তারেক রহমান-রাজনীতির বরপুত্র: একটু কী ভেবে দেখবেন ?
SAMSUNG CSC

তারেক রহমান-রাজনীতির বরপুত্র: একটু কী ভেবে দেখবেন ?

১৯৮৫ সাল, সম্ভবত: জুন কি আগস্টের প্রথম দিককাল, ধুরু-ধুরু বুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে জনতা ব্যাংকের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ, উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশনের টাকা জমা দেয়া। লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ-তখনকার প্রেক্ষিতে ছিলো সাক্ষাত কোন স্বর্ণমূর্তি হাতে পাওয়া। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার গৌরব, শান-শওকত ছিলো আলাদা, এক ধরনের এক আভিজাত্য, যা আজকের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একজন নবাগত ছাত্র-ছাত্রী কল্পনাও করতে পারবেননা।বহু কষ্টে দীর্ঘ লাইনের পর জনতা ব্যাংকের কাউন্টারে টাকা জমা দিতে পারলেও সেখানেই সব কাজ শেষ ছিলোনা। ভর্তির ফিসের কনফার্মেশনের রশিদ তখন কলাভবনের ডীন অফিসে এনে জমা দিলেই কেবলমাত্র মিলতো সেই সৌভাগ্যের চাবি কাঠি। জনতা ব্যাংকের লম্বা সেই দৌড়ে সক্ষম হলেও ডীন অফিসের ধাক্কা-ধাক্কিতে আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলামনা। তার উপর সময় ও ফুরিয়ে যাচ্ছিলো। এমনি অবস্থায়, অত্যন্ত উঁচু মার্গের গলায় পেছন থেকে একজন, হাতে সিগারেট, হাস্যোজ্জ্বলমুখে বললো, কি ভাই এইভাবে সারা দিন ধাক্কাধাক্কি করলেও রশিদ আর জমা দেয়া লাগবেনা। আমি বেশ হতচকিত হয়ে যাই সেই ছেলেটির কথা শুনে। তার উপর গলার স্বর এতো ভরাট আর মোটামোটা চোখ।ঠোটে অনর্গল সিগারেট টানা। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম। ভরাট কণ্ঠের ছেলেটি এসে বললো, দেন আমার কাছে, সব ঠিক হয়ে যাবে। বুঝতে পারছিলামনা কি করবো, সাথে আরো ৪/৫ জন ছেলে, সবার হাতেই রশিদ, একজনের দিকে চোখ বেশ আটকে গেলো । মনে হলো কোথায় যেন দেখেছি। একেবারে নতুন হওয়াতে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছিলামনা। এরই মধ্যে ভরাট কণ্ঠের সেই ছেলেটি বললো, আমি আনিস, গোপালগঞ্জের ছেলে।একই ডিপার্টম্যান্টে ভর্তি হতে এসেছি, আর ওরা সব আমার বন্ধু, রেসিডেনশিয়াল থেকে আমরা সবাই পাশ করে বের হয়েছি। হাত বাড়িয়ে আমার নাম পরিচয় দিলাম। দেখলাম মুহূর্তেই ভুঝবাজির মতোই আমার সেই নতুন বন্ধু আনিসুর রহমান আনিস কেমন করে যেন সবাইকে সরিয়ে দিয়ে রশিদ জমা করে আমাদের সকলের কাগজ ডীন অফিস থেকে সীল করে নিয়ে আসলো। আমিতো অবাক।এতো দুর্দান্ত ছেলে, এতো সাহস, সবাইকে ধমক দিয়ে কাজ করে নিচ্ছে, তার চাল-চলনে মনে হলো সে যেন অনেক আগে থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, অথচ সেও নতুন। যাই হউক ডীন অফিসের কাজ সেরে আনিস আমাদের ( তার সাথের সকলকে) সবাইকে নিয়ে চললো অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। সেখানে ঠেস দিয়ে বসে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। চোখে সান গ্লাস লাগানো যার সাথে সব শেষে বেশ আয়েশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো, সেই হলো আজকের রাজনীতির বরপুত্র, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমান। 000uk0.jpeg

