর্দার, আল্লাহর ওহী নিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যিনি ২৪হাজার বার এসেছিলেন, অথচ তিনিও নামাযের পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ প্রদত্ত বান্দাদেরকে জান্নাতুল মাও-ওয়া নামক যে বেহেশত দান করবেন, তাও দেখার সৌভাগ্য হয়নি।পবিত্র মেরাজ শরীফে আল্লাহর নৈকট্য ও আল্লাহর সাথে মোলাকাত করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার মাহবুব(সা:) যখন মেরাজ শরীফ সফরের জন্য বোরাক নিয়ে জিব্রাইলকে প্রেরণ করেন, তখন জিব্রাইল এসে দেখেন মহানবী( সা:)আরাম করতেছেন। হুজুর (সা:)নিদ্রা ভঙ্গ হয়, এই অবস্থায় জিব্রাইল আল্লাহর দরবারের আরজ করলেন, হে আল্লাহ আমি কি হুজুর (সা:)ডাকবো, নিদ্রা ভঙ্গ করাবো, কি করবো ? আল্লাহ পাক তখন বললেন, হে জিব্রাইল তোমার ঠোট মোবারক দিয়ে আমার মাহবুবের পা-স্পর্শ করো। জিব্রাইল তাই করলেন। প্রথমবারের স্পর্শে হুজুর ঠাণ্ডা অনুভব করলেন, দ্বিতীয়বারের স্পর্শে জেগে উঠলেন। আর জিব্রাইল ও ততক্ষণে বুঝে গেলেন আল্লাহ পাক তাকে নূর দিয়ে তৈরি করেছেন শুধু ঐ ঠোট মোবারক নূর ছাড়া কেন ? হায় হায় এ যে মাহবুব আর স্বয়ং আল্লাহর ব্যাপার। আর এই মেরাজের সফরের মাধ্যমে স্বয়ং আল্লাহ পাক তার সবচাইতে পিয়ারা, সবচাইতে প্রিয় মাহবুব মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ডাইরেক্ট সাক্ষাতের মধ্যদিয়ে নবীজীর উম্মতের জন্য এই নামায উপহার স্বরূপ প্রদান করেছেন।আর এই নামাযই কেবলমাত্র বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে একেবারে নিকটবর্তী নিয়ে যায়।মেরাজ থেকে ফিরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবীদের কাছে নামাযের তোফার কথা বর্ণনা করছিলেন, সাহাবীরা তখন এতো খুশী হয়েছিলেন যে, তারা একাগ্রচিত্তে তাদের সবকিছুর জন্য আল্লাহর সাথে কথোপকথনের জন্য এই নামাযে মশগুল হয়েছিলেন।
(আল্লামা হযরত হাফেজ মাওলানা ক্বারী ইফতেখার হোসেন খান দামাত বারাকাতুহ`র মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজ শরীফ ও নামাযের মাহাত্ম্য শীর্ষক প্রধান আলোচনার সারাংশ অনুবাদ থেকে…)।
২১শে জুন ২০১৩।