*আনুমানিক ১০,০০০ ইয়ং চিলড্রেন্স খারাপ-বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বসবাস
*গত বছর ৪৪% ইয়ং চিলড্রেন্স যাদের কেউ না কেউ গুলিবিদ্ধ কিংবা নাইফবিদ্ধ হতে দেখেছেন
*প্রতি চারজনের ১ জন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী
*প্রতি ৫ জনের ১ জন গুলিবিদ্ধ না হয় নাইফবিদ্ধ হয়েছেন
*২০০৭ সালের পর থেকে ১২৩ জন ইয়ং চিলড্রেন্স গ্যাং মার্ডারের শিকার হয়েছেন
*প্রতিমাসে গড় হিসেবে ৪০০ ভিকটিম নাইফ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন
*লন্ডনের ২৫০টি গ্যাং এই সব হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী
*৯৮% ঐ সব গ্যাং মেম্বার পুরুষ লিঙ্গ
* £১৩০ হাজার এর মতো পাউন্ড ড্রাগ ডিলিংস, আর্মস ডিলিং থেকে ঐ সব গ্যাং লিডারদের বাৎসরিক আয় হয়ে থাকে ।
সারা বিশ্বের সর্বাধিক আকর্ষণ আর ইউরোপের বাণিজ্য আর দর্শনীয় স্থানের কেন্দ্রস্থল তথা ইতিহাস, ঐতিহ্য আর ব্রিটিশ ট্র্যাডিশনের মিলন কেন্দ্র লন্ডন নগরী এখন শিশু, কিশোর আর যুবক-যুবতীর জন্য আগের মতো সুখকর কোন নগর নয়, বরং উঠতি কিশোর-কিশোরী আর যুবক-যুবতীদের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর এক মৃত্যু নগরী হিসেবে , বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে ২০০৭ থেকে ভয়ানক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া গ্যাং সন্ত্রাসের নগরী হিসেবে খেতাব পেতে শুরু করেছে, যা লন্ডনের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রাকে করে তুলতে পারে টাল-মাটাল ও ভয়ংকর করে। গত মাসে টিনএজ কেইল ম্যাকডোনাল্ড সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ১২৩তম ভিক্টিম আর এবছরের হত্যাকাণ্ডের দশমতম শিকার।
আজকের ব্যস্ততম আধুনিক লন্ডন শহরে সর্বসাকুল্যে ২৫০টি গ্যাং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, যারা এই সব হত্যাকাণ্ড, মাফিয়া চক্র, আর মাদকের মতো ভয়ংকর মরণ নেশার ভয়ানক খেলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।হত্যাকান্ড, খুন, ধর্ষন, কিডন্যাপ হেন কোন কাজ নেই এরা করেনা। আর মাদকের মতো ভয়াল সন্ত্রাস এখন এদের প্রধান আয়ের উৎস ।
সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র আজকের আধুনিক লন্ডনের জীবন-যাত্রা অনেকটাই ছন্দহীন এবং উঠতি কিশোর-কিশোরীদের জীবন যাত্রা হঠাৎ করে এই সব গ্যাংদের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে যেকোন সময় মাঝপথে জীবনের স্পন্দন স্তব্ধ করে দিচ্ছে। এতো ভয়ানক এই সব গ্যাংদের মোকাবেলা করতে লন্ডনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো অত্যাধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ বিভিন্ন বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চাইল্ড প্রটেকশন এক্সপার্টদের মতে প্রায় ১০ হাজারের মতো ইয়ং লন্ডনার কোন না কোন ভাবে এই সব ভয়ংকর সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ শিকার কিংবা সাক্ষী হয়ে অসম্ভব এক মানসিক বৈকল্যের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ ও কমিউনিটিতে বেড়ে উঠতেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সেন্ট্রাল লন্ডনে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন এবং লন্ডনের জনপ্রিয় দৈনিক ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড যৌথভাবে প্রেস কনফারেন্স করে লন্ডনের গ্যাং উত্থান, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নেপথ্যের ভয়াবহ ড্রাগ ডিলিংস, পরিবার ও কমিউনিটির অবস্থান, সন্ত্রাসী হামলার পর বেড়ে উঠাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, এই সব সন্ত্রাসী গ্রুপদের বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত তাদের রিসার্চের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করেন।
ইউসিএল-এর রিসার্চে ফুটে উঠেছে প্রতি চার জনের ১ জন ইয়ং লন্ডনার কোন না কোন ভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষীর( উইটনেস) অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর প্রতি ৫ জনের ১ জন কোন না কোনভাবে এই সব সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত, নাইফবিদ্ধ অথবা হত্যার শিকার হয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের এই রিসার্চের এবং সরে জমিনে তদন্তের ফলাফল প্রকাশের পর এবং ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড হেড লাইনে দুদিন ব্যাপী পুরো রিপোর্ট প্রকাশের প গোটা লন্ডন সহ ডাউনিং ষ্ট্রীটে হৈ চৈ পড়ে যায়। এতো নিবিড় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গোটা লন্ডন সহ পুরো ব্রিটেন আইনের যথাযথ প্রয়োগের পরেও ২৫০টির মতো গ্যাংস গ্রুপ ড্রাগস ও মার্ডারের মতো ভয়ানক মিশনে সক্রিয় হতে দেখে জনমনে ব্যাপক সংশয় ও উদ্বিগ্নতা ছড়িয়ে পড়েছে।
গ্যাংস গ্রুপের মধ্যে যেমন মিক্স কালচারের সন্ত্রাসী রয়েছে, তেমনি এথনিক মায়নরোটির অধিকাংশ ছোট বেলা ভয়ানক অবহেলা, দারিদ্র আর বাবা-মায়ের ঝগড়া,মারামারির কারণে সন্ত্রাসের মতো অন্ধ গলির পথে পা বাড়িয়েছে বলে রিপোর্টে জানা গেছে। বিগত সময়ে জব মার্কেটে মারাত্মক নেগেটিভ ইস্যু এই সব গ্যাংস গ্রুপ তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। তবে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে এমনও সদস্য বা গ্রুপ লিডার রয়েছে, যাদের ছোটবেলার মর্মান্তিক করুণ কাহিনী হিন্দি সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। তাদেরই একজন রিকি। ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডের-এর তদন্তে জানা যায়, রিকি নামের এই সন্ত্রাসীর ছোট বেলা তার বয়স যখন তিন বছর, তখন তার বাবাকে তাকে ৩ তলার বেলকনি থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্যের জোরে বেলকনির কার্নিশে আটকে গিয়ে সে বেচে যায়।রিকি আরো জানায়, তার মা যখন প্রেগন্যান্ট তখন তার বাবা তার মায়ের এই প্র্যাগনেন্সীতে বিশ্বাস করেনি। তার বাবার ধারণা তার মা অন্য পুরুষের সাথে রাত কাটিয়েছে। ফলে বাবা-মায়ের ঝগড়ার মধ্যদিয়ে একদিন রিকিকে তার বাপ এভাবে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো।আর এ ঘটনার পর থেকে তার বাবা তার মাকেও ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকে রিকি ভাগ্যের জোরে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর লন্ডনের এক গ্যাং লিডারের সহায়তায় কোনভাবে বেচে থাকার সামান্য আশা পেয়েছিলো।
এই সব গ্যাংদের আবার নিজদের নাম রয়েছে। এদের অনেকেই জেলের জীবনে অভ্যস্ত। কয়েক বছর জেল খেটে আবার বেরিয়ে সেই পুরনো গ্যাংস গ্রুপের সাথে জড়িয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ এ ফোরাম ফর গ্যাং মেম্বার নামক চ্যারিটির অক্লান্ত সহযোগিতায় নিজেদের চলার গতিপথ পাল্টে নিয়েছে। তবে বর্তমানে ফোরাম ফর গ্যাং মেম্বার নামক চ্যারিটি, পুলিশ, ও এজেন্সিসমূহ এই সব উঠতি সন্ত্রাসীগুপ ট্যাকলে হিম শিম খাচ্ছে।
ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডে রিকির লাইফ:
*৩ বছর বয়সে বাপ কর্তৃক তিন তলার বেলকনি থেকে ছুড়ে মারা থেকে ভাগ্যের জোরে বেচে যায়
*দশ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে হোমলেস হয়ে কেয়ার হোমসের তত্বাবধানে
*তের বছর বয়সে জয়েন করে নটরিয়াস গ্যাং পিডিসি(প্রভার্টি ড্রাইভেন চিলড্রেন)গ্রুপে
*তের বছর বয়সে হেড টিচারকে আঘাত, হেনস্থা, মারধরের কারণে স্কুল থেকে বহিষ্কার
*তের বছর বয়সে প্রথমবারের মতো চার বন্ধুর হত্যাকান্ডের ফোনারেলে উপস্থিতি
*চৌদ্দ বছর বয়সে ঘর থেকে বাইরে যখনি বের হয়, তখনি নাইফ সাথে নিয়ে বের হয়
*পনের বছর বয়সে পাঁচ সেন্টেন্স নিয়ে জেলের জীবন
*সতের বছর বয়সে অস্র ডাকাতির জন্য আর্মস কেরি ও ব্যবহার
*বিশ বছর বয়সে জেল থেকে আবারো ছাড়া পেয়ে হোস্টেলে জীবন শুরু
এ রকম অসংখ্য রিকি এখন লন্ডনের গ্যাং মেম্বার, যাদের অনেকেই পরিবারের বাবা-মায়ের সাথে থাকে, কেউ কেউ হোস্টেলে থাকে, আবার কেউ কেউ অন্ধকারের কোন গলিতে জীবন কাঠিয়ে দেয়।
এনিয়ে ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড কথা হয় পুলিশ চীফ কমিশনার ষ্টীভ রডহাউস এবং চ্যারিটি কিড কোম্পানির চীফ ক্যামিলা বাটমাঙ্গেদিলাদজীর সঙ্গে। পুলিশ কমিশনার বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশের টপ প্রায়োরোটি এই ২৫০ গ্যাং গ্রুপ আর ৩,৫০০ গ্যাং মেম্বারদেরকে ট্যাকল করা। এই যুদ্ধে শুধু অমূলক নয়, মেট্রোপলিটন পুলিশ এ যুদ্ধে জিততে হবে।
পুলিশের চীফ কমিশনার বলেন, ১৮ মাস আগে তিনি যখন জয়েন করেন, তখন থেকে এ পর্যন্ত ষ্ট্রীট গ্যাং ক্রাইম, নাইফ ষ্টাবিং এর ক্ষেত্রে অনেক এচিভম্যান্ট হয়েছে। বর্তমানে এর ফলে নাইফ ক্রাইম ২৮% নেমে এসেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের নানাবিধ একশনের ফলে নাইফ ষ্টাবিং অনেক কমে আসতেছে, যা অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিলো। ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন এই নাইফ ক্রাইমের বিরুদ্ধে টার্ফ একশন নেয়ার জন্য হোম অফিস ও মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন।
তবে পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশের একার পক্ষে এই ভয়াবহ ক্রাইমকে বন্ধ করা সম্ভব নয়। সেজন্য লন্ডনারদেরও পুরোপুরি সহায়তাও তিনি চান।
চ্যারিটি কিড কোম্পানির মতে লন্ডনে ১৮ হাজারের মতো চিলড্রেন্স এই গ্যাংস ভায়োলেন্সের ভিক্টিম। কিড কোম্পানি চ্যারিটির চীফ ক্যামিলা বলেন, সরকারকে অবশ্যই এখন সজাগ হতে হবে। আগের সরকারের মতো এই ইস্যুকে কেবলমাত্র আন্ডার দ্য কার্পেট রেখে চললে সমস্যার সমাধান হবেনা। বরং এ সমস্যা দিনে দিনে আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।
Salim932@googlemail.com
26th Sept.2013 . London.