শুরুতেই তারেক নিজে থেকেই জানালেন নিজের ভর্তির কথা, অভিনন্দিত করলেন একসাথে সুন্দর এক পরিবেশে সবাই মিলে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে, একইসাথে খুব দামী এক সাবজেক্ট নিয়ে পড়ার সুযোগ হওয়াতে। কথা-বার্তায় অত্যন্ত মার্জিত, শান্ত, সৌম্য চেহারার তারেককে দেখেই বেশ আকর্ষণীয় মনে হলো। তার উপর পড়া-লেখার প্রতি আগ্রহ দেখে মনেই হলোনা সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় এক রাষ্ট্রপতির ছেলের সাথে প্রথম পরিচয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে যে দিলো, তার মধ্যে নেই কোন অহংকার বা গরিমা, বরং অনাবিল এক কোমলতার ছাপ চোখে মুখে সেদিন দেখেছিলাম। আমার কাছে সত্যিকার অর্থেই তখন বেশ ভালো লেগেছিলো। ও হ্যাঁ যার মাধ্যমে তারেক রহমানের সাথে সহপাঠীর বন্ধুত্বের সূচনা, আমার সেই বন্ধুটি আজকের অরল্যান্ডো প্রবাসী, পুরোদস্তর একজন ব্যবসায়ী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস যখন শুরু হয়, তখন তারেক নিয়মিত আসতেন ক্লাসে। ইতিমধ্যে তখনকার ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ শামসুল হকের ছেলে ঢাকা কলেজ থেকে ট্রান্সফার নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ( ঐ সময় স্বজন প্রীতি খুব একটা হতোনা, যে কারণে ভিসির ছেলে হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কোটা শামসুল হক স্যার এপ্লাই না করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন)আসলে আমাদের বন্ধুত্বের সার্কেল আরেকটু ভিন্ন মাত্রার লাভ করে। এরই মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দানা বেধে উঠে, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্র-গণ আন্দোলন জোরদার রূপ লাভ করে। এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের বিপরীতে বিএনপির ছাত্রদল তখনকার ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান রিপণ, রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রদল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ভ্রাতা নীরু-বাবলু, সেই সাথে মালেক-রতন-অভি-পাগলা শহীদের দাপটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একচ্ছত্র ছাত্র সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের নিজেদের মধ্যে দু-একজন সরাসরি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও তারেক রহমান তখন পর্যন্ত রাজনীতির প্রতি খুব একটা উৎসাহ আমি অন্তত ঐ সময়ে লক্ষ্য করিনি। তবে রাজনীতি সম্পর্কে তারেক রহমানের একটা স্বচ্ছ ধারণা ছিলো, তা তার কথা-বার্তার মধ্যে বেশ পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠতো।

এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ঘটনা ঘটে যায়। কেন জানি তারেক রহমান হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেন। আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ি যার যার কাজে। তবে আনিসের মাধ্যমে, সিরাজদ্দৌলার মাধ্যমে, মাজে-মধ্যে খবর পেতাম, ওরা তখন ঘটা করে এটা-সেটা আলোচনা করতো। বেশ কবছর আর কোন খবর নেই বা নেয়া হয়নি, অর্থাৎ নেয়ারমতো তেমন কোন সুযোগও ছিলোনা।একদিন জানলাম, মরহুম রিয়ার এডমিরাল এম,এ,খানের মেয়ে জুবাইদার সাথে তারেকের বিয়ে, ব্যস এই পর্যন্তই। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যখন চরম যৌবন কাল, তখন তারেক রহমানকে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ছাত্রদলের কোন প্রোগ্রামে দেখিনি। বিরোধী রাজনীতি করার কারণে আমিও আর আগ্রহ রাখিনি। সেজন্য খুব একটা আর জানার সুযোগ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আমরা যে যার পথে চলে যাই। ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের পর বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশে ছিলাম। ঐসময়ও রাজনীতির অলি-গলিতে তারেক রহমানের সক্রিয়তার কোন সংবাদ পাইনি। দ্বিতীয় টার্মে বিএনপি যখন চারদলীয় জোট বেধে ক্ষমতায় আসে, তখন বিদেশ থেকে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণ এই নেতা বিশেষ নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। জোট সরকারের পাঁচটি বছর পত্র-পত্রিকার মারফত এই জাতীয়তাবাদী তরুণ নেতাকে নিয়ে নানা খবর, মুখরোচক আলোচনা শুনেছিলাম, এমনকি বিশেষ ভবনের সাথে তারেক রহমানের নাম জড়িয়ে অনেক গল্পও শুনেছিলাম।আমার দেখা দীর্ঘদিন আগের সেই শান্ত-সৌম্য,ভদ্র,মার্জিত তারেক রহমানের সাথে জোট সরকারের সময় মিডিয়ায় প্রচারিত কাহিনী, গল্প আর বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্যাতিত তারেক রহমানের কোন মিল খুঁজেই পাচ্ছিলামনা। আমি সেজন্য ফ্লোরিডায় বসবাসরত আমার বন্ধু আনিসের সাথে টেলিফোনে বেশ কয়েকবার এব্যাপারে আলোচনা করে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম।কারণ তারেক রহমানের নামের সাথে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সেই সব বন্ধুদের ছিলো আমার কাছে অজানা এবং বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি তাদের দেখিনি।

যাই হউক, বিগত মঈন উদ্দিন, ফখর উদ্দিনের তত্বাবধায়ক সরকারের সময় অত্যন্ত নির্দয় ও নিষ্ঠুরভাবে তারেক রহমানকে নির্যাতন করে শারীরিকভাবে শেষ করে দেয়ার হীন চেষ্টায় বিস্মিত হয়েছিলাম। দুর্নীতি, অন্যায় আর ক্ষমতার অপব্যবহার বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র জন্মের পর থেকে কম-বেশী যে বা যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন বা সরকারি চাকুরে মাত্রই ক্ষমতার অসীম ব্যবহার করে থাকেন- এটা আমরা সকলেই অবগত এবং তা থেকে আমরা কেউই বেরিয়ে আসতে পারিনি বা আমাদের রাষ্ট্রীয় এই সিস্টেম এমনভাবে তৈরি, কেউ চাইলেও এই দুর্নীতি, অন্যায় থেকে বেরোতে পারবোনা।তাই বলে, কেবল একজন মাত্র তারেক রহমানকে এমন ন্যাকারজনক ভাবে নির্যাতন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমাহীন অপব্যবহার করা হবে, সেটাওতো ছিলো একটা সন্ত্রাস। এতোবড় রাজনৈতিক দল হয়েও তার নেতাকে এই অসহনীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করতে পারেনি, এখানেই আমাদের রাজনৈতিক দল এবং এই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে সীমাহীন অগণতান্ত্রিকতার কূপমণ্ডূকতা, যার দায় দায়িত্ব এই রাষ্ট্র এড়াতে পারেনা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকার ফলে এই রকম সন্ত্রাসের মাত্রা ক্রমাগতভাবেই বৃদ্ধি পাবে বৈ কমবেনা।

০২) তারেক রহমান যখন শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসার্থে লন্ডনে আসেন, তখন দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক, সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে সুন্দর পরামর্শমূলক একটা নিবদ্ধ এই কলামে লিখেছিলেন। তারেক রহমানের রাজনীতির সমর্থক না হয়েও অনেকের মতো শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমিও নাইমুল ইসলাম খানের সেই লেখার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলাম। নাইম ভাই যখন ঐ লেখা লিখেছিলেন, তখন