সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-
ইউ,কে,থেকে
বিরোঁধীদলের ডাকা চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচীর আগের দিন লন্ডনের চ্যানেল আই ইউরোপ জনপ্রিয় আলোচনা অনুষ্টান জিল্লুর রহমানের তৃতীয় মাত্রায় আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সম্মানিত সদস্য,জনপ্রিয় সাংসদ,এক সময়ের রাজপথ কাপানো তুখোর ছাত্রনেতা জনাব তুফায়েল আহমদ এর কথোপকথন শুনছিলাম।তোফায়েল ভাই দক্ষ সংগঠক,আলোচনার টেবিলে মিষ্টভাষী,তুখোড় বক্তা,সমালোচক,অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সহ অসংখ্য গুনে গুনান্বিত।ছিলেন একসময় বঙ্গবন্ধুর বিশেষ রাজনৈতিক সহকারী,বহু আন্দোলন,সংগ্রামের নায়ক,৯৬ আওয়ামীলীগ সরকারের সফল শিল্পমন্ত্রী-এত সব ছাড়িয়ে ব্যাক্তি তোফায়েল ভাই যে নামে বা যে গুনে বাংলার জনগণের হ্রদয়-মনে শ্রদ্বার আসনে বসে আছেন,আর তা হলো ১৯৬৬ ছয় দফা ও ৬৯ এর সফল গণ-অভ্যুত্থানের অমলিন এক মহানায়ক।বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের কথা যখন তোফায়েল ভাই আলোচনা করেন,তখন তার নিকটতম শত্রুও অতি যত্নের সাথে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে থাকেন,যেমন শুনছিলেন সেদিনকার তৃতীয়মাত্রার জনপ্রিয় আরো এক উপস্থাপক জিল্লুর রহমান।একইভাবে আমিও বিমুগ্বচিত্তে সম্মোহিতের মতো টেলিভিশনের পর্দায় তোফায়েল আহমদের সেই বর্ণনা শুনতেছিলাম,মনে হচ্ছিলো এ যেন বাংলার অমর কাব্যের কবিতায় ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাবলী আমার চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে,আর আমিও আজ এর জীবন্ত এক স্বাক্ষী হয়ে তোফায়েল আহমদের ছায়াসঙ্গী হয়ে সেই অমিত-অযূত সংগ্রামের অমর সঙ্গীতের সাথে সুর মিলিয়ে চলেছি।
০২)
সাংসদ তোফায়েল যখন বাংলার ইতিহাসের পাতা থেকে সেইসব ঘটনাবলী জনগণের জন্য তুলে আনছিলেন টেলিভিশনের পর্দায়,সেটা যেমন ছিলো উপভোগ্য এবং ইতিহাসের কষ্টিপাথরে তথ্যসমৃদ্ব এবং রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্রিদের জন্য এক বিশাল পাওনা,একইভাবে অনুষ্টানের উপস্থাপক জিল্লুর রহমান যখন প্রশ্ন করেন,এতো সফল ধারাবাহিক ঐক্যবদ্ব সংগ্রামের ফসল বঙ্গবন্ধুর নের্তৃত্তে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম,কিন্তু দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আপনারা সকলেই কেন একহতে পারছেননা তথা ব্যর্থতার পরিচয় দিতেছেন?,বিশেষ গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও এর চর্চার বড় অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে কেন? স্বভাবতই তোফায়েল আহমদের কাছ থেকে সেদিন সেই প্রশ্নের বাস্তব এবং যথার্থ যুক্তিনির্ভর উত্তর আশা করছিলাম।কিন্ত কেন যেন মনে হলো ৬৯ এর গণ আন্দোলনের সেই বীর সেনানী কোথায় যেন আজ হারিয়ে যাচ্ছেন,কোথায় যেন বিবেক-বিচার বোধ আটকে রেখে আছেন।এই পর্যায়ে তৃতীয় মাত্রার এই পর্বের যবনিকাপাত হওয়াতে তোফায়েল আহমদ কেও অনুষ্টানের ইতি টানতে হয়্, ফলে আমারও মনের এবং প্রশ্নের যথার্থ উত্তর আর পাওয়া হয় নাই।
০৩)
সকলেই জানেন,১২ ই মার্চ ২০১২ সরকারের সকল কূট-ষড়যন্ত্র এবং দমণ-পীড়ণ উপেক্ষা করে বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিরূধীদলের ডাকা মহাসমাবেশ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং বলা যায় এ যাবৎ কালে ঘটে যাওয়া তথা অধ্যাবধি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে সফল স্বার্থক সমাবেশ হয়ে যায়।দেশী-বিদেশী সকল সংবাদ মাধ্যম এবং সংবাদ বিশ্লেশক ১২ ই মার্চের ঐ সমাবেশের ভূয়শী প্রশংসা করে,বিশেষ করে শান্তিপূর্ণ এবং খালেদা জিয়ার নীতি-নির্ধারণী পরিপক্ক এবং দক্ষ,সুণিপণ রাজনৈতিক বক্তব্য সর্বমহলেই প্রশংসিত হয়েছে।আমাদের রাজনীতির চিরাচরিত সংঘাত আর প্রতিহিংসার রাজনীতির পথ ছেড়ে মহাবেশ আন্দোলনের ও রাজনীতি চর্চায় এক নতুন টার্ণিং পয়েন্টের দিকে দেশ এবং তার জনগণকে ধাবিত করেছেন,যা বিশেষমাত্রা সংযোযিত করে,যদিও আওয়ামীলীগ এবং তার ছাত্রলীগ যথেচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতা, বিনা উস্কানিতে বিরুধীদলের মিছিলে লাটিপেঠা,হামলা সহ নানাবিধ বাধা প্রাদান করে পরিস্থিতিকে বিশেষ ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করে।এ ক্ষেত্রে বিরুধীদলের নেতা-কর্মীরা যথেষ্ট ধৈর্য এবং সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে সর্বমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন,তাতে কোন সন্দেহ নাই।
০৪)
আশ্চর্য হই,হতবাক হয়ে যাই,সেই অমিথ সাহসী,অযুথ সংগ্রামের মহানায়ক তোফায়েল আহমদ আওয়ামীলীগের ক্যাডার প্রকৃতির অপ্রকৃতস্থ নের্তৃত্তের মতো যখন বলেন,মহাসমাবেশ এবং খালেদা জিয়া তাহরীর স্কোয়ার করতে ব্যর্থ হয়েছেন,এর পর-পরই রাতের টেলিভিশন সংবাদের ক্লিপে তোফায়েল আহমদ যখন বলেন,বি,এন,পি আওয়ামীলিগকে ঘুম থেকে জাগিয়েছে,এই পর্যন্ত বলে যদি থামতেন তা হলে পরিপক্ষ এবং দক্ষ সাংসদ তোফায়েল আহমদ এর কাছ থেকে রাজনৈতিক ঐ বক্তব্যের জন্য প্রতিক্রিয়া ঐ রকমটা স্বাভাবিক ছিলো,কিন্ত না,তিনি সেখানে থেমে থাকেননি,তোফায়েল ভাই বলেন,আওয়ামীলীগ হলো বারুদ,বি,এন,পি এই বারুদের গায়ে আগুন ঢেলে দিয়ে কোন দাবি আদায় করা যাবেনা,বরং বারুদের তাপে…।।
তোফায়েল ভাই একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক,শিক্ষিত,মার্জিত,পরিশীলিত ব্যাক্তি হিসেবে অনেক সমাদৃত।তিনি যখন রাজনীতির পেছনের বেঞ্চএ থাকা রাজনৈতিক কর্মীদের মতো প্রতিক্রিয়া দেন,তখন স্বভাবতই হতাশ হই।কারণ তোফায়েলের মতো রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আগামী প্রজন্ম এবং এখনকার তরুন রাজনীতিবিদেরা ধীরে-ধীরে রাজনৈতিক বক্তব্য,শিষ্টাচার শিখেইতো আগামী নের্তৃত্ব গড়ে উঠবে।তোফায়েল আহমদ যদি হানিফ সাহেব আর সেলিম জয়নাল নাসিম সুরঞ্জিতদাদাদের ভাষায় কথা বলেন,তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি যে দেউলিয়া পনার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে,সেখান থেকে কে এসে উদ্বার করবে বা কিভাবেইবা পথ খুজে পাবে?
০৫)
রাজনীতির ময়দানে যারা কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন সেই রাশেদ খান মেনন,হাসানুল হক ইনু,বদরুদ্দোজা চৌধুরী,ডঃ কামাল হোসেন,হোসেন মোহাম্মদ এরশাদরাতো অনেক আগেই নিজেদের দেউলিয়াত্ত প্রমাণ করে এখন শুধু কাগুজে বাঘ হয়ে অসহায় ভাবে এদিক সেদিক হাপিত্তেস করে চর্বিত চরণ করে চলেছেন।শত হতাশার মাঝেও যারা এখনো একটু আশার সঞ্চার করে জনজীবনে ক্ষীন হলেও আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলে আছেন,তাদের মধ্যে তোফায়েল ভাই অবশ্যই অগ্রভাগে আছেন।কিন্তু সেই ক্ষীণ আশা যেন বড় নিভু-নিভু করে জ্বলে চলেছে,কোথায় যেন আপোস আর দোদল্যমানতার দূর এক অদৃশ্য শংকায় আতংকে পড়ে আছেন।না হলে ২ রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকাদিবসের আলোচনায় সত্য ও সুন্দরের নজির স্থাপণ করার লক্ষ্যে একবারের জন্য হলেও বলতে পারতেন,পতাকা উত্তোলনের এই দিনে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্তরে সেদিন ডাকসু ভি,পি, হিসেবে এবং ছাত্রসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে এবং জাতির পিতার পক্ষে যে ঐ পতাকা তূলেছিলো সেই আ স ম আব্দুর রব কে আজ এখানে না দেখে আমি তোফায়েল বড় ব্যাথিত হচ্ছি।কারণ সত্য আস্বীকার করেতো ইতিহাস হয়না।তা না বলে তোফায়েল বললেন,আমি তোফায়েল আওয়ামীলীগের নেতা,আওয়ামীলীগের একজন কর্মী-নেতা হয়েই মরতে চাই।তোফায়েল ভাই,ঠিকই বলেছেন,আপনি,আমরাও চাই আপনি আওয়ামীলিগের নেতা হয়ে থাকুন,আওয়ামীলীগের একনিষ্ট নেতা হয়েই মৃর্ত্যু বরন করুন, তবে বীরের বেশে,বীর বাঙ্গালী হয়ে।অন্যায় আর অসত্যের কাছে আপোস আর মাথা নত করে নয়।
০৬)
তোফায়েল ভাই,জীবনেতো অনেক পেয়েছেন,জাতিকে অনেক দিয়েছেন।শেষ বয়সে অন্তত আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর,পরিচ্ছন্ন,সুস্থ্য রাজনৈতিক চর্চা এবং এর পরিবেশ গড়ার লক্ষ্যে অল্প করে হলেও স্বচ্ছ এবং সত্য ও সুন্দরের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন,যা আওয়ামীলীগের আগামী প্রজন্মকে সঠিক সুস্থ্যধারার রাজনীতির পথ দেখাবে—সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই আশা করা কি ভুল হবে?
13th March 2012.