Home » কলাম » জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে বলছি…

জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে বলছি…

জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে বলছি…

Submitted by syed shah salim… on Wed, 19/06/2013 – 5:42am

বাংলাদেশের অতি ক্ষমতাধর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগের একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি কথা বলার আগে বলে রাখি, আমি আওয়ামীলীগ করিনা, আওয়ামীলীগের রাজনীতির সমর্থকও নই।তবে আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, ভালোবাসি এই বাংলার আলো-বাতাস, নিরন্ন জনগণ ও তার খেটে-খাওয়া মানুষগুলোকে।

সাম্প্রতিক চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সীমাহীন ভরাডুবিতে দেশে-বিদেশে চলছে তোলপাড়। নানা জনের নানা বিশ্লেষণ, ভরাডুবির চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।আমি সেই সব বিশ্লেষণের জবাবে বা তার বিরুদ্ধে নই। বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসা একটি জোটের মাত্র সাড়ে চার বছরের মাথায় ভোটের রাজনীতিতে মহা প্রলয়ের যাত্রী হওয়াতে আলোচনা, সমালোচনা হবে, এটাই স্বাভাবিক।

সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন বিরোধী দলীয় জোট তথা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হাতে। বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনের গতিপথ পাল্টে দেয়ার জন্যই এই পাঁচটি(চট্টগ্রাম সহ) সিটিই যথেষ্ট।এই সময়ের মধ্যে বিশাল জনপ্রিয়তা নিয়ে ভোটে জিতে আসা চারটি সিটির মেয়রদের কোন অবস্থাতেই অ-জনপ্রিয় কিংবা দুর্নীতিতে যুক্ত হওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই, যা দিয়ে বিএনপি ও ১৮ দলকে কাবু করা যাবে।

তাই নির্বাচনী ফলাফলে আমি সহজ এবং ডাইরেক্ট সমীকরণ করতেই অভ্যস্ত এবং এক্ষেত্রে অতি মাত্রায় তাত্ত্বিক এবং অতি রাজনৈতিক মূল্যায়ন আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি কোন অবস্থাতে কেউ রুখতে পারবেনা, এমনকি পালানোর পথও আওয়ামীলীগ খুঁজে পাবেনা।

কেননা, স্থানীয় সংস্থার এই নির্বাচনে সাধারণ জনগণ জাতীয় ইস্যু এবং জাতীয়ভাবে আওয়ামীলীগের প্রতি আস্থার সংকটের রায় ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। আওয়ামীলীগ পুরো জাতিকে যেমন বিভ্রান্ত ও আস্থাহীনতার মধ্যে নিয়ে এসেছে, একই সাথে জনতার বাধ-ভাঙ্গা বিশ্বাসকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছে।দেশে যখন এই রকম আস্থা, বিশ্বাসের সংকট এবং চরম ক্ষোভ জনগণের মধ্যে দেখা দেয়, তখনি মানুষ পরিবর্তনের পথ খুঁজে ।স্থানীয়ভাবে যত ভালো কাজই করুকনা কেন, যত হেভি ওয়েট প্রার্থী দেকনা কেন, মানুষ তখন সেই সবের ধার ধারেনা। প্রার্থীর ব্যক্তি পরিচয় ও কাজের চাইতে তখন মুখ্য হয়ে উঠে প্রার্থীর দলীয় ও জাতীয় কর্মকাণ্ড এবং জাতীয় আশা- আকাঙ্ক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আওয়ামীলীগের ধারণা, তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি ও ১৮ দল যে ভোট পেয়েছে, এই মুহূর্তে পার্টি ও জোটের নেতাদের মধ্যে থেকে বিএনপি চাপের মধ্যে থাকবে, এই অবস্থায় নির্বাচন করলেও বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারবে। আওয়ামীলীগ বৈদেশিক ও তৃণমূলের ঐ দ্বিমুখী চাপ আর সরকারের নির্বাচনী ফর্মুলার ছকে বিএনপিকে নিয়ে কিংবা বাইরে রেখে যে নির্বাচনই করুক না কেন, ৩০০ আসনের সেই নির্বাচনে নিজেদের ইচ্ছেমতো ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে যদি ক্ষমতায় ফিরে আসে, সেক্ষেত্রে যেমন সিভিল ওয়ারের দিকে দেশকে ধাবিত করবে, একই সাথে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিএনপির দাবীকে আমলে না নিয়ে একতরফা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক গোলযোগ বৈ কমবেনা।আবার ক্ষমতাসীন সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার পাশাপাশি এই সিটি নির্বাচনের অভূতপূর্ব ফলাফলের রেজাল্টে এখন আর নতুন কোন মিত্র পাওয়াও কঠিন। খোদ ১৪দল, জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগের ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব নিতে নারাজ। তাহলে আওয়ামীলীগ কেন দলীয় মাস্তান, ক্যাডার, লুটেরা, চাঁদাবাজ, যৌন-বাজ, দুর্নীতির প্রভুদের দায়-দায়িত্ব নিবে?

আবার তত্ত্বাবধায়ক চাইলে নির্বাচন হবেনা– এমন অগণতান্ত্রিক বক্তব্যও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে জাতি আশা করেনা।গোঁজামিলের নির্বাচন কিংবা অন্ধকারের শক্তিকে আহ্বান বা পরিস্থিতির সুযোগে নিজেদের গা-বাচাতে অগণতান্ত্রিক শক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর কারো জন্য শুভ হবেনা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শুনতে খারাপ লাগলেও, জনগণের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে, এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বার্থে আপনাকে বলছি, দলীয় অন্ধ অহমিকা, ইগো, স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা, অতি কথন, দাম্ভিকতা দয়াকরে পরিহার করে-

০১) এই মুহূর্তে দল এবং মন্ত্রী সভা থেকে বাদ দিন– কামরুল ইসলাম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবুল হোসেন, হাসানুল হক ইনু, ম খা আলমগীর।এদেরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করুন, বিচারের মুখোমুখি করুন। বাংলাদেশের জনগণের মানুষকে আস্তায় নিন। দেখবেন জনগণের মন-প্রাণ আওয়ামীলীগের দিকে পরিবর্তনে ঝড়ের মতো কাজ করবে।এক আবুলকে যখনি আপনি গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করবেন বিশ্বব্যাংক যেমন পদ্মায় ফিরবে, জনগণের আস্তাও বিপুলভাবে ফিরে আসবে।তখন আর দেশের কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশের পত্রিকায় সরকারের ফিরিস্তি দেয়ার দরকার পড়বেনা।

০২) তোফায়েল, আমু সহ আওয়ামী ঘরানার ত্যাগী বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আওয়ামীলীগের সেই নেতাদের আওয়ামীলীগের কাণ্ডারির দায়িত্বে দিন। বামপন্থী, চীন পন্থী, মস্কো-পন্থীদের এই মুহূর্তে ঝেটিয়ে বিদায় করে দিন। মোহাম্মদ হানিফ, মেসবাহ উদ্দিন সিরাজদের মতো অদক্ষ নাবিকদের বসিয়ে রেখে সুলতান মনসুর, মুকুল বোস, মাহমুদুর রহমান মান্না, আক্তারুজ্জামানদের মতো দক্ষ সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে ডেকে নিন।সারা বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের বিভিন্ন জেলার ত্রাস, লুটেরা, আর যৌনাচারের বদনামে দুষ্টু নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করুন।প্রশাসনে এই সিগন্যাল দিন, এখন থেকে কোন অন্যায়-অত্যাচারী কাউকে রেহাই দেয়া হবেনা।অথর্ব উপদেষ্টাদের বসিয়ে দিন।

০৩) হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ সহ জাতীয় পার্টির সাথে দেয়া সকল ওয়াদা পূরণ করে এরশাদ এবং জাতীয় পার্টিকে আস্তায় নিন। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এক বিরাট ফ্যাক্টর। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। চার সিটিতে জাতীয় পার্টি বিএনপি ও ১৮ দলকে ভোট দিয়েছে, ভোটের অংকের বিশাল ব্যবধান দেখেও কি আপনার তা মনে হচ্ছেনা। আওয়ামীলীগের হেভি ওয়েটরা পরাজিত হলেও এতো ব্যবধান হতোনা, জাতীয় পার্টির সব ভোট বিএনপির বাক্সে গিয়েছে সন্দেহ নেই। এরশাদ সহ জাতীয় পার্টিকে আস্তায় নিন, তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দিন, তাদেরকে পূর্ণ আমলে নিন, সম্মান দিন।

০৪) শোলা কিয়ার ইমাম মাওলানা মাসউদ , মিসবাউর সহ আরো যারা সুবিধাভোগী আলেম নামের সুবিধাবাদীরা আপনার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে আলেম উলামাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করছে, তাদেরকে ঝেটিয়ে বিদায় করে দিন। গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করুন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এদের জন্য নিষিদ্ধ করে দিন।দেখবেন মানুষ আবার আওয়ামীলীগের মধ্যে আস্তা ফিরে পাচ্ছে। আওয়ামীলীগের এই সব ত্যাগী নেতাদের সারা বাংলাদেশে চষে বেড়ান, ভোটের রাজনীতি পাল্টে যাবে।আর যদি তা করতে ব্যর্থ হন, মনে রাখবেন, আপনার সামনে আর মাত্র পাঁচটি মাস। যা করার এই মুহূর্তেই করতে হবে।কোন ষড়যন্ত্র ডাল-পালা বিস্তারের আগেই। নতুবা মুজিব কন্যাকে কৃতকর্মের দায় অসহায়ভাবে ফেইস করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জানিনা, সেই সময়টুকুও পাবেন কিনা । চার সিটি নির্বাচনে জনগণ কিন্তু আওয়ামীলীগকে লাল কার্ড দেখিয়েছে, এবার যে কি দেখাবে আল্লাহই জানেন।মুজিব কন্যা কি ভেবে দেখবেন ?প্রয়াত মালেক উকিল বলতেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই, মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকে বলছি, মালেক উকিলের এই দর্শন এই মুহূর্তে এপ্লাই করে দেখুন কেমন করে বাজিমাত হয়!মন্ত্রী সভাকে রিসাফল করেন প্লিজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছোট মুখে বড় কথা বলার জন্য বিনয়ের সাথে ক্ষমাও চাইছি।

tweet@salim1689
17th June 2013.

  • to post comments
  • 4009 reads
Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!