জরুরী আইনের জগদ্দল পাথর জাতির কাঁধের মধ্যে গেড়ে বসেছিলো। দলীয় নেতা দূরে থাকুক, বিএনপি দলীয় কোন বুদ্ধিজীবীও সাহস করেননি, বিএনপি কিংবা তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে ঐ রকম সুন্দর সদুপদেশমূলক দুচারটি কথা বলার, নাইমুল ইসলাম খানের মতো সাহসী সাংবাদিক ও সম্পাদকের দ্বারাই কেবল তা সম্ভব ছিলো। প্রচলিত স্রোতের বিরুদ্ধে সত্য, সুন্দর, সাহসী দৃপ্ত উচ্চারণের এক অনবদ্য নাম-নাইমুল ইসলাম। আর সেকারণেই সাহস করে তিনি লিখেছিলেন। ঐসময়কালিন অবস্থার সাথে যারা পরিচিত, কেবল তারাই বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারবেন, ঐরকম একটা লেখা কতোখানি দুঃসাধ্য এক কাজ ছিলো।

০৩) ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল- এই দীর্ঘ সময়ের ভিতরে ব্রিটেনে বসবাস করেও তারেক রহমান সকল প্রকারের প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। নিজেকে উপলব্ধি, নিজেকে নতুন করে জানা, আগামী নেতৃত্বের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুত করে তোলার জন্য এরকম নীরবতা অনেকের কাছেই ছিলো বেশ প্রশংসনীয়।আর পত্রিকান্তরে যখন জানতে পারলাম, এর ফাকে তারেক রহমান নিজেকে গড়ার জন্য আইন শাস্র নিয়ে পড়া-লেখা করছেন, তখন সত্যি খুশী হয়েছিলাম। কারণ, যে যেভাবেই দেখুন বা বিচার-বিশ্লেষণ করুন না কেন, বাংলাদেশে( এখন পর্যন্ত তাই দেখা যাচ্ছে) আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি –এই দুই দলের বাইরে অন্য কোন রাজনৈতিক শক্তি বা দল গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় আসীনের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের জনগণের জীবন-মান উন্নয়নে তাই অনেকটাই নির্ভর করে এই দুই দল এবং তাদের নেতৃত্বের উপর। আর একজন সঠিক নেতা, সত্যিকারের জন-দরদী নেতা, নেতৃত্বই পারেন কেবল ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। তাছাড়া আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কোন দেশই এককভাবে বা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের উন্নয়ন করতে বা চলতে পারেনা। আগামীর পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশকেও তার রাজনৈতিক দলের নেতা-নেতৃত্বকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। নতুবা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব সভা থেকে আমরা অনায়াসেই ছিটকে পড়বো, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর প্রতিযোগিতামূলক আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে টেকসই গণতন্ত্র ও টেকসই সামাজিক উন্নয়নের জন্য চাই আধুনিক, উন্নত নেতৃত্ব। সেকারণে নাইমুল ইসলাম খানের মতের সাথে সঙ্গতি রেখে আমি এখানে আরেকটু যোগ করে বলতে চাই, এই মুহূর্তে রাজনীতিতে সক্রিয় না হয়ে, অথবা লন্ডনের দলবাজি রাজনীতিতে নিজেকে জড়িত না করে তারেক রহমানের বরং উচিৎ আরেকটু সময় নিয়ে নিজেকে পূর্ণরূপে গড়ে তোলা।এই কারণে, এখানে তারেক রহমানের- ব্যক্তি তারেকের গড়ার জন্য নয়, বাংলাদেশের আপামর জনগণের স্বার্থে, ১৬-১৭ কোটি জনগণের জীবন-মান উন্নয়নের স্বার্থে তারেক রহমানকে আরেকটু সময় নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলে নেতৃত্বে তথা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়া উচিৎ। এই মুহূর্তে তারেকের উচিৎ( এখানে আমার লিঙ্কএডইন নেটওয়ার্কের বন্ধু এ কে এম ফয়জুল হক-এর উক্তি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য, তিনি তারেক রহমানের উপর আমার লন্ডন ডট এইদেশ ডট কম-এ নিউজ করার উপর সুন্দর মন্তব্য করেছেন, তিনি লিখেছেন “He should go to Harvard Business School for at least 2 years for Management Study. He had a chance during his exile in UK. It will be helpful for the country and for himself as well.”)। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল বা অন্য কোন সুবিধা মতো কোন প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন, ম্যানেজম্যান্ট, ল, কিংবা রাজনীতি বিজ্ঞান- যা তার পছন্দ, তার উপর উচ্চতর কোন প্রফেশনাল ডিগ্রী অর্জন করা, যাতে সেই লব্ধ জ্ঞান বাংলাদেশের উন্নয়নে আগামীতে তিনি এবং তার দল যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেন। আর এই রকম ধ্যান-মান নিয়ে তিনি যদি আরেকটু সময় নিয়ে দেশ ও জনগণের জন্য, বলা যায়,অনেকটা রাষ্ট্র দার্শনিক সিরাজুল আলম খানের মতো, পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তবে দেশ ও জনগণের জন্য অবশ্যই তিনি এক বিশাল সম্পদে যেমন পরিণত হবেন, একই সাথে তার দলও একজন যুগোপযোগী আধুনিক নেতৃত্ব পেয়ে যাবে, যার নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যার জনগণ অতি সহজেই তার নেতাকে যেমন আপন করে নেয়, একইভাবে অল্প সময়েই তার নেতাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।এখানকার জনগণ দুর্যোগ-দুর্বিপাকে যেমন একে অন্যের সাহায্যে জীবন বাজী রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আবার একই জনগণ অতি সহজে হিপনোটাইস হয়ে কিংবা না পাওয়ার বেদনা থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে, জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে।আবার একই জনগণ সহজেই হুজুগের তালে চলতে অভ্যস্ত, আবার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তীব্র বেগে ফুসে উঠে। যে জনগণ আজ তারেক রহমানের নানা গল্প-কল্প-কাহিনীর ভাঁড়ে অতিষ্ঠ, সেই একই জনগণ একদিন এই তারেককে বেনিগনো আকিনো, নেলসন মান্ডেলার মতো নিজ দেশে বীরোচিত সম্বর্ধনা দিয়ে বরন করে নিবে, সেদিন বেশী দূরে নয়। আর তা পেতে হলে তারেক রহমানকে আরেকটু সময় নিয়ে, উন্নত, আধুনিক ক্যারিয়ার গড়ে, রাজনীতির ময়দানে, যুগের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করে এগুতে হবে। জোট সরকারের সময় হঠাৎ করে জুটে যাওয়া অতি মুনাফা লোভী বন্ধু, স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদ, হটকারি বুদ্ধিজীবীদের অতি বিনয়ের সাথে এড়িয়ে চলে জনগণের তারেক হয়ে উঠার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। যারা বিগত জোট সরকারের সময় ফায়দা লুটেছে, অপকর্ম করেছে ভাইয়ার নাম ভাঙিয়ে আর দুষ চাপিয়েছে তাদের প্রিয় ভাইয়ার উপরে, তারা এখনো ভাইয়ার আশে-পাশে সক্রিয় ভিন্ন রূপে, ভিন্ন আঙ্গিকে। তারেক রহমানকে সেই সব ক্ষমতা লোভী, মুনাফা লোভী, দুষ্ট বন্ধু ও পরামর্শদাতাদের থেকে সজাগ থাকতে হবে। বাংলাদেশের লক্ষকোটি নিরন্ন জনগণের কথা চিন্তা করে জনতার তারেক হয়ে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্যে, আরেকটু সময়ের অপেক্ষা নিয়ে, তারেক রহমান কি আরেকটু ভেবে দেখবেন ?

Salim932@googlemail.com
21st May 2013.UK.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *