প্রিয় সাম্পাদক নাইমুল ইসলাম
আপনার হ্রদয় নিংড়ানো লেখাটি পড়ার সৌভাগ্য হলো-যা আমাদের সময়ে গতকাল প্রকাশিত হয়েছে,ইকবাল সোবহানের প্রতি খোলা চিঠি শিরোনামে।
আজকের যুগে সংবাদ প্রবাহ অনেকটা তড়িৎ গতিতে প্রবাহিত হয়ে থাকে।যোগাযোগ ব্যাবস্থার সমূহ উন্নতির ফলে এক স্থানের সংবাদ বিশ্বের সকল প্রান্তে অতি সহজে সকলের কাছে পৌছে যায়।ফাইবার অপটিক যোগাযোগ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে আমাদের সময় সংক্রান্ত সংবাদ এবং নানান কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মালিকানা পরিবর্তন,তড়িৎ গতিতে সম্পাদক পরিবর্তন,আদালতের মাধ্যমে নাটকীয় ভাবে জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে দখল এর নানান কৌশলের খবর সংবাদ পত্র আর ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার বদৌলতে সুদূঢ় বিলেতে বসেও একজন অতি সাধারণ,নিরিহ দর্শক হয়েও অবজার্ভ করে আসছিলাম।নাইমুল ইসলাম কে যে কায়দায়,যে ব্যাবস্থায় নিতান্ত অসহায় ভাবে বের করে দিয়ে অত্যন্ত জঘন্য উপায়ে আমাদের সময়কে আইনের লেবাস দিয়ে ছিনতাই নয় শুধু,বরং বলা যায় ডাকাতির আশ্রয় নেয়া হয়েছিলো,তা সভ্য সমাজে বড়ই বিরলই নয়,বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রাখলো।সাবেক স্বৈর শাসক এরশাদ এক্ষেত্রে ধন্যবাদ পেতে পারেন এই জন্য যে,তার ক্ষমতারোহনের সময় তিনি যথার্থই বলেছিলেন,সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।
নাইমুল ইসলাম একাধারে সাংবাদিক,প্রতিথযশা সম্পাদক,লেখক,আলোচক,এবং একজন সফল ছাত্রনেতা।আমার আজো মনে আছে,বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এবং পত্রিকা প্রকাশনী জগতে নাইমুল ইসলাম দৈনিক আজকের কাগজ বের করে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন,সাথে সাথে অনেকের বিরাগভাজনও হয়েছিলেন।আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।অনেকের মতো আমারও প্রিয় পত্রিকা ছিলো দৈনিক আজকের কাগজ।তখনকার সময়ে আজকের কাগজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছেগিয়েছিলো শুধু মাত্র এর উন্নত শৈলী,আধুনিক রিপোর্টিং,ক্ষুরধার-তীক্ষন লেখনী শক্তি,সত্য ও বস্তুনিষ্ট বলিষ্ট সংবাদ আর এর উন্নত-আধুনিক প্রকাশনীর জন্য।নানান চড়াই উৎতড়াই পেরিয়ে সেই নাইমুল ইসলাম যখন আজকের কাগজ ছেড়ে ভোরের কাগজ বের করলেন,তখনো এর জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বি।ব্যাক্তিগত ভাবে আমি নাইমুল ইসলামের মেধা এবং উন্নত চিন্তা ও মননশীল সাংবাদিকতার একনিষ্ট এবং একজন গুনমুগ্ধ পাঠক।অনেকের মতো নাইমুল ইসলামের সান্নিধ্যে এসে কাজ করার যেমন সুযোগ হয়েছিল,তেমনি ব্যাক্তি নাইমুল ইসলামকে চেনারও সুযোগ হয়েছিলো।
যে তথাকথিত কারণ দেখিয়ে আমাদের সময় এবং নাইমুল ইসলামকে অপদস্ত করার হীন চেষ্টা করা হয়েছিলো বা এখনো চেষ্টা-তদবির রত, তা শুধু অমূলকই নয়,বলা যায় যুক্তি এবং আমরা যারা নাইমুল ইসলামকে গভীরভাবে চিনি এবং জানি,তারা অন্তত সকলেই স্বীকার করবেন যে,এটা কেবল অপ-প্রাচার এর অপকৌশলই নয়,বরং মেধাবী,স্বচ্ছ,বস্তুনিষ্ট-স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপ এর নামান্তর।
যুগে যুগে আমাদের মতো পেছনে পড়ে থাকা দেশগুলোতে টাকা আর পেশী শক্তির বলে মেধাবী,সৎ আর সাহসী সাংবাদিকদের দাবিয়ে রাখার জন্য নানা কৌশল আর ছলছাতুরির আশ্রয় নিতে দেখা যায়।আমরা এটাও জানি টাকা আর পেশী শক্তির কাছে আইন কতো অসহায় ভাবে উপস্থিত হয়ে থাকে।মেধাবী,সৎ,সাহসী সাংবাদিক সেই সব টাকা ওয়ালা আর অপশক্তির কাছে কতো অসহায়ভাবেই না অপদস্ত হয়ে থাকেন,আর তাদের দোসর,সঙ্গী হিসেবে কলকাঠি নেড়ে থাকেন সমগোত্রের কতিপয় অর্থলোভী,অসৎ ব্যাক্তি এবং নের্তৃবৃন্দ।
নাইমুল ইসলাম ব্যাতিক্রমদের মাঝে ব্যাতিক্রম-সেই সব কূশীলব আর নাটের গুরুদের কাছে কখনো হার মানেননি,লড়াকু সৈনিকের মতোই লড়ে যাচ্ছেন,যা তার রক্তের মধ্যে প্রবাহিত,প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাওয়ার জন্যইতো নাইমুল ইসলামদের জন্ম।কোন রক্ত চক্ষুকে এই ধমনি ভয় পায়না।
ইকবাল সোবহান একজন নামকরা সাংবাদিক এবং সাংবাদিক সমাজের নেতৃত্বদানকারী সংগঠণের একজন প্রতিথযশা নেতা,যার রয়েছে একবিশাল নেট ওয়ার্ক।স্বাভাবতই কারণে প্রশ্ন জাগে,নাইমুল ইসলামের উপর এতোবড় আঘাত যখন এসেছিলো,তখন সাংবাদিক সমাজের প্রতিভূ হিসেবে দেশ-জাতি-জনগণের সাথে আমিও আশায় বুক বেধে ছিলাম জনাব ইকবাল সোবহান সাহেব এবং তার সংগঠণ এক্ষেত্রে এক গঠণমূলক ভূমিকা পালন করবেন।কিন্ত নাইমুল ইসলামের সাথে একমত হয়ে বড় বেদনার সাথে লক্ষ্য করলাম ইকবাল সোবহান কিংবা তার সংগঠণ যথার্থ ভূমিকা রাখতে ব্যার্থতার পরিচয়ই শুধু দেননাই,টাকা আর পেশী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের সময় ডাকাতির হাতকে আরো মজবুত এবং শক্তিশালী করার হীন চেষ্টা যে করেছেন,অনেকে সাথে আমিও এর একজন নীরব স্বাক্ষী হয়ে অবলোকন করেছিলাম।ইকবাল সোবহান এর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধ্বা রেখেই বলছি,মিল্টন, বায়রন,সক্রেটিস, লাস্কি,রুশোরা কখনো অন্যায়,অত্যাচার আর তাবেদারদের কাছে মাথানত করেনি।
আমাদেরদুর্ভাগ্য গোটাসমাজের পংকিলতার সাথে সাংবাদিক সমাজও কোন কোন
ক্ষেত্রে কিংবা কারো-কারো অসততার কারণে একই মুদ্রাদোষে আক্রান্ত হতে চলেছে। তাছাড়া,আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এখনো সাংবাদিকতার এবং এর দেখভালের জন্য প্রাতিষ্টানিক কোন রুপ কিংবা পরিগ্রহ লাভ করেনি।যার ফলে সংবাদ,সংবাদপত্র, সাংবাদিকতা এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল যন্ত্র এখনো সেই আতুর ঘরে রয়ে গেছে,যে কারণে দুষ্ট লোকেরা,দুষ্ট টাকা আর তাদের অসৎ সঙ্গ নিজেদের প্রতিপত্তি জাহির করতে গিয়েই নাইমুল ইসলামদের মতো নির্ভিক,সাহসী সাংবাদিকদের হেনস্থা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।আমরা চাই এর অবসান এবং নিরাপদ,সুস্থ্য,স্বাভাবিক সংবাদ এর সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্টানের নিরবচ্ছিন্ন স্বচ্ছ,জবাবদিহিমূলক,সুন্দর,উন্নত আচরণ এবং তার বিকাশ।
জয় হউক আমাদের সময়ের এবং নাইমুল ইসলামের।
Salim932@googlemail.com
5th March 2